ফিরে দেখি ইতিহাসের সেইসব দিনগুলো যখন পূর্ব বাংলা স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ চলছিল। তারপর পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করলো ভারতের সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার মাধ্যমে। পাকিস্তান আমল সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। ধারণা নেই কারণ ইতিহাস যা আমরা পাঠ করি তা লেখা হয়েছে ইতিহাসবিদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের দিকটা লক্ষ্য রেখে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের তুষ্টির ব্যাপারকে প্রাধান্য দিয়ে। নিরপেক্ষ ইতিহাস লেখা হয়নি। পূর্ব বাংলাতে আমি যখন জন্মগ্রহণ করি তখন এই ভূখন্ডকে পূর্ব পাকিস্তান বলা হতো। আমি যখন স্কুলে পড়ি বা বুঝতে শিখি যখন পূর্ব বাংলার নাম “বাংলাদেশ”।
১৬ই ডিসেম্বর ভারত বিজয় দিবস উৎযাপন করে। কারন এই বিজয় মূলত ভারতের বিজয়।
তেমন একটা সময়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ভারতের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার ঠিক দুইদিন আগে অর্থাৎ ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল রাত ১১টা বাজার ঠিক ১৫ মিনিটে ভারতের গোহাটি ও হাসিমপাড়া এয়ারফোর্সের পাইলট একটি নির্দেশ পায় । ঢাকার একটি বিল্ডিংএ বোমা বর্ষণ করতে হবে। যেহেতু এই বিল্ডিংটি তেমন বিশেষ কোন সামরিক ঘাটি বা বিল্ডিং নয় সেজন্য এই বিল্ডিং খুঁজে বের করতে পাইলটের তেমন কোন বেগ পেতে না হলেও বিস্মিত হতে হয়েছে।
চারটি মিগ২১ জেট থেকে রকেট নিক্ষেপ করে বিল্ডিং এর কনফারেন্স হলটি ধংস করে দেওয়া হয় আরো দুইটি মীগ হান্টার বোমা দিয়ে মূল বিল্ডিংটি মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়।
এটি ছিল গভর্নর হাউস। বোমা বর্ষনের ঠিক ৫৫ মিনিট আগে পূর্ব পাকিস্তানের ক্যাবিনেট একটি জরুরী মিটিং এ আসন্ন আত্মসমর্পন এড়িয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। এটিই ছিল পূর্ব পাকিস্তান গভর্নমেন্টের সর্ব শেষ মিটিং। এ এম মালিক – পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আর তার ক্যাবিনেট এই বোমার হাত থেকে রক্ষা পায় কিন্তু বিল্ডিং এর ধংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়েই তিনি ইস্তফা দেন এবং ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ না করার সিদ্ধান্তটি সেই সাথেই ধবংস হয়ে যায়।
তারপর বহু বছর ধরে ইতিহাসবিদেরা ভেবে ভেবে কোন দিশা পায়নি ভারতের গোয়েন্দাবাহিনী কিভাবে জানলো গভর্নর হাউসের এই গোপন মিটিংএর কথা এবং এই মিটিং এ নেওয়া সিদ্ধান্তের কথা। আর এই সিদ্ধান্ত নেবার সাথে সাথে হাসিমপাড়া গোহাটির পাইলটকে নির্দেশ দেওয়া হয় বিল্ডিংটি বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে যাতে আত্মসমর্পন না করার সিদ্ধান্তটিও বিল্ডিং এর সাথেই উড়ে যায়।
১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের অফিসিয়াল ক্লাসিফায়েড ইতিহাস থেকে জানা যায় যে ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্য পূর্ব পাকিস্তানের শেষ ক্যাবিনেট মিটিং এ সে সময়ে উপস্থিত ছিলনা । ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর Cryptanalysts, or Code-Breakers সফলভাবে Pakistan’s military cipher ইন্টেলিজেন্সের রিয়েল-টাইম তথ্য জানতে পারে এবং বোমা মেরে বিল্ডিংটি উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তান আর্মীকে একটি আগাম বার্তা জানায় সেটা হলো ভারত জেনে গেছে “পাকিস্তানের আত্মসমর্পন না করার সিদ্ধান্তটি।
দুইদিন বাদে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আর্মী ভারতের আর্মীর কাছে আত্মসমর্পন করে।
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা
১৪০ thoughts on “জানা অজানা”