আজ আমি রাজনীতি সম্পর্কে কিছু লিখবোনা। আজ আমি আমার সম্পর্কে লিখবো। খুব ব্যক্তিগত কথা লিখবো। যে কথা কারুরই জানা উচিৎ নয়। অথচ সবাই জানে। যে কথা সবাই জানে অথচ কেউ মানতে চায়না। যে কথা সবাই বলতে পারেনা শুধু মনে রেখে দেয় নিঃশব্দে। আমার বুকের ভেতর একটা কথার মেশিন আছে। যা থেকে নানা রকমের কথা তৈরি হয় অবিরত। সবার মনের ভেতর এই মেশিন আছে। কেউ নিজের কথা শুনতে পায় কেউ শুনতে চায়না কেউবা শুনেও না শোনার ভান করে। ব্যাস এই গোপন ও ব্যক্তিগত কথাই বলার ছিল।

আমার কথার মেশিনে আজ কি কি কথা বলেছে?
আজ বলেছে আজকে আমি আবার ওয়েদার চ্যানেল না দেখে বাইরে বেড়িয়ে গেছি। শীতের ভয়ে একখানা লেপ চাপিয়ে আর বাইরে যেয়ে দেখি সেকি গরম একেবারে ঘেমেনেয়ে অস্থির। আজ সারাদিন আমি রেগে ছিলাম। আমার কথার মেশিন চলছিল। কথা বলছিল। আমার কথার মেশিন যত কথা বলছিল ততই আমার রাগ হচ্ছিল। মেশিনটা এমনই। সেজন্য আমি হাটা ধরলাম। হাটলে মেশিনটা খুব স্পীডে বলে আমি শুনতে পাইনা। পথে যানবাহনের শব্দে আমি কথা শুনতে পাইনে।

আজ সারাক্ষণ বুকের ব্যাথাটা ছিল। এখনো আছে। আমি আজ সকালে যখন কাইরোপ্রাক্টিকের কাছে গেলাম তখন একটা পোস্টার দেখলাম। তাতে লেখা আছে এইগুলাঃ

আজকে ৪,৬৬০ জন আমেরিকান ডায়াবেটিস রোগী হিসাবে ধরা খাবে
মোটামুটি ৩০ মিলিয়ন আমেরিকান ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত
৮৬ মিলিয়ন আমেরিকানের প্রিডায়াবেটিস আছে (কানেকটিকাট থেকে জর্জিয়া পর্যন্ত যত জনসংখ্যার তার অর্ধেকেরও বেশী)
প্রতি বছরে ডায়াবেটিস ও প্রিডায়াবেটিসের খরচা ৩২২ মিলিয়ন ডলার
যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের চিকিৎসা খরচা অন্যান্য রোগের চাইতে ২.৩ মিলিয়ন বেশী
ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব। ব্যায়াম ও ডায়েটের মাধ্যমে

আমার এক বন্ধুকে আমি বলেছিলাম আমি হাসিখুশী থাকলে আমার হাফানি নিয়ন্ত্রনে থাকে । এটা শোনার পর থেকেই আমার বন্ধু সব সময় আমাকে রাগিয়ে দেয়। আমি যখন ডিপ্রেশনে ভুগছিলাম তখন আমার বন্ধু এমন কিছু করে বা বলে যাতে আমার ডিপ্রেশন বৃদ্ধি পায়। আমি কষ্ট পেলে আমার বন্ধু আনন্দ পায়। আমি সুখে থাকলে আমার বন্ধু হিংসা করে। আমি যেমনই থাকি আমার বন্ধু ভেবেই নেয় যে আমার দূঃখ আমার অসুস্থতা আসলে খুবই লেম অর্থাৎ বিদেশে আরামে থাকো তোমার আর কিসের অসুখ কিসের দুঃখ!! আমি আমার বন্ধুর এই অবজ্ঞা থেকে শিক্ষা নিয়েছি। যদিও যে আমাকে শিক্ষা দেবার জন্য বা ভাল করার জন্য অবজ্ঞা করেনি তবুও আমি যা শিখেছি তা হলো এত সুন্দর দেশে থেকে আসলেই আমার কোন দুঃখ, কস্ট,অসুখ থাকা উচিৎ না।

দেশ কিভাবে সুন্দর হয়?
দেশে যখন আইন তৈরি হয় মানুষের উপকারের জন্য।
মানুষের উপকার কিভাবে করা সম্ভব?
সবার জন্য এক আইন যদি হয় তাহলেই অপরাধের হার কমিয়ে আনা সম্ভব
মানুষের জীবন নিরাপদ করা সম্ভব
সবাই যদি আয়কর ঠিকভাবে দেয় তাহলে দেশে বিনা পয়সাই চিকিৎসা ব্যবস্থা করা সম্ভব। বিনা পয়সাই ভাল স্কুল সিস্টেম করা সম্ভব। সুন্দর রাস্তা, হাইওয়ে, ফ্লাইওভার করা সম্ভব। দেশকে নিরাপদ করা সম্ভব দেশের মানুষের জীবন নিরাপদ করা সম্ভব। সব কিছুই সম্ভব।
সুন্দর দেশ আকাশ থেকে পড়ে সুন্দর হয়ে উঠেনা। সুন্দর দেশ হতে গেলে সকল নাগরিককে আইন মেনে চলতে হয়। ধান্দাবাজী, মিথ্যাচার, ফাঁকি, স্বার্থপরতা এখানেও আছে। তবে ধরা খাইবার ব্যবস্থাও আছে। অনেকেই আয়কর ফাঁকি দেবার জন্য ক্যাশে চাকুরী করে। কর্মচারীদের ক্যাশে কাজে রেখে কোম্পানী বা দোকানের মালিকও কর্মচারীর জন্য প্রদেয় কর ফাঁকি দেয় এভাবে কতটূকু লাভ হয় বলি। এদেশে আয়কর না করে উপার্জন করে দেশে টাকা পাঠিয়ে সেই টাকা চলে যায় ঘুষে, ভারতীয় পন্যে, গরুর মাংসে, আলতুফালতু পন্য কিনে, টিভি সিরিয়াল দেখে অপচয় হয়। দেশে টাকা পাঠালে সে টাকা আবার বিদেশেই চলে যায়। অথবা এখান থেকে আয়কর ফাঁকি দিয়ে যদি দেশে টাকা জমানো যায় তাহলে আওয়ামীলীগের মন্ত্রীরা করের মাধ্যমে বা ব্যাংকের কর্মকর্তারা লুট করে সেটাকা গায়েব করে ফেলবে। তাহলে দেশ ও বিদেশ দুই জাগাই অসুন্দর থেকে যাবে।

আমাদের এখানে একবার ক্যাশে কাজ করা কর্মচারীদের উপরে চড়াও হয়েছিল সরকার। এবং দেখা গেছে সরকারী সমাজকল্যানের টাকা নিচ্ছে একটি পরিবার কানাডার সমস্থ প্রভিন্স থেকে। সমাজকল্যানের টাকা কানাডাতে যারা কাজ করে খায় তাদের আয়কর থেকে দেওয়া হয়। অর্থাৎ দেশ যদি সুন্দর করতে হয় তাহলে সবাইক কাজ করতে হবে। সবাইকে কাজ করতে হলে দেশে উৎপাদন শুরু করতে হবে। অর্থাৎ নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী নিজেদের পন্য নিজেরা উৎপাদন করলে বাইরে থেকে কেনা লাগবেনা। নিজেদের টাকা নিজেদের দেশে থাকবে। সঞ্চয়ের উপরে ভাল সুদ পেলে সবাই সঞ্চয় করতে উৎসাহী হবে আর ঋণের উপরে কম সুদ নিলে সবাই নানা রকমের ব্যবসা করতে উৎসাহী হবে। যে ছেলে ওমানের রাস্তা সাফ করছে সে ছেলে নিজের বাসার সামনে দোকান দিয়ে বসবে বা পৈত্রিক জমিজমাতে ক্ষেত খামার করে তা বাজারে বিক্রি করে খাবে। অন্যের রাস্তা সাফ না করে নিজের ভিটা সাফ করবে। সেটা সম্ভব না। সেটা লজ্বার বিষয় । আর সেটা সম্ভব না হলে দেশকে সুন্দর করাও সম্ভব না। দেশের পুলিশ আছে যারা মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে, টাকা চাইবে , টাকা না পেলে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলবে। শেষ। সেটাও একটা সৌন্দর্য। মৃত্যু হলো জীবনের সুন্দর ইতি। যদি ক্রসফায়ার সুন্দর না হতো তাহলে দেশের মানুষে এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতো। দেশের মানুষ এসব কিছু করেনা । সবাই বসে বসে বিদেশে যারা থাকে তাদের হিংসা করে অথবা তুচ্ছ তাছিল্য করে, ক্রিকেট খেলা দেখে দেশে নানা রকমের চাপাবাজী, ধান্দাবাজী, করে জীবনযাপন করে। বেশীরভাগ মানুষ উপরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট। নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করতে চায় রাতারাতি ফলে বছরের পর বছর জীবনযাপন অপরিবর্তিতই থেকে যায়।

বিদেশে যারা থাকে তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।
বিদেশে যারা থাকে তাদের ভোর উঠতে হয়, দৌড়াতে হয় কাজে, আর দৌড়াতে যেয়ে পা ভেঙ্গেও যেতে পারে, তখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে কাজে যেতে হয়, হুইলচেয়ারে করে কাজে যেতে হয়। মানুষ যতক্ষণ কাজ করে ততক্ষণই সুখে থাকে। ভাল থাকে। সুস্থ থাকে। আনন্দে থাকে।

বাংলাদেশে যারা সুখে আছে তার কিভাবে সুখে আছে?
এই সমীকরণের ভার আপনাদের উপরে ছেড়ে দিলাম।
লূট চলছে দেশে। যে যেভাবে পারছে যার কাছ থেকে পারছে ভয় দেখিয়ে, মিথ্যা বলে, ধাপ্পাবাজী করে, প্রতারণা করে, অথবা বন্দুকের নলের মুখে লুট করে খাচ্ছে। যারা সুখে আছে তারা ভাল লুটেরা সেজন্য যুখে আছে। যারা বিদেশে থাকে তাদের সুখের প্রতি ইর্ষান্বিত না হয়ে বাংলাদেশে যারা সুখে আছে তাদের প্রতি ইর্ষান্বিত হলেই সেটা যুক্তিযুক্ত হবে। ওরা যদি লূট না করতো তাহলে আপনি অভাবে থাকতেন না। ওরা আপনার সুখ ছিনিয়ে নিয়ে আপনাকে দুখী বানিয়ে নিজেরা সুখী হয়েছে সুতারাং ওদের হিংসার করুন, ওদের সুখে ছিনিয়ে নিন, ওদের সম্পদ ছিনিয়ে নিন একইভাবে যেভাবে ওরা আপনাদের সবার সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে গুটিকয়েক মানুষের মুঠির ভেতরে এই সম্পদ ধরে রেখেছে।

প্রথমে চিহ্নিত করুন ঃ কে আপনার শত্রু আর কে আপনার বন্ধু
প্রথমে ভেবে দেখুন ঃ কে আপনার ক্ষতি করছে আর কে আপনার উপকার করছে
একজন বাঙ্গালী যে নাকি ত্রিশ বছর বিদেশে থাকে সে আপনার ক্ষতি করছে নাকি সেইসব বাংলাদেশীরা যাদের সাথে ঘুষের আদানপ্রদান ছাড়া কোন কাজই হয়না তারা আপনার ক্ষতি করছে? অন্যায়ভাবে তারা আপনার টাকা কেড়ে নিচ্ছে । তারা আপনার প্রতিবেশী, তারা আপনার ঘরের আশেপাশেই বসবাস করে। আমি আপনাদের মাংস কেটে খাইনি। আমি আপনাদের রক্ত চুষেও পান করিনি। যারা আপনার রক্ত চুষে আপনি তাদের প্রতিদিন সালাম করেন।

ভেবে দ্যাখেন আমার কথার মেশিন ভুল বলেছে কিনা।
ও! বলতে ভুলে গেলাম। আমি আয়কর দেই। আনন্দর সাথেই দেই। কারণ আমি এই সুন্দর দেশে থাকি। আর এই দেশকে সুন্দর করে তুলতে আমার এই ছোট্ট অবদানের জন্য মনে মনে গর্বিত হই আর সেজন্যই আমি আমার সকল আয় স্বানন্দে ঘোষনা করে আয়কর প্রদান করি। আমাদের সরকার আমাদের প্রতিনিধি। আমরা সরকারকে বিশ্বাস করি।
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *