ভাবছি সবাই যদি সত্য কথা বলতো তাহলে কেমন হতো? তাহলে অনেক লেনদেন হতোনা। অনেক স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতো। স্বপ্ন ভাঙ্গার বেদনা নিয়ে দিনগুলো ফিকে হয়ে যেতো। ভাবছি সবাই যদি মুখের উপর নানা রকমের মুখোশ না পরিধান করতো তাহলে কেমন হতো? এইসব মুখোশগুলো অদৃশ্য। মুখোশ বলতে যা বুঝায় তা হলো আসল চেহারার উপরে অনেক গুলো আবরণ যা দিয়ে মানুষ নিজের আসল রুপ ঢেকে রাখে। আসল রুপ দেখা গেলে আসল উদ্দেশ্য হাসিল হবেনা। বাইরে অনেক মানুষের সামনে যখন আমরা বের হই তখন এক রকম পোষাক পরিধান করি আর ঘরে যখন নিজের সামনে থাকি তখন অন্যরকম পোষাক পরিধান করি। বেশিরভাগ সময়েই বাইরে আমরা পরিপাটি পোষাক পরিধান করি। যখন আমরা বাইরের মানুষের সাথে কথা বলি তখন আমরা এক এক মানুষের জন্য এক একটি ভিন্ন আবরণ ব্যবহার করি। এই আবরণটিও নিখুঁত এবং পরিপাটি। এই আবরণের নিচে আসল চেহারা্টি সম্পুর্ন ভিন্ন। এত কিছু করার পরেও আমরা কেউ কেউ আমাদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে ব্যর্থ হই তখন আমাদের ভেতর আবরণ সংকট দেখা দেয়। আমরা যা কিছু পেতে চাই বা করতে চাই তা পেতে গেলে বা করতে গেলে কোন মিথ্যা বলতে হবে বা কোন আবরণ দিয়ে মুখে ঢাকতে হবে তা নির্ধারণ করতে ভুল করে ফেলি । তখন আমরা হতাশ হই। দুঃখ পাই। মিথ্যা বলতে দুঃখ পাইনা। আবরণ দিয়ে আমাদের চেহারা ঢেকে রাখতে আমাদের কোন সমস্যা হয়না কিন্তু যখনই এই মিথ্যা বা আবরণ কোন কাজে আসেনা তখনই আমরা দুঃখ পাই। হতাশ হই।
মিথ্যা বলা বা সঠিক আবরণটি ব্যবহার করাও একটি শিল্প বা আর্ট। অনেক সময় দেখা যায় ঠিকভাবে মিথ্যা বলতে পারছেনা এমন কেউ বা মুখের উপর থেকে আবরণটি বারে বারে খসে পড়ে যাচ্ছে এমন কেউ ঠিকই তার উদ্দেশ্য পুরণে সফল হচ্ছে। এর কারণ কি? এর কারণ হলো এই অদক্ষ মিথ্যুকের জন্য নির্দিষ্ট কিছু বাজারে নির্দিষ্ট কিছু চাহিদা রয়েছে তার অন্যসব গুন বা দক্ষতার কারণে। পুঁজিপতিরা যখন মধ্যস্বত্বভোগীদের ভেতর থেকে তাদের পদলেহনকারী দালাল বা পা চাটা কুকুর বেছে নেয় তখন তারা সব চাইতে অশিক্ষিত ও সব চাইতে অদক্ষ কুকুরটিকে বেছে নেয়। একজন অদক্ষ পদলেহনকারীকে বেছে নেবার কারণ হলো এরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই শারিরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল থাকে। মেধাহীনতার কারণে শিক্ষাগত অযোগ্যতা ও জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে অসফলতার ফলে পাচাটা কুকুর হওয়াটাই এদের একমাত্র পথ । যে পথে তারা শুধু টিকেই থাকবেনা বরং জনপ্রিয়তা নিয়েই টিকে থাকবে। পুঁজিপতিদের কাছে এরা সব চাইতে যোগ্য প্রার্থী কুকুর আর এদের কাছে পুঁজিপতিরা সব চাইতে প্রিয় প্রভু। পুঁজিপতিরা যখন এই কুকুরটিকে দালাল হিসাবে নিয়োগ করে তখন এই কুকুরটি বিশ্বস্থ্যতার সাথে প্রভুর সেবা করে । অন্যদিকে দেশের জনগন এই কুকুরটিকে যার যার নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করার সময়ে ধোঁকা খায়। ধোঁকা খাবার কারণ একটাই – তাহলো সকল মানুষই ক্ষমতাবানদের প্রতি দুর্বল ও নতমস্তক। ক্ষমতাবানেরা যেসব কুকুর নিয়োগ করে তাদের উপরও জনগণ দ্রুত আস্থা এনে ফ্যালে। আর একারণেই যুগ যুগ ধরে উপনিবেশিক শাসকেরা সফল হয়েছে এবং সাড়া বিশ্বে নিপীড়ন চালিয়েও অদ্যবধি সবার উপরে বসে কলকাঠি নাড়ছে।
কৈশরে আমার দেখা বাংলাদেশে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান যখন সাড়া দেশে হেটে হেটে খাল কেটে বেড়াচ্ছিলেন তখন বেশ মজার একটা ব্যাপার ঘটেছিল। মজার ব্যাপারটি লেখার আগে একটু ভূমিকা দেই। সরকার বদল হবার সাথে বাংলাদেশে অপরাধী হ্রাস পায়নি। কারন শেখ মুজিবের আমলে যেসব অপরাধীরা চুরি বা দুর্নীতি করতো তারা জিয়ার প্রতি আস্থা আনে এবং তাদের লুট, চুরি, দুর্নীতি চালিয়ে যায় । আজকে বাংলাদেশে যারা সম্পদশালী বা পুঁজিপতি তারা সব আমলেই সব সরকারের প্রতি আস্থা এনেই তাদের দুর্নীতি চালিয়ে যেতে পেরেছে ও জনগণের সম্পদকে হাতের মুঠিতে ভরে রাখতে পেরেছে। জিয়া খাল কেটে গেছে আর পাতাল থেকে আসা স্বচ্ছ পানিতে কুমীরেরা সাঁতার কেটেছে। আজকের সম্পদশালী ও পুঁজিপতিরা অতীতের ফকীর বা ছোটখাটো অপরাধী। মুজিবের আমলে যে রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা গ্রামে গ্রামে যেয়ে ছেলেদের হত্যা করেছে জিয়ার আমলে তারা সবাই