প্রেম

ঘরের আসবাব থেকে সুরু করে আমাদের মনের ভেতর স্মৃতি যাকিছুই অদরকারী সবকিছুই আমরা সরিয়ে ফেলতে চাই। অদরকারী, অপ্রিয় স্মৃতি মুছে ফেলতে চাই। পুরানা আসবাব ছুঁড়ে ফেলে দিতে চাই। পুরানা কাপড় দান করে দেই অন্যদের যাদের কাপড় কেনার সামর্থ নেই। আমরা ভাবিনা আমরা যা কিছু চাইনা, আমরা যা কিছু পরিত্যাগ করি তা অন্যেরা কিভাবে গ্রহণ করতে পারে? এটা ভাবিনা। যা কিছু আমরা নিজেদের জন্য চাইনা সেইসব কিছু অন্যদেরকে দিতে চাই শুধু দিতেই চাইনা উলটা সেই দানকে মহান হিসাবেও ভাবতে চাই এবং নিজেদেরকে বিশাল দান ত্রাণকর্তা ভেবে গর্ব্বোধ করতেও চাই। আমাদের চাইবার শেষ নেই। নিজেকে সুখী করার জন্য নিজেকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমরা অনেক কিছু করি তবুও আমরা তৃপ্ত নই তাই আত্মতৃপ্তির জন্য নানা ধরনের ভাল মন্দ প্রচেষ্টা লেগেই থাকে।

আমাদের এই আত্মতৃপ্তি প্রচেষ্টার কারণে অনেক মানুষকে আমরা জেনে না জেনে আঘাত করি,অন্যের অশান্তির কারণ হই – সেসম্পর্কে আমরা বিন্দুমাত্র লজ্বিত নই, এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই আমাদের।  বাসে যেতে যেতে ফেসবুকে একটি ছবির উপরে আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো।

“ পাগলীর ফুটফুটে সন্তান প্রসব”

ফেসবুকের পাঠক দর্শকেরা সন্তানের বাবাকে খুঁজছেন ।
পাগলির সন্তানের বাবাকে যারা খুঁজছে্ন তাদের ভেতর অনেকেই হয়তো অনেক অজানা ফুটফুটে সন্তানের বাবা হয়েছেন বা হতে পারতেন বা হয়েও তাকে ফেলে অন্য কোন গর্ভে সন্তান উৎপাদনের কথা ভাবছেন। পাগলীর গর্ভ বা আপনার নির্বাচিত ও প্রিয়তমা সন্তানের মায়ের গর্ভ বা আপনার নিজের মায়ের গর্ভ সব গর্ভই দেখতে এক রকম, সাড়া বিশ্বের সব মায়েরই সন্তান ধারণের স্থানটির চেহারা একই রকম । আর সন্তান প্রসব বেদনা একই রকম। কিন্তু সেই প্রসব বেদনা সহ্য করার ক্ষমতা ভিন্ন।

প্রসবের পরে সেই সন্তানের আগমণে পৃথিবী তাকে  কিভাবে গ্রহন করবে সেই গ্রহণের প্রক্রিয়া, ব্যবস্থাপনা, আদোর, ভালবাসা, অনাদর, ঘৃণা, ইত্যাদিও ভিন্ন ভিন্ন। কেউ সোনার টুকরা কেউ সমাজের আবর্জনা। একজন লিখেছে “পাগলি ইলিশ মাছ খেতে চেয়েছে” আর সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ইলিশ মাছ একটি সুস্প্রাপ্য মাছ।  শেখ মুজিব ফারাক্কা চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরে, পদ্মার পানি ভারতের নিয়ন্ত্রনে চলে যাবার পরে, দালালী চুক্তি অনুসারে সাড়া বাংলাদেশের পানিকে ভারতের স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়ন্ত্রনের আওতাই আনার ফলে “ইলিশ” এখন শুধু প্রধানমন্ত্রীর ডীপ ফ্রিজে করে ভারতে যায় প্রভুদের নিজের হাতে ভাঁজি করে করে খাওয়াবার জন্য। সেক্ষেত্রে পাগলির এই চাওয়া এবং পাওয়াকে রাস্ট্রিয় মর্যাদা দিতে ফেসবুকের পাঠক ও  দর্শকেরা একটি প্রসংসণীয় পোষ্ট দিয়ে সবাইকে ধন্য করেছে।

নীচের মন্তব্যে এক মহিলা বলেছেন – পাগলীকে লাইগেশন করার ব্যবস্থা করা হোক যাতে পাগলীর সন্তানের বাপেরা পাগলির দেহ ভোগ করতে পারবেন কিন্তু সন্তানের জন্ম দিয়ে ফেসবুকে তা পোষ্ট করে সেই সন্তানকে নিয়ে মহান বক্তব্য পোষ্ট করতে না পারে। দোয়া দরুদ মিলাদ ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে না পারে। পাগলি একজন মানসিকভারসাম্যহীন দরিদ্র বাংলাদেশের নাগরিক। আর একজন শিক্ষিতা বাংলাদেশী নাগরিক রাতে যখন একাকী বাসে যাচ্ছিল তখন তাকে বাসের ড্রাইভার, এবং সহযোগিরা সবাই মিলে ধর্ষন করে এবং ধর্ষনের পরে তাকে পথের পাশে ছুঁড়ে মারে। ধর্ষকেরা কেউ আওয়ামীলীগের সদস্য না হবার কারণে তাদের কারু কারু সাজা হিসাবে ফাঁসি হয়। এই ফাঁসীর রায় খুব দ্রুত ঘোষনা করার ফলে জাতী ধন্য হয়।

