আসুন আজ নিয়ম ভাঙ্গি। এতদিন নিয়ম মেনেই তো চলেছেন। নিয়ম মেনে চলেও তো বাংলাদেশে ক্রসফায়ার থামেনি। বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যেয়ে গুম, হত্যা, ধর্ষন, কিছুই তো থামেনি। নিয়ম মেনে চলে ফার্মেসীতে ওষুধের দাম কমেনি। হাসপাতালে ডাক্তারদের অবহেলা বন্ধ হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনা কমেনি। নিয়ম মেনে চলে যখন কোন লাভ নেই তখন আসুন নিয়ম ভেঙ্গে ফেলি। কারণ আপনি যা কিছু নিয়ম ভেবে এতকাল মেনে এসেছেন সেই সব কিছুই ছিল চরম অনিয়ম। সেকারনেই আপনার দশাতে মশা পালাচ্ছে।
একুশ বাইশ বছর বয়স পর্যন্ত আপনি আপনার বাবামায়ের শরীরের শক্তি ক্ষয় করিয়েছেন। বাবা রক্তঘাম পানি করে আপনাকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। মা সারাদিন সংসারের ঘানি টেনে আপনার জন্য রান্না করেছেন । আপনি বড় হয়ে প্রেম করে বিয়ে করে বউ এনেছেন, অফিসে কাজ করেন, এখন আপনার মাবাবা বৃদ্ধ। আপনার বাবা যদি জিনস পরিধান করে হাটে আপনে হাসেন আপনার মা যদি স্লিভলেস ব্লাউজ পড়ে ফেসবুকে ছবি পোষ্ট করে সেটা আপনার চোখে বেখাপ্পা লাগে। এর কারণ কি? কোন কিতাবে লেখা আছে যখন আপনার জন্য পরিশ্রম করতে করতে আপনার বয়স ২১-৩১ হবে তখন আপনার মাবোন সবাইকে ফুল হাতা ব্লাউজ পরিধান করতে হবে? কোথায় লেখা আছে। আপনার চোখে এই নিয়ম কে বেঁধে দিয়েছে? আপনার মা ফুলহাতা ব্লাউজ কেনো পড়ে জানেন? আপনার জন্য রান্না করতে করতে, বাসন মাজতে মাজতে, কাপড় ধুইতে ধুইতে আপনার মায়ের সুন্দর হাত দুইটা বিশ্রী হয়ে গেছে সেজন্য আপনার মা ফুলহাতা ব্লাউজ পরে। আপনার মত একটি কান্ডজ্ঞানহীণ অবিবেচক স্বার্থপর ছেলেকে বড় করতে করতে জীবনের সকল সুন্দর ভোর, দুপুর, বিকেল সব ব্যয় করে এখন আপনার মাবাবা নিজেদের ভেতর নিঃস্ব,ভেঙ্গে গেছে শক্তি, দমে গেছে মন, শরিরে আর কুলায়না, হাজার অনিয়ম করার ফলে দিনে দিনে শরীরের কোষে কোষে এসে বসত করেছে হাজার রকমের অসুখ। কার জন্য? আপনার জন্য। আপনি দেখতে চান আপনার মা হিজাব লাগিয়ে সব ঢেকেঢুকে হাফাতে হাফাতে মেঝেতে শুয়ে আছে বা হাসপাতালে দৌড়াচ্ছে। এটা দেখতে চান আপনি। সেটাই নিয়ম। আপনার বয়স বিশ হলো অমনি আপণের মা বুড়ি হইল। দাতগুলা যর্দা, চুন, খয়ের দিয়ে নস্ট করে চুলগুলো পাকিয়ে, পেটের ভুঁড়ি বের করে কোন মত উঠে দাঁড়াবে আর এটাই নিয়ম – তাই না?
আর আপনের বউ সানগ্লাস চোখে দিয়ে সেলফি উঠিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট করে বান্ধবীদের সাথে পিকনিকে যাবে, মুভি দেখবে, নতুন নতুন গহনা কিনবে,সাজগোজ করে সবাইকে দেখিয়ে বেড়াবে – এই নিয়ম কোথায় লেখা আছে?
বয়স হয়ে গেলেই আর সুন্দর করে সেজেগুজে থাকা যাবেনা, সব ছেড়ে দিতে হতে আপনার জন্য কারণ আপনে একজন অবিবেচক,স্বার্থপর, অন্ধ, অসভ্য, বর্বর সময়ের হলমার্ক কার্ড। যার না আছে অন্তর না আছে অনুভূতি। রাস্তায় মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করলে আপনি ভাবেন পিকনিক হচ্ছে। তখন আপনি মোবাইল ব্যবহার করে বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের ছবি উঠিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট করে লাইক, কমেন্টের আশায় বরশি পেতে বসে থাকেন। আপনারা যারা ভীর করে মোবাইলে ছবি উঠান তারা সবাই মিলে মানুষটার জীবন রক্ষা করতে পারতেন। সেটার নিয়ম নাই সেজন্য মানুষের জীবন রক্ষা করার ব্যাপারে কোন চিন্তা ভাবনা করেন না আপনারা। নিজের মাবাবার যত্ন নেন না আর অন্য মানুষের জীবন বাঁচাবার জন্য তো এগিয়ে যাবেন না সেটাই স্বাভাবিক। নিজেই অপেক্ষা করছেন কবে আপনার মাবাবা মরবে কবে আপনি একটু আরামে কাপড়চোপড় খুলে সারাবাড়িতে দৌড়াইতে পারবেন। শুধু নিজের পেট আর পেটের নীচের জৈবক্ষুধা মিটিয়ে বিনোদনের জন্য আছে ভারতের দুইশত ক্যাবল টেলিভিশনে অপসাংস্কৃতি, ক্রিকেট আর লোক দেখানো দিবস পালন।
বাংলাদেশ একটি অসভ্য বর্বর দেশ। বাংলাদেশের যেকোন মাঠের দিকে তাকালে বা রাস্তার দিকে তাকালেই বুঝা যায় এই দেশে কত অসভ্য মানুষ বাস করে। যারা নাকি মাবোনকে ফুল হাতা ব্লাউজে দেখতে চায় তারাই রাস্তায় থুতু ফ্যালে, আবর্জনা ফেলে রাখে, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পেসাব করে, রাস্তায় মেয়েদের কাপড় খুলে নেয়, নারী ও শিশুকে ধর্ষন করে তারপর বলে ফুল হাতা জামা না পড়ার কারনেই আমরা শিশু ও নারীকে ধর্ষন করে থাকি। রাস্তায় নারীকে কুপিয়ে হত্যা করে, রাস্তায় নারীকে পিটিয়ে হত্যা করে। পাশের বাসা থেকে পুলিশ এসে ছেলেকে পিটাইতে থাকে সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দ্যাখে। বর্বরেরা নারীদের হিজাবে দেখতে চায় । সেদিন হিজাবী তনুর ধর্ষিত ও খন্ডিত লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ অফিসার বাবুলের বউ একজন হিজাবী মহিলা, তাঁকে তার শিশু সন্তানের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেদিন খাদিজা নামের একটি হিজাবী মেয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। তাহলে হিজাব কিভাবে এইসব মেয়েদের রক্ষা করলো? যারা হিজাবকে নারী নির্যাতন, ধর্ষন, ও হত্যা রোধের হাতিয়ার ভাবে তারা নিজেরাই কাপুরুষ, নিজেদের দেহে বল নাই, নিজেদের মনে শক্তি নাই সেজন্য সাড়া দেশে খুনীদের সালাম করে সামান্য একটুকরো কাপড় দিয়ে নারীকে ঢেকে প্রতিরক্ষার হাতিয়ার বানাতে চায়।
বর্বর, অমানুষ, স্বার্থপর, নীতিবিবর্জিত অবিবেচক মানুষগুলা এর থেকে বেশী আর কি ভাবতে পারে ? নিজেদের মুরোদ নাই কারুকে রক্ষা করার নিজেরাই মাবাবার জীবন খেয়ে এক একটা কুলাঙ্গার হয়ে এখন পুরা দেশে কানা সিকির মত ছড়িয়ে আছে সুতারাং এখন ভরসা কাপড়ের উপরে। যে যত যার উপরে কাপড় চাপাইতে পারবে সে তত ভাল হলমার্ক কার্ড হতে পারবে।
ধ্যানে রাখবেন আপনি আকাশ থেকে টপ করে ঝরে এত বড় চান্দা ব্যাটারী সেল হন নাই। আপনেরে বড় করতে দুইজন মানুষের জীবন ক্ষয়ে গেছে। ফিরে তাকান তাদের দিকে – বিনিময়ে কি দিয়েছেন তাদের? ফুলহাতা ব্লাউজ? নাকি সুন্দর স্বাস্থ্য যাতে তারা আপনার উপর নির্ভর না করে নিজেরাই নিজেদের জীবন যাপন করতে পারে। যাতে তাদের আফসোস না হয় – সন্তান জন্ম দিয়ে ভুল করেছি। সন্তান লালন পালন করে নিজের সময়, স্বাস্থ্য, সম্পদ সব উজার করে দিয়ে এখন ফতুর হয়ে সন্তানের গলগ্রহ হয়ে ভুল করেছি।
একজন আর একজনের উপরে দোষারোপ করে বেশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে দেশ। বিদেশীরা এটাই তো চায়। প্রজন্মের বর্বর, দুর্বল, স্বার্থপর কুলাঙ্গারেরা ঝুলে থাকুক মনগড়া নিয়মে আর লুটপাট চলতে থাকুক সারাদেশে।
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা