হীনমন্যতা

হীনমন্যতা আমাদের মনে রাজত্ব করে। হীনমন্যতা হলো মনের রাজা । এই হীনমন্যতাই আমাদের মন ভেঙ্গে দেয়। মনে হতাশা, দুঃখ, বেদনা জাগায়। হীনমন্যতা মনের অপূরণীয় ক্ষতি করে। চেতনে অবচেতনে আমরা হীনমন্যতার প্র্যাকটিস করি। হীনমন্যতা না থাকলে বাজারে অনেক পন্য আছে যা বিক্রিই হতোনা। হীনমন্যতার তালিকা প্রস্তুত করিঃ

আমার চেহারা খারাপ  (নিজের চেহারা কেউ নিজে সৃষ্টি করেনি। প্রতিটি মুখই ইউনিক বা অন্যন্য কারু সাথে কারু তুলনা নেই)
আমাকে কেউ ভালবাসেনা (কেউ কারুকে ভালবাসেনা। নিজেকে নিজে ভালবাসুন )
আমি খুব নিঃসঙ্গ ( হাজার মানুষের ভীড়ে প্রতিটি মানুষই নিঃসঙ্গ – ৩০ বছর ছেলেমেয়ে মানুষ করার পরে ওরা যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে যায় যার যার সংগী সাথী নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায় – তখন মাবাবা নিঃসঙ্গ হয়ে যায়। ঐসব ছেলেমেয়েরাও তাদের যার যার বাচ্চা পালনে লেগে যায় , ব্যস্ত হয়ে যায় ৩০ বছর পরে আবার নিঃসঙ্গ হবে বলে। জীবন এমনি। এই দুনিয়াতে সবাই নিঃসঙ্গ – পরিবার গঠণের মূল কারনই ছিল যাতে নিঃসঙ্গ থাকতে না হয়। যাতে একাকী একটা মানুষ তার অস্তিত্বের লড়াইয়ে সাথে নিজের আপন কেউ থাকে যে সুখে দুখে পাশে থাকবে । কিন্তু থাকেনা। সবাই চলে যায়। একটি শিশু যখন অসহায় থাকে তখন সে তার মাবাবার উপর নির্ভরশীল হয় – সঙ্গ দেবার জন্য নয়। মাবাবা তাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে – এই ব্যস্ততার পেছনে কারণ – বাচ্চার প্রতি টান এবং একদিন এই বাচ্চাটি তাকে রক্ষা করবে যখন সে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেনা বা ঠিক এই শিশুটির মত অসহায় হয়ে যাবে)
আমার বয়স বৃদ্ধি পাঁচ্ছে (কমছে কার? – সবারই বয়স বৃদ্ধি পায় কারু কমে না। যারা গতকাল জন্মেছে তারা তাদের যৌবন নিয়ে গর্বিত – কথায় কথায় অন্যকে বুইড়া বলে হীনমন্যতার প্র্যাকটিস করে – কিন্তু তারাও একদিন বইড়া হয়ে যায় এবং তাদের রেখে যাওয়া ট্রাডিশন অনুসারে তাদের চেয়ে যারা ছোট তার তাদেরকেও বুইড়া বলে বিদ্রুপ করে)
আমাকে দিয়ে কিছু হবেনা। ( সৃষ্টিকর্তা  কারুকে শুধু পেট নিয়ে সৃষ্টি করেননি সাথে মেধা দিয়েছেন, হাত, পা সহ আরো অনেক অঙ্গ দিয়েছেন যাতে এইসব অঙ্গ কাজে লাগিয়ে মেধা খাটিয়ে সে অস্তিত্বের লড়াইয়ে  টিকে থাকতে পারে। যারা বলে আমাকে দিয়ে কিছু হবেনা তারা সবাই হীনমন্যতার শিকার।)
তোকে দিয়ে কিছু হবেনা ( যেসব মানুষ অন্য মানুষকে ছোট করে তারা হীনমন্যতায় ভুগে অন্যকে ছোট করে মানসিকভাবে পংগু করে ফ্যালে। উৎসাহ অনুপ্রেরণা না দিয়ে “তোকে দিয়ে কিছু হবেনা ” এই কথা বলে যা কিছু হতো সেই চিন্তা করার পথও রুদ্ধ করে দেয় “তোকে দিয়ে কিছু হবে না” সার্টিফিকেট দিয়ে)
অনেক মানুষের ভেতর রিভার্স সাইকোলজী কাজ করে । যেমন – তাকে দিয়ে কিছু হবেনা শুনলে সে দ্বিগুণ উতসাহে লেগে যায় কিছু করার জন্য। যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এবং যারা বলেছিল “তাকে দিয়ে কিছু হবেনা” তাদেরকে দেখিয়ে দেয় যে তাদের চাইতেও সে ভাল কিছু করতে পারে এবং জীবনে সফল হতে পারে।

ইস আমার যদি অমুক থাকতো তাহলে তমূক করতে পারতাম। তোমার অনেক কিছু আছে যা তুমি হেয় করে দেখো। ঘরের সামনের ঘাস গরু খেতে পছন্দ  করেনা। কোন কিছু সহজে পাওয়া গেলে তার মূল্য থাকেনা। নিজেকে জানো । নিজের ভেতর অনেক মূল্যবান সম্পদ আছে যা অবহেলিত। তা কাজে লাগিয়ে নিজের অন্নের সংস্থান নিজেই করা যায় কারু অনুগ্রহ লাগেনা। হীনমন্যতার ঘরে বসবাস করলে অনেক মূল্যবান সময় সুযোগ সম্ভাবনা হারাতে হয়।

লোকে কি বলবে। লোকেও হীনমন্যতায় ভুগছে।
সমাজে থাকতে গেলে লোকের সাথে উঠতে বসতে গেলে কতগুলো জিনিষ লাগে। সমাজে সন্মান পেতে গেলে ফেসবুকে মেয়ে পেতে গেলে ঘরবাড়ি টিভি ফ্রিজ গাড়ি চাকুরী এইসব লাগে। এইসব আছে এমন অনেকেই সেইসব মেয়েকে পেয়েছে তারপর সেই সব উকিলের মাধ্যমে তালাকও হয়েছে। সবই হীনমন্যতার খেলা।

যাকিছু নিজের আছে সব কিছুই সুন্দর। এটা ভাবতে পারলে দেখা যেতো জমি বিক্রি করে বিদেশে যেয়ে রাস্তা সাফ না করে সেই জমিতে সব্জি চাষ করতো। সেই টাকা দিয়ে বাড়িঘর টিভি ফ্রিজ গহনা দিল্লীতে চিকিৎসা হয়তো হতো না তবে সবাই যদি যার যার জমিতে সব্জি চাষ করতো তাহলে বাজারে সব্জির দাম কমে যেতো । যার যার নিজের জমি থেকে সব্জি খেলে ফরমালিনের ভয় থাকতোনা। অসুখ হতোনা । ভারতের অষুধ ও হাসপাতালকে টাকা দিতে হতোনা। ভারতের চাল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন কেনা লাগতোনা। যার যার উঠোনেই জন্মাতো চাল, ডাল, পেয়াজ, আদা, রসুন। সেই টাকা দিয়ে ছেলেকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো যেতোনা, আইফোন কেনা হতোনা, অনেক বিদেশী পন্যের চাহিদা কমতো। দেশী পন্য বৃদ্ধি পেতো। দেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হলে বিদেশীরা সব যার যার ব্যবসা গুটিয়ে নিতো । দেশী পন্য বিদেশে রপ্তানী হতো । দেশের মানুষেরা বিদেশীদের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে দিতোনা। নদীর পানি ফিরিয়ে এনে আবার সুজলা সুফলা বাংলা গড়তো। বিদেশীদের দালালদের বাংলাদেশের সকল স্থান থেকে শিকড়সহ উৎপাটন করে বিনষ্ট করে ফেলতো সর্বপরি বিদেশীদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করে দিলে  সীমান্তে একজন বাংলাদেশীর লাশ পড়তোনা। বিদেশীদের মালিকানাধীন সকল ব্যবসা প্রতিষ্টানকে সমুলে উৎপাটিত করে দিয়ে জাপানের  মত অর্থনীতি গড়ে উঠতো।

ভারতের অঙ্গরাজ্য বাংলাদেশের জনগণ ভারতের দাস । সুতারাং হীনমন্যতাই দাসত্বের মূল চাবিকাঠি।  হীনমন্যতা ছাড়া দাসেরা বাচতে পারবেনা ।

আমার অমুক নাই
অমুকের অমুক সুন্দর
আপনাকে দেখতে অমুকের মত সুন্দর
আমি আমার মত সুন্দর কেন হতে পারিনা?
কারু সাথে তুলনা করা কেন লাগবে?
কেউ কারু মত নয় । হাতের তালুতে যে রেখা আছে কারু সাথে সে রেখা মেলেনা। আঙ্গুলের রেখার অভিন্নতার কারনেই এখন আঙ্গুল থেকে ছবি নিয়ে ডিজিটাল আইডি তৈরি হয়
কারু আংগুলের ছাপ কারু সাথে মেলেনা
তেমনি প্রতিটি মানুষের চিন্তা ভাবনা মেধা ক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন
আর সব কিছুই মূল্যবান
যেহেতু কারু সাথে কারু মিল নেই নেই সেজন্য কারু সাথে কারু তুলনা করার অবকাশও নেই
সবার সবকিছুই ভাল
ইস আমার যদি পাখা থাকতো পাখীর মত তাহলে উড়ে চলে যেতাম অমুক জাগাতে। যেখানে এক শিকারী আমাকে গুলি করে মেরে ফেলতো। তাহলেই ভবলীলা সাঙ্গ হতো।
ইস আমার যদি অনেক টাকা থাকতো তাহলে আমি সাড়া দুনিয়া ঘুরে বেড়াতাম। ইটালিতে যেয়ে করোনাতে আক্রান্ত হলে আবার সেই ভবলীলা সাঙ্গ।
ইস আমার কিছু নেই। দুঃখও নেই। যা কিছু আছে সবই আমার অর্জন । দুঃখও আমার অর্জন।
আমার দুঃখ – আমি হীণমন্যতাই ভরা পৃথিবী থেকে হীণমন্যতা দূর করার জন্য কিছুই করতে পারিনি।

আয়শা মেহের
টরেন্টো । ক্যানাডা

৪৭ thoughts on “হীনমন্যতা

  1. I have been exploring for a little for any high quality articles or blog posts on this sort of house . Exploring in Yahoo I eventually stumbled upon this website. Reading this info So i¦m glad to convey that I’ve an incredibly just right uncanny feeling I came upon just what I needed. I so much without a doubt will make certain to don¦t overlook this web site and provides it a glance on a relentless basis.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.