সেনানিবাসের পথে ধর্ষিতা তনুর ক্ষত বিক্ষত লাশ পাওয়া যাবার পরে কোন বিচার হয়না বরং তনুর পরিবাবের জীবিত সদস্যদের হুমকীর মুখে দ্রুত বাংলাদেশে থেকেও ফেরারী হতে হয়েছে। তনু হত্যার বিচার হয়নি। বাংলাদেশের পথের পাশে এমন অনেক ধর্ষিতা মেয়ের লাশ পাওয়া যায়।  হাত মুখ বাঁধা ক্ষত বিক্ষত গুলিবিদ্ধ ছেলের লাশও পাওয়া যায়। ফেসবুকে তা পোষ্ট করে সবাই আল্লাহ্‌র কাছে বিচার চায়।  ফেসবুকে এই লাশের ছবি পোষ্ট করে আল্লাহ্‌র কাছে বিচার চাওয়াকালীন সময়ে হয়তো অনেকেই নির্যাতিত হচ্ছে, অনেকেই বিভিন্ন পথে ঘাটে নদীনালাতে অপেক্ষা করছে পথযাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষনের।  বাংলাদেশের অনেক মা অপেক্ষা করছেন তাদের ছেলে বা মেয়ের ফিরে আসার। যদিও যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে ৪৫ বছর আগে যদিও এইসব ছেলেমেয়েরা জন্মেছে যুদ্ধ শেষ হবার ২৫ বছর পরে তবুও মৃতের মিছিলে এরা যোগ দিয়েছে। কেউ কেউ উধাও হয়ে গেছে খোলা আকাশের মাঝখান থেকে এক বিশাল জনসমুদ্রের বুক থেকে – কেউ জানেনা কোথায় গেছে। তার পরিবার পরিজন অপেক্ষা করছে প্রিয়জনের ফিরে আসার – হয় রক্তাক্ত লাশ হয়ে অথবা ক্ষতবিক্ষত পঙ্গু হয়ে অথবা বাক্রুদ্ধ মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে। সবাই প্রশ্ন করে কেন এমন হলো? সবাই দোষারোপ করে শুধু একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে এবং যার যার নিজের কপালকে।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, বাংলাদেশ পুলিশ, র‍্যাব এরাই শক্তিশালী, ক্ষমতাশালী  এবং বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষেরা সবাই অসহায় ।

স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকারের আমলে কিছু স্বৈরাচারী পুঁজিপতির নাম ছিল ইসপাহানী, আদমজী, বাওয়ানী, আর একটি রাজনৈতিক দলের নাম ছিল মুসলিম লীগ। এইসব পুঁজিপতিরা বাংলাদেশে কিছু স্কুল, এতিমখানা, মাদ্রাসা, হাসপাতাল ও মসজিদ নির্মান করেছিল।  কিছু হাসপাতালের নামের আগে শেখ মুজিব লাগানো হয়েছে। শেখ মুজিব বা শেখ মুজিবের পরিবারের সাথে “দান” শব্দের কোন সম্পর্ক না থাকলেও বিভিন্ন মানুষের প্রতিষ্টিত প্রতিষ্টানের নামের আগে তাদের নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

সমস্যা নেই।  নামে কি এসে যায়?
কারু কোন কিছুতে কোন অবদান না থাকলেও সে সেইসব জিনিষের আগে পিছে নিজের নাম লাগিয়ে সেইসব জিনিষ প্রতিষ্টান প্রতিষ্টার ক্রেডিট নিতেই পারে – ক্ষমতা এমনই জিনিষ। দেশের মানুষও সেটা মেনে নেয় যার যার নিজের স্বার্থে বা স্বার্থ না থাকলেও যদি কখনো নিজের স্বার্থে তা কাজে লাগে সেই আশায়।

বাংলাদেশের  ১৭ কোটি মানুষ অসহায় বন্দী ।  বাংলাদেশে  সকল ক্ষমতার মালিক বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ, বাংলাদেশ পুলিশ এবং র‍্যাব।  সমস্যার সমাধান খুব সহজ সবাই বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে যোগ দিন। এক নেতা এক দেশ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ। সবাই মিলেমিশে লুটপাট খুন ধর্ষন করুন । মিলেমিশে করি কাজ হারিজিতি নাহি লাজ। মিলেমিশে গর্বিত হউন। মিলেমিশে মিথ্যা বলুন। মিলেমিশে শোক করুন। জানাজা পড়ুন। সবাই যদি আওয়ামীলীগ হয় তাহলে অন্তত বুলেট, টিয়ারশেল ইত্যাদির খরচার সাশ্রয় হবে।

বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলকেই আমি রাজনৈতিক দল মনে করিনা। ভারতের পরোক্ষ উপনিবেশ এই বদ্বীপটি কখনো স্বাধীন ছিলনা বিধায় এই দেশের মানুষেরা নিজেদের জন্য নিজেরা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারেনি।  দেশ স্বাধীন না হলে দেশের সরকার গঠনের প্রশ্ন অবান্তর।

গণতান্ত্রিক উপায়ে বহুদলীয় রাজনৈতিক দল গঠন করে দেশের জনগনের সার্বিক মঙ্গল সাধন করবে এমন একটি রাজনৈতিক দলকে বেছে নিয়ে সরকার গঠন করার জন্য প্রথমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে।  বাংলাদেশের প্রসাশন থেকে বিদেশীদের কালো ছায়া সমূলে বিনাশ করতে হবে।

আর সেটা অসম্ভব।
কারণ বাংলাদেশের সকল জনগণই সেই পাগলির মত অসহায়। যে পাগলী সেদিন একটি ফুটফুটে সন্তান প্রসব করেছে।

আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *