১৯৯১ সাল। বেগম খালেদা জিয়া সদ্যই প্রথমবারের মত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
তার নয় বছরের সংগ্রাম সফল হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে নিজেকে পরিবর্তন করেছেন একজন গৃহবধূ থেকে রাষ্ট্রনায়কে; নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আপোষহীন নেত্রীরুপে এবং সর্বোপরি বাংলাদেশীদের আশ্রয়স্থলরুপে।
তিনি চাচ্ছিলেন একটি সমৃদ্ধ দেশরুপে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে আর সেজন্য দলীয় পরিচয়ের উর্দ্ধে উঠে তিনি যোগ্য লোক দিয়ে তার প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে চাচ্ছেন।
একদিন এক অনুষ্ঠানে বেগম জিয়ার সাথে শফিক রেহমানের সাথে সাক্ষাৎ হয়।
এই ফাকে শফিক রেহমানের পরিচয়টি দিয়ে নিই। লাল গোলাপ দিয়েই সবাই তাকে চিনেন। বাংলাদেশে ভ্যালেনটাইন ডেই-এর প্রচলনকারী। এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন “যায় যায় দিন” (পরে দৈনিক)-এর সম্পাদক। গণতন্ত্রের প্রতি তার ডেডিকেশনের জন্য সকল স্বৈরাচারি সরকারের প্রথম টার্গেট হতেন তিনি। স্বৈরাচারি এরশাদ তাকে ছয় বছরের নির্বাসন দিয়েছিল, মঈন-ফখরুদ্দিন সরকার তাকে জোর করে তার নিজের প্রতিষ্ঠিত যায় যায় দিন থেকে উৎখাত করে। স্বস্ত্রীক কাজ করেছেন বিবিসি-তে। লন্ডন থেকে চার্ডাট একাউন্টেট পড়েছেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সিএ ফার্ম সাইফুর্স এন্ড এসোসিয়েট-এ চাকুরী করেছেন। সত্তরের নির্বাচন এবং তিহাত্তরের নির্বাচনের ফলাফল টিভিতে তিনিই পরিবেশন করেছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার সাথে উনার সাক্ষাৎ হলে, তিনি শফিক রেহমানকে বলেন, আপনি তো বিটিভিতে অনেক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান করতেন-এখন কেন করছেন না? আপনি অনুষ্ঠান করেন। বিটিভির “সাহেব বিবির বাক্স”-দূর্নাম ঘুচুক।
শফিক রেহমান বললেন, আমি অনুষ্ঠান করতে পারি কিন্তু অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্ব করতে চাই, বিরোধীদলীয় নেত্রী (তৎকালীন) শেখ হাসিনাকে দিয়ে।
-অবশ্যই করবেন। বিটিভি জাতীয় সম্পদ। এখানে বিরোধী দলীয় নেত্রী আসবেন এটাই স্বাভাবিক। আমরা ঐক্যের রাজনীতি করতে চাই।
কেউ কেউ আপত্তি করলো, না ম্যাডাম আপনি নিজেই অতিথি হবেন। শফিক রেহমানের অনুষ্ঠান মানেই হিট। সেখানে হাসিনাকে চান্স দিয়ে জনপ্রিয়তা বাড়ানোর দরকার কী?
ম্যাডাম তাদের ধমকে দিয়ে বলেন, টিভিতে চেহেরা দেখাইলেই যদি জনপ্রিয়তা বাড়ত, তবে এরশাদের পতন হত না।
শফিক রেহমান শেখ হাসিনাকে এই প্রস্তাব দিলে তিনি স্বভাবসুলভ কটূক্তি করে তা প্রত্যাখান করেন।
পরে শফিক রেহমান আর অনুষ্ঠানটি করেননি।
২০০২ সাল।
তৃতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এক ইফতার পার্টিতে তিনি, শফিক রেহমান ও তরিকুল ইসলাম (তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী) আলাপ করছেন। বেগম জিয়া শফিক রেহমানকে বলেন, বিটিভিতে মান-সম্পন্ন অনুষ্ঠানের অভাব আছে। আপনি একটি অনুষ্ঠান করেন।
-ম্যাডাম আমি অনুষ্ঠান করতে পারি। কিন্তু শর্ত আছে।
-কী শর্ত?
– যদি কখনো এই তরিকুল ইসলাম (হাত ইশারায়) গড ফাদার হয়ে যায়, তবে কি তাকে আমি আমার অনুষ্ঠানে আমি গড ফাদার বলতে পারবো?
বেগম জিয়া উত্তর দেবার আগেই তরিকুল ইসলাম বলে উঠেন অবশ্যই।
আর এটাই ছিলা আর্ট শো লাল গোলাপ অনুষ্ঠানের পিছনের গল্প।
এই লাল গোলাপেই ২১ শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ভিকটিম মাহবুবা পারভীনের সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়েছে পুরো এক ঘন্টা। সেই ২০০৪ সালেই। কল্পনা করতে পারেন, গুম হয়ে যাওয়া ইলিয়াস আলীর পরিবারের কেউ ২ মিনিটের জন্য হলেও এখানকার বিটিভিতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছে?
বেগম জিয়া কোন আওলিয়া নন, তিনি বা তার দলের কেউই এমন দাবী করেন নাই। তিনি মানুষ। তিনিও ভুল করতে পারেন। কিন্তু দলীয় চিন্তার উর্দ্ধে উঠে দেশ গড়ার মত পদক্ষেপ তার মত কেউই নেননি। তিনি কখনো কাউকে দেশ ছাড়া করতে চাননি। তিনি চান সবাইকে নিয়ে সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বেন। আর সেই সংগ্রামের পথে আজো হেটে চলছেন।