‘নাম থাকলে বদনামও হবে’

নাসির হোসেন জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন প্রায় দুই বছর। অবশ্য একেবারে বাইরে ছিলেন বললে অবশ্য কিছুটা ভুল হবে। ২০১৫ সালের পর থেকে টেস্ট ও ওয়ানডে দলের বাইরে থাকলেও ২০১৬ পর্যন্ত ছিলেন টি-টোয়েন্টি দলে। কিন্তু দলে থাকলেও দ্বাদশ ক্রিকেটার হিসেবেই দেখা যেত বেশির ভাগ সময়। কিন্তু নাসির হোসেন থেমে থাকেননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন বারবার। তার ভক্তরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলেছেন ‘নাসিরকে দলে চাই’ এই স্লোগানে। অবশেষে এ বছর আয়ারল্যান্ড সফরে ওয়ানডে দলে ফিরেন এই অলরাউন্ডার। তাই ভক্তদের আশা ফের তাদের প্রিয় তারকাকে নিয়মিত মাঠে দেখবেন তারা। কিন্তু মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের পর ছয় নাম্বারে তার কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী এখন সাব্বির রহমান ও মোসাদ্দেক হোসেন। তাই নাসিরের জন্য দলে ফিরতে পড়তে হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাতে। কিন্তু নাসির বিশ্বাস করেন তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না, আমার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী আছে। কিংবা জাতীয় দলে কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী। এখন ওরা ভালো খেলছে, দোয়া করি যেন জাতীয় দলে যারা আছে তারা আরও ভালো খেলে। জাতীয় দলের জায়গা সবার জন্য এবং সব সময়ই উন্মুক্ত থাকবে। ভালো খেললে সুযোগ অবশ্যই আসবেই।’
লম্বা সময় জাতীয় দলে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকলেও নাসির হোসেন এর জনপ্রিয়তা যেমন কমেনি, তেমনি তাকে নিয়ে সমালোচনা করার লোকেরও অভাব নেই। খেলার মাঠে ও অনুশীলনে শৃঙ্খলা, দায়িত্বহীনতা, ব্যক্তিগত জীবনে বিতর্ক, নারী সম্পর্ক সহ হাজারো রকমের সমালোচনা হয় তাকে নিয়ে। এমন আলোচিত-সমালোচিত জীবন যার তার প্রভাব তো ক্রিকেট খেলাতেও পড়বে। কিন্তু নাসির উড়িয়ে দিলেন সবকিছু। তিনি বলেন, ‘যাদের নাম হয়, তাদের বদনামও হয়। এটা সত্য কথা। আপনি আমাকে এক চোখে দেখবেন, আরেকজন আরেক চোখে দেখবে। আমার চোখ দিয়েও তো আমি সবাইকে এক চোখে দেখতে পারব না। ফেসবুক বলেন বা পেপার, সত্যি বলতে আমি পেপার পড়ি না। ফেসবুক না থাকার মতোই। শুধু তো সবার ব্যক্তিগত নিউজ আর নিউজ। যখন খেলাধুলা করি তখন এসব নিউজ আমার মাথায় থাকে না। খেলার বাইরে মাঝে মাঝে আসে কথাগুলো। খেলার মধ্যে এসব জিনিস আসে না।’
দলে থাকতে নাসির হোসেন যতটা না জনপ্রিয় ছিলেন বাদ পড়ার পর তার জনপ্রিয়তা ও দলে তার প্রয়োজনীয়তা ভক্তরা বেশি অনুভব করেছেন। তাই দলের বাইরে থেকেও ছিলেন আলোচনায়। এ বিষয়ে নাসির বেলন, ‘জনপ্রিয়তা কিনা আমি জানি না, মানুষ কেন আমাকে ভালোবাসে সেটাও জানিনা। তবে এটা আমার বড় পাওয়া। সবাই এমনটি পায় না। আমি সেটি পেয়েছি। তাদের কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ। তারা আমার ওপর যে বিশ্বাস রাখেন, অনেক আশা করেন, আমি চেষ্টা করব সেই বিশ্বাস ও আশাটা রাখার জন্য। সেটা করার জন্যই এই অনুশীলন ক্যাম্প, ফিটনেস ক্যাম্প। চেষ্টা করছি জাতীয় দলে ফেরার জন্য।’ নাসির শুধু কি জাতীয় দলে ফেরার চেষ্টা করছেন? জানালেন তার এবাররের চেষ্টাটা অনেক সিরিয়াস। তিনি বলেন, ‘এবার আমি অনেক সিরিয়াস জাতীয় দলে ফেরার বিষয়ে। সেভাবেই নিজেকে নিয়ে কাজ করছি।’
২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে পাঁচ ইনিংসে করেছিলেন চারটি ফিফটি। এরপর সব ধরনের ক্রিকেটে দেশের হয়ে টানা ৪৯ ইনিংসে পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি একবারও। প্রধান কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে অনেকবারই বলেছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রান না পাওয়াতেই দলে থাকেন না নাসির। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রচুর রান করেই ফিরতে হবে তাকে। শুধু তাই নয়, তার বিপক্ষে অভিযোগ তিনি ফাস্ট বলও খেলতে ভয় পান, আর বিদেশের মাটিতে রান পান না। কিন্তু এসবই উড়িয়ে দিলেন নাসির। তিনি বলেন, ‘ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে দুর্বলতার যে কথাটা আসছে, আমি কিন্তু দেশের বাইরেও রান করছি। সেটা বয়সভিত্তিক দল বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বলেন- সব ক্ষেত্রেই কিন্তু রান করেছি। আমি জানি না এ কথা কে বলেছে। আমার মনে হয়, এটা তার ব্যক্তিগত মত।’ তবে নিজের ঘাটতিগুলোও তিনি জানে আর তা নিয়ে কাজও করছেন। নাসির বলেন, ‘আমার অনেক জায়গায় ঘাটতি আছে, সেটা আমি জানি। আমার টিমমেটরা জানেন, কোচিং স্টাফরা জানেন। এ জিনিসটা আমি শেয়ার করতে চাচ্ছি না। কারণ, আমি চাই না আমার দুর্বলতা (প্রতিপক্ষের) কেউ জানুক।’
২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ১৫ ওয়ানডেতে ১৬ উইকেট নিয়েছেন নাসির। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্য পঞ্চম সর্বোচ্চ। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিনটিতেই নিজেকে প্রমাণ করতে প্রস্তুত তিনি। নাসির বলেন, ‘আমি মনে করি, আমার জন্য জাতীয় দলের সেরা ব্যাটিং পজিশন ছয় নম্বর। আমার জন্য এটা উপযুক্ত। প্রিমিয়ার লীগে ওপরে ব্যাটিং করি, ওখানে ছয়ে ব্যাটিং করলে বড় কিছু করার সুযোগ থাকে না। জাতীয় দলে আমার জন্য ছয় নম্বর জায়গা ঠিক আছে। আর বোলিং আমি পছন্দ করি। তাই বোলিং নিয়ে কাজ করছি। আশা করি সুযোগ পেলে কাজে লাগাবো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.