প্রতারণার ফাঁদ পাতা সাড়া বাংলাদেশে

দেওয়ালের কান আছে আর সেই কানে কান রেখে প্রতারক শুনে ফেলছে আপনার গোপন তথ্য । কাল দুপুরে সাদিয়া বাসস্টপে দাঁড়িয়ে তার মামাকে বলছিল বিকাশে করে কিছু টাকা পাঠাতে। বাসে উঠে সাদিয়া বাসা এসে রাত সাড়ে আটটার সময় +৮৮০ ১৭ ৬০৩ ৪৩৪৯ এই নম্বর থেকে একটা ফোন পায়।

এই ফোন থেকে সাদিয়াকে বলা হয় যে তার একাউন্ট দুইঘন্টার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

সাদিয়া অবাক হয়ে যায় । সে বলে না, না প্লীজ আপনি আমার একাউন্ট বন্ধ করবেন না। আমার টাকা আসছে সেটা উঠিয়ে আমার ভর্তির ফি জমা দিতে হবে।

লোকটা তখন বলে তাহলে আপনার কিছু তথ্য আমাকে জানান । এই কথা শুনে সাদিয়া সম্বিৎ ফিরে পায়। যে সে একজন প্রতারকের সাথে কথা বলছে।

ব্যাঙ্ক বা কোন ফাইনান্সিয়াল ইনস্টিটিউট কখনো টেলিফোনে তাদের গ্রাহকদের সাথে কথা বলবেনা। বলার কোন দরকার নেই কারণ যেকোন ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জন্য সেই ব্যংকে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া থাকে। ব্যাঙ্ক কর্মচারী কেনো এই তথ্য জিজ্ঞাসা করবে? প্রশ্নই উঠেনা। প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্টান তাদের ব্যবসার স্বার্থে গোপনীয়তা বজায় রাখে এবং সেনসিটিভ ইনফরমেশন গোপন রাখে। বাংলাদেশ ভর্তি প্রতারক। এমনকি ব্যংক কর্মকর্তারা গ্রাহকদের সঞ্চিত টাকা উঠিয়ে নিয়েছে এমন বহু ঘটনা ঘটে গেছে। যেকোন ব্যাঙ্ক বা এই ধরণের প্রতিষ্টান গ্রাহকদের গোপন তথ্য ফোনে বা ইমেইল এর মাধ্যমে আদানপ্রদান করেনা। ব্যাঙ্ক একাউন্ট খোলা ও বন্ধ করার জন্য গ্রাহককে ব্যাংকে যেতে হয়।

সাদিয়া প্রতারকের হাত থেকে বেঁচে গেছে।  সবাইকে সতর্ক করা যাচ্ছে যে এই ধরণের কোন রকম গোপন তথ্য ইমেইল বা মোবাইলের মাধ্যমে কারু সাথেই আদানপ্রদান করবেন না। কারণ আপনি জানেন না মোবাইলের পেছনে কে আছে বা ইমেইল আপনাকে কে পাঠিয়েছে। আমি প্রতিদিন বিভিন্ন ব্যংক থেকে টেক্সট মেসেজ পাই। বিভিন্ন প্রতিষ্টান থেকে টেক্সট মেসেজ ও ইমেইল পাই। টেক্সট মেসেজগুলো এমন থাকে

“ তোমার অমুক ব্যাংকের অমুক একাউন্টে অভারড্রাফট বা জমার চাইতে উঠানো বেশী হয়ে গেছে”

অথচ অমুক ব্যাংকে আমার কোন একাউন্ট নাই।

“ তুমি মোবাইলের বিলের রিফান্ড পাবে। অতিরিক্ত পেমেন্ট করেছো”
এই কথা পড়ার সাথে সাথে আমি আনন্দে আত্বহারা হয়ে যখনই ক্লিক করবো তখন ওরা জানতে চাইবে আমার এই রিফান্ড কোন একাউন্টে জমা হবে? তখন ওরা আমার ব্যাঙ্ক একাউন্ট বা ভিসা কার্ড নম্বর জেনে নিবে।

আমি জানি আমি কোন সময় অতিরিক্ত বিল পেমেন্ট করিনা। আমার বিল সব আগে থেকেই পেমেন্ট করার জন্য সেট আপ করা আছে। বিল পরিশোধের তারিখে ব্যাংকে থেকে টাকা মোবাইল কোম্পানীর কাছে চলে যায়। আমার সব বিল আমি আগে থেকে সেট আপ করে রেখেছি। সুতারাং কেউ যদি বলে আমি রিফান্ড পাবো তাহলে সেটা ভুয়া। সেই ইমেইল ফিসিং স্পাম phishing spam এবং এই ধরনের ইমেইল খোলা উচিৎ না।

আমি ইমেইল পাই আমাজন থেকে । বলা হয় তুমি যে প্রডাক্ট কিনেছো তা পেমেন্ট করার জন্য তোমার ক্রেডিট কার্ড ভেরিফাই করো। অথচ আমি কোন কিছুই কিনিনি। এটাও প্রতারণামূলক ইমেইল। আমি ইমেইল পাই পেপাল  থেকে। বলা হয় তোমার পেপাল একাউন্ট সীমিত করা হলো কারণ তুমি কেনাকাটা করছো অথচ টাকা দিচ্ছোনা। মজার বিষয় হলো আমার কোন পে্পাল একাউন্ট নাই।

এইভাবে দেখা যায় ইমেইল ও টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে প্রতারকেরা তৎপর হয়ে আছে প্রতারণা করার জন্য। আপনাকে সতর্ক হতে হবে। যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে হবে। যে ধরণের টেক্সট মেসেজ বা ইমেইল আসুক না কেনো যেহেতু আপনি জানেন আপনি কি করেছেন তাই এইসব মেসেজ দেখা মাত্র ডিলিট করে দেবেন। কেউ যদি ফোন করে এই ধরণের কথা বলে তাহলে তার নম্বর ব্লক করে দেবেন।

সতর্ক থাকুন যাতে প্রতারণার ফাঁদে না পড়েন। চার বছর আগে আমি একজন বিবাহ প্রতারকের কাছে প্রায় তিরিশ হাজার ডলার হারিয়েছি। এই বিবাহ প্রতারকের সম্পর্কে জানতে ফেসবুকের এই পাতায় ক্লিক করুন। সাড়া বাংলাদেশে প্রতারণার ফাঁদ পাতা আছে। অলস মানুষেরা প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জন করতে চায়।

সতর্ক থাকুন এবং প্রতারণার শিকার হবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *