বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের মতলব মোটেও ভালো নয়। তারা মানুষকে দেখানোর জন্য বলছে, ভবিষ্যতে বিএনপি এলে নির্বাচন কঠিন হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জোর করে নির্বাচনে জিততে চায়। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সব পরিকল্পনাও তারা করে রেখেছে। এ জন্য তাদের আজ্ঞাবহ, অযোগ্য ও বিতর্কিত একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) করা হয়েছে।
রোববার রাতে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার হাতে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান।
খালেদা জিয়া দাবি করেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। চোরাপথে নয়, সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের ভোটেই বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে চায়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ভবিষ্যতে জনগণ বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাবে। ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন সেটাই প্রমাণ করে।
দেশের স্বার্থ বিকিয়ে বন্ধুত্ব নয় বলে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের বন্ধুত্ব হবে সমানে সমান। কারও ইচ্ছামতো কিংবা কাউকে খুশি করার জন্য নয়। এখন তিস্তার পানি নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা চাই, তিস্তার পানি ন্যায্য হিৎসা আমাদের দিতে হবে। তা ছাড়া অন্য কোনো কিছু আমরা মানব না।
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এ সরকার পাঁচ দফা গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। তাহলে মানুষ তো গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল দিতেই শেষ হয়ে যাবে। সরকার গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে, অথচ গ্যাসের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। গ্যাসের চাপ এত কম যে, কোনো কোনো দিন রান্না করাই মুশকিল হয়ে যায়।
জনসম্পৃক্ত এসব বিষয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে। কর্মসূচি দিতে হবে।
দেশকে ধ্বংস করে দেয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার দেশকে ধ্বংসের শেষপ্রান্তে নিয়ে গেছে। দেশের অবস্থা খুব খারাপ। মানুষ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে। উন্নয়নের নামে বড় বড় প্রকল্প করে উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি, দুর্নীতি-লুটপাট, জমিদখল, টেন্ডারবাজি প্রভৃতি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা দেশকে অস্বস্তিকর পরিবেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
পুলিশকে দলীয়ভাবে ব্যবহারের অভিযোগ করে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশকে দিয়ে নানা অপকর্ম করিয়ে এর দায় বিএনপির ওপর চাপানো হচ্ছে।
গাইবান্ধার এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি কাদের খানের সম্পৃক্ততার প্রমাণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের শরিকরাই এসব করছে। অতীতে অনেক খুন করার ইতিহাস আছে তাদের শরিকদের মধ্যে। জনগণ তাদের বিশ্বাস করে না। তারা কখনও নিজের এলাকা থেকে নির্বাচিত হতে পারেনি। এবার আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে জোর-জুলুম করে পুলিশের সাহায্য নিয়ে নির্বাচনে জিতেছে।
ঢাকা বারের মতো আসছে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও দল সমর্থিত প্যানেলকে বিজয়ী করতে আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, আইনবিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি খোরশেদ আলম, সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চু প্রমুখ।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নবনির্বাচিত নেতা রুহুল আমিন, কাজী আবদুল বারিক, সারওয়ার কায়সার, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আবদুল কালাম আযাদ, আফানুর রহমান, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খোরশেদ মিয়া আলম, মোসলেহউদ্দিন, ইকবাল হোসেনসহ শতাধিক আইনজীবী।
প্রসঙ্গত, বুধ ও বৃহস্পতিবার ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ঘোষিত ফলাফলে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক নীল প্যানেল ২৭ পদের মধ্যে ২১টিতে জয়লাভ করে