https://bookkeepingnexus.com/Fraud_Anwar_Parvez/FraudBangladesh.html
ইন্টেস্টিনাল বা অন্ত্রের গ্যাস অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোজেন এবং মিথেন দিয়ে গঠিত হয়। বিভিন্ন কারণে পেটে গ্যাস হতে পারে তবে সবচাইতে বড় কারণ হলো খাবার, খাবার খাওয়ার অভ্যাস এবং খাবারের ভেতর থাকা ব্যাকটেরিয়া ।পেটে জমে থাকা বা উৎপাদিত অতিরিক্ত গ্যাস সব সময়ই অসহ্য এবং বিরক্তিকর।
যেসব অভ্যাস থেকে গ্যাস হতে পারে, সেগুলো হলোঃ
খাবার সময় কথা বলা
মন খারাপ বা রাগ নিয়ে খাওয়া
ধূমপান বা তামাক চাবানো
পানি পানের সময় স্ট্র অথবা স্পোর্টস বোতল ব্যবহার করা
পেটে খাবারে ভরিয়ে ফেলা
দীর্ঘ সময় পেট খালি রাখা
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলা
খুব ঠান্ডা বা খুব গরম পানীয় পান করা
গ্যাম চাবানো বা শক্ত চকোলেট ক্যান্ডি খাওয়া
পানির ট্যাপ থেকে পানি পান করা
খুব টাইটফিট কাপড় পরিধান করা
দীর্ঘ দিন ধরে সর্দি কাশি বা এই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করার অভ্যাস
যেসব খাবার থেকে গ্যাস হতে পারে, সেগুলা হলোঃ
কারবোনেটেড পানীয়
ঝাল, ভাজাভুজি বা চর্বিযুক্ত খাদ্য
ব্রকলি, বাধাকপি, পেঁয়াজ, মটরসুটি, বরবটি
আপেল, প্রুন বা জুস
শুখানো ফল
যেকোন কিছু যার ভেতর রয়েছে sorbitol, mannitol or maltitol তা গ্রহণ করলে গ্যাস হতে পারে
গ্যাস থেকে রক্ষা পাবার সাতটি সহজ উপায়ঃ
১ – প্রথমে জানতে হবে কি কারণে পেটে গ্যাস হচ্ছে। এই জানার ব্যাপারটা সব রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আপনি যখন ডাক্তারের কাছে যান তখন আপনার মুখ দেখেই ডাক্তার বলতে পারেনা আপনার কি অসুখ হয়েছে। ডাক্তার সব রোগীকে প্রশ্ন করেই জেনে নেয় তাদের কি হয়েছে। প্রতিটি মানুষই জানে কখন তাঁরা অসুস্থ হয়ে পরেছেন এবং কেন অসুস্থ হয়েছেন। পেটে গ্যাস হবার ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হবে কোন খাবার খাওয়ার পর এমন হচ্ছে। খাবারের অভ্যাস পরিবর্তন করে দেখে নিতে হবে কোন খাবার খাওয়ার সাথে সাথে গ্যাস হয় আর কোন খাবার খাওয়ার পরে গ্যাস হয়না।
সবার যে সব খাবার খেলে গ্যাস হবে এমন কোন কথা নেই। কারণ খাবার হজম করার ক্ষমতা সবার এক রকম নয়। যেসব খাবার খেলে গ্যাস হতে পারে সেগুলো হচ্ছেঃ
রাতে পালং শাক খেলে গ্যাস হতে পারে আর পালং শাক, ব্রকলি, ব্রাসেলস স্প্রাউট, পিঁয়াজ খেলে পেটে গ্যাস হতে পারে যেহেতু অনেকেই এইসব খাবার ঠিকভাবে হজম করতে পারেনা। সেজন্য পালং শাক রান্না করতে হবে পেঁপে দিয়ে যা হজমে সাহায্য করবে। দুধ, চীজ, আইসক্রিম খেলে পেটে গ্যাস হতে পারে। অনেকেই দুগ্ধ জাতীয় খাবার খেয়ে হজম করতে পারেন না। রুটি, ভাত, পাস্তা, আলু, সব কিছুতে চিনি রয়েছে, এগুলো খেলেও গ্যাস হতে পারে।
হাল্কা পানীয়, কোকাকোলা, স্পাইট, জুস, জাতীয় পানীয় থেকে গ্যাস হতে পারে। এগুলা না পান করে সুপারী, ও জর্দা ছাড়া পান খাওয়া যেতে পারে। পান পাতা হজমে সাহায্য করে। কিন্ত সবার জন্য নয়। সেজন্য লক্ষ্য রাখতে হবে কোন খাবার পরে হজমে অসুবিধা হচ্ছে আর গ্যাস হচ্ছে। সেই খাবারগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। রাতে এক টেবিল চামুচ মৌরী এক গ্লাস পানিয়ে ভিজিয়ে রেখে ভোরবেলাতে খালি পেটে সেই পানি পান করলে গ্যাস থেকে নিরাময় হওয়া সম্ভব। এছাড়া মৌরীর চা পান করা যেতে পারে।
যে খাবার খেয়ে হজম করতে অসুবিধা হয় এবং গ্যাস হয় সে খাবার খুব পরিমিত পরিমান খাওয়া যেতে পারে অথবা সম্পুর্নভাবে পরিহার করা যেতে পারে। অথবা রান্নার প্রক্রিয়া বদলে ফেলতে হবে। অনেকেই কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা শাক, সালাদের সাথে খেতে পছন্দ করেন এবং তাঁতে গ্যাস হতে পারে যখন সেগুলোকে রান্না করে বা ভাপিয়ে খেয়ে দেখা যেতে পারে। গ্যাস হয় এমন খাবার যদি বেশী করে রান্না করা যায় তাহলে খাদ্যগুন নষ্ট হতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
অনেকটা সময় খালি পেটে থেকে ভরপেট খাবার খাওয়া উচিৎ নয়। সকালের নাস্তা খুব ভোরে উঠে করে নিয়ে ক্ষুধা লাগার আগেই সামান্য কিছু খেয়ে নিতে হবে দুপুরের খাবারের আগে। তারপর সন্ধ্যা হবার আগেই রাতের খাবার খেয়ে ফেলতে হবে ।
২ – খাবারের সাথে পানি পান করলে খাবার হজম করতে অসুবিধা হয়। খাবারের সাথে পানি পান করলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে খাবার হজমের জন্য পেট থেকে যে এসিড বের হয় তা পানির কারণে খাদ্য হজমে সাহায্য করতে বাঁধাগ্রস্ত হয়। খাবার খাওয়ার ত্রিশ মিনিট আগে পানি পান করুন। আমাদের মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাঃ বলেছেন – খাবারের সাথে পানি পান করবে না এবং ভর পেট খাবেনা। ভরপেট খাবার খেলে পেটে পর্যাপ্ত পরিমানে খালি জাগা না থাকাতে খাবার হজমের এসিড খাবার হজমে সাহায্য করতে পারেনা । বদহজম হতে থাকে।
৩ – ধীরে ধীরে খাবার খান। খাবার খাওয়ার সময় সময় নিয়ে খাবার ভালভাবে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে যাতে খাবার হজম সহজ হয়> দ্রুত খাবার খাওয়া এবং খাবার খাওয়ার পরে ঢক ঢক করে পানি পান করলে খাবার হজম হতে বাঁধাগ্রস্ত হয় এবং পেটে গ্যাস জমে
৪ – আয়ুর্বেদিক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে অতিরিক্ত গ্যাস নিরাময়ের জন্য। যেহেতু পেটে জমা গ্যাস প্রাকৃতিক কারণ তাই ফ্যাক্টরির তৈরি গ্যাস নিরাময়ের ওষুধ না খেয়ে প্রাকৃতিক খাবার থেকে গ্যাস নিরাময়ের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
৫ – মাটির চুলোতে রান্না করলে যে কাঠ কয়লা হয় সেই কয়লা জ্বালিয়ে আগুন সৃষ্টি করে সেই আগুনে খাবার সেকে খেলে গ্যাস কম হতে পারে। কয়লার আগুনে শাক, শব্দি, ফল, আলু, পেঁয়াজ, রুটি সেকে খেলে বা বারবিকিউ করে খেলে গ্যাস কম হতে পারে।
৬- চুইয়িং গ্যাম চিবানো থেকে বিরত থাকুন। স্মোকিং করা থেকে বিরত থাকুন এবং স্ট্রর সাহায্যে পানি বা জুস পান করা থেকে বিরত থাকুন । খাবার মাটিতে বসে খাবার চেষ্টা করুন। সোজা হয়ে বসে খাবার খান। সোজা হয়ে বসে পানি পান করুন। দাঁড়িয়ে পানি পান করবেন না।
৭ – সব ধরনের প্রিজার্ভেটিভ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ফরমালিনযুক্ত খাদ্য, জুস, বহুদিনের বন্ধ বয়োম থেকে খাবার গ্রহণ, আর্টিফিসিয়াল চিনি যা অনেকেই চিনির পরিবর্তে খায় তা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
আপনার দেহ আপনার নিজের সম্পদ। অনেকেই তাদের পছন্দের খাবার খেয়ে নিজের দেহের উপরে নির্যাতন করে। নিজের দেহের উপরে খাবারের চাপ দিয়ে দেহকে ভরপুর করে ফ্যালে ফলে অতিরিক্ত খাদ্যের চাপ সহ্য করতে না পেরে দেহ খাদ্য হজমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়।
জীবন ও মৃত্যু আল্লাহ্ নির্ধারণ করেন তবে সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকাটা জরুরী। উপসংহারে বলবো
ধীরে ধীরে খাবার গ্রহণ করুন
খাবার সময় কথা বলবেন না
মেঝেতে বসে খাবার গ্রহণ করুন
সময়ে পরিমিত ব্যবধান রেখে খাদ্যগ্রহণ করুন
খুব ভালভাবে চিবিয়ে খাবার গ্রহণ করুন
ঘরের তাপমাত্রা যেমন তেমন পানীয় গ্রহণ করুন
ফ্রিজ থেকে নিয়ে অথবা আগুন গরম পানি পান করবেন না,
পানি ফুটিয়ে ঘরের কোনে একটি সুরাই বা মাটির কলসীতে ভালভাবে ঢাকনা দিয়ে ভেতরে ফিটকিরি এবং লবং দিয়ে রেখে পান করুন।
দিনে ঘুমাবেন না। ভোরে ব্যায়াম করুন
খাবার পরে কিছুক্ষণ সোজা হয়ে বসুন
খাবার গ্রহণের পরে ছোট ছোট পা হেঁটে আসুন।
মেন্থল চা পান করুন মৌরি ভিজিয়ে সেই পানি পান করুন
এছাড়া কেওড়া, ধনিয়া এবং হলুদ খেতে পারেন
ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন। সুন্দর থাকুন। প্রকৃতিকে ভালবাসুন । প্রকৃতির সুরক্ষা করুন।
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা