আজ এক লেখক কবিকে আমি দুঃখ দিয়েছি। অথচ আমি দুঃখ দিতে চাইনি। অথবা হয়তো চেয়েছিলাম। ঘটনাটা এমন – কবি আমাকে ফেসবুকে বন্ধু হিসাবে যোগ দিতে চাইলে আমি গ্রহণ করেছিলাম। অনেক লেখার লিঙ্ক পাঠিয়েছিল আমি সেসব লিঙ্কে যেয়ে লেখাগুলো পড়িনি। আমার জীবনের বেশীরভাগ সময় কেটে গেছে পথে পথে। এখনো পথেই থাকি। ঘরে বসে ফেসবুকিং করার মত বিলাসবহুল জীবন তো আমার নয়। যদি লটারী জিতি তাহলে অবশ্যই সবার সাথেই কথা হবে ইনশাল্লাহ। তখন অবশ্য আমি ব্যস্ত হয়ে যাবো। আমি যদি লটারী জিতি, যদি অনেক টাকা জিতি তাহলে আমি আমার স্বপ্ন পূরণে লেগে যাবো। কি আমার স্বপ্ন? বলছি। একটু পরে। আগে বলি কবি আমাকে কি বলেছিল।
কবি বলেছিল ওর লেখা পড়তে।
তখন আমি অফিসে ছিলাম। তবে অফিসে থাকার সময় আমি যখন বাথরুমে যাই তখন ফেসবুকিং করি। টূকটাক মেসেজে চোখ বুলিয়েনি। এছাড়া অফিসের ডেস্কে বসে অনেক ব্যাস্ত থাকতে হয় তাই কারু কথার উত্তর দেওয়া হয়না। অবশ্য কারু সাথে টানা ঝগড়া চললে আমি ঝগড়া করেই যাই যতক্ষণ পর্যন্ত আমি ক্লান্ত না হই। যাই হোক আমি কবির লেখা পড়া শুরু করলাম কিন্তু কিছু বুঝলাম না। হতে পারে আমি অবুঝ। হতে পারে কবির জ্ঞানের পরিধি অনেক ব্যাপক এবং আমার মত কম জ্ঞানী মানুষের পক্ষে কবির ব্যাপক জ্ঞানের পরিধি স্পর্শ করার যোগ্যতা নেই। আমি অযোগ্য কবির কবিতা বুঝতে। তবে আমি কবিকে বলেছি তোমার কবিতা খুব একঘেয়ে আর কোন চমক নেই। কবি রাগ করে বলেছে – চমক দেবার জন্য আমি লিখিনা। আমি বল্লাম – আমি চাই আজকের শিশুরা এমন কিছু লিখুক এমন কিছু বলুক এমন কিছু করুক যা আমি আগে দেখিনি, করিনি, শুনিনি, বুঝিনি। শেষেরটা ঠিক আছে। আজকের শিশুরা কি বলে আমি বুঝিনা। আমি বুঝতে অক্ষম।
কবি, আমার অক্ষমতাকে মাফ করে দেবেন।
তবু আমি চাইতেই থাকবো। নতুন কিছু চাইবো সাড়া বাংলাদেশের সব শিশুর কাছে। নতুন কথা চাই, নতুন কৌশল চাই, নতুন শিল্প চাই, নতুন প্রযুক্তি চাই, নতুন কবিতা চাই, নতুন শব্দ চাই, নতুন গান চাই, নতুন কাহিনী চাই, সুন্দর জীবণের জন্য নতুন পরিকল্পনা চাই, পুরানা বস্তাপচা নোংরা গলিত জীবন থেকে মুক্তি পেতে চাই, বাংলাদেশ থেকে সব অপরাধ ধুয়ে মুছে ফেলে শ্বাস নেবার পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য হাতিয়ার চাই, বাংলাদেশের মানুষসহ সকল প্রানী, বৃক্ষ, পানি, লতাপাতা সবার জন্য যার যার অবস্থানে থেকে তার তার পরিপূর্ন জীবন চাই, আমার চাইবার সীমা পরিসীমা নাই, অসময়ে অস্বাভাবিকভাবে যেন একটি মাছিও না মরে যায়, কারণ আল্লাহ্র সৃষ্টি এই প্রকৃতি, প্রানী, সব সৃষ্টির কারণ রয়েছে আর আমি চাইতেই থাকবো ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ তার ব্যক্তিগত চাওয়া, পাওয়া, লো্ভ, স্বার্থপরতা, নোংরা মন আর পাশবিকতার কারণে বিঘ্ন ঘটিয়ে একটি জীবনচক্রকে অস্বাভাবিকভাবে অপরিপূর্নভাবে অকালে পরিসমাপ্তি না ঘটাক। আগে যা কিছু কেউ করেনি তা আমি চাই – আমি চাইতে থাকবো, দিতে না পারলে সেটা তোমাদের অপারগতা।
যাক এখন বলি আমার স্বপ্নের কথা। আমি যদি লটারী জিতি, অনেক টাকা জিতি তাহলে আমি আমার স্বল্প জ্ঞান কাজে লাগিয়ে একটা উপায় আবিস্কার করবো। সেই উপায় ছিন্নমূল শব্দটিকে সমূলে উৎপাটিত করে দেবে বাংলাদেশের অভিধান থেকে। ছিন্নমূল শব্দটি যারা ব্যবহার করে তারা পাশবিক, অপরাধী এবং মূল থেকে ছিন্ন করার জন্য সম্পুর্নভাবে দায়ী। যার যার নিজের দায়িত্ব এড়াতে একটা শ্রেনী করা হয়েছে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে ছিন্নমূল। তারপর আর একটা শব্দ আছে “পথকলি”। এটাও একটি পাশবিক শব্দ যা অপরাধীরা ব্যবহার করে। মানুষের সম্পত্তি দখল করে মানুষকে পথে বের করে দিয়ে তাদেরকে পথকলি বলতে তারাই পারে যারা মানুষের সম্পদ দখল করে খায়। ভাবছি আমি লটারী জিতলে একটা উপায় আবিস্কার করবো সেই উপায়ের মাধ্যমে খুঁজে বের করবো বাংলাদেশে কে কে কার কার সম্পদ কিভাবে কিভাবে দখল করেছে। দখলকৃত সকল সম্পদ সেইসব মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে, দখল করার জন্য তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য আমি আইনের আশ্রয় নেবো, দেশে যদি আইন না থাকে তাহলে সকল দখলের বিরুদ্ধে আইন প্রনয়ন করবো। টাকা থাকলে সবকিছুই করা যায়। যারা অন্যের সম্পদ দখল করে সেই সম্পদের মালিক হয়ে সেই টাকা দিয়ে সব কিছু করতে পেরেছে তাহলে আমি লটারী জীতে কেনো এইসব লোককে তাদের দখলকৃত সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে এরা যাদের ছিন্নমূল ও পথকলি নাম দিয়েছে তাদেরকে পুনঃর্বাসিত করতে পারবোনা ? তবে আমি ওদের ছিন্নমূল হতে দেবোনা। ওদের স্থান হলো জেলখানাতে । সেখানেই ওদের শেকড় স্থাপিত রয়েছে।
টাকা যেমন খারাপ কাজ করতে পারে তেমনি ভাল কাজও করতে পারে। এইসব কথা চিন্তা করে আমি গতকাল আমার অফিসের আমিসহ চারজন সহকর্মীকে বলেছি – এসো সবাই মিলে লটারী খেলি। জিতলে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখি আর আসছিনা পথে পথে ঘুরতে। তখন আমি পথ থেকে মানুষকে ঘরে তুলবো এবং যারা মানুষকে পথে ছুঁড়ে দিয়ে মানুষের সম্পদ দখল করে এত দিন রাজার হালে থেকেছে তাদেরকে চোদ্দ শিকের পেছনে পাঠাবো।
সময়সীমাঃ
১৯৪৭ সাল থেকে আমার লটারি জেতার আগের দিন পর্যন্ত।
এই সময়ের ভেতর যেসব জাগাজমি বাড়িঘর দখল করা হয়েছে সবার কাছ থেকে এইসব জমি ও সম্পদ ছিনিয়ে নেবার জন্য গবেষনা করা হবে, চিহ্নিত করা হবে, কারা কারা সম্পদ দখল করে সম্পদশালী হয়েছে তাদের সবার নাম প্রকাশ করা হবে এবং রাস্তা থেকে সকল ছিন্নমূল ও পথশিশুদের উঠিয়ে নিয়ে এইসব সম্পত্তিতে আশ্রয় দেওয়া হবে। এর পর থেকে আর পথে পথে মানুষকে শুয়ে, বসে, গার্বেজ খেতে দেখা যাবেনা।
অবশ্য দখলদারদের জন্য একটা সুখবর আছে। আমি যখন কিছু পাই খুব সামান্য পাই আর অনেক কস্ট করে পাই। লটারী জেতার মত ভাগ্য আমার নাই। কোন টেনশন নাই। কিছু না পেয়েও আমি যথেষ্ট শান্তিতে রাতে ঘুমাই। আমি ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী এবং সুখী মানুষ। সম্পদ মানুষকে সুখ দিতে পারেনা। সম্পদ মানুষকে স্বাস্থ্যও দিতে পারেনা। সুখী হবার জন্য ভালবাসতে হবে। নিজেকে এবং অন্যকে।
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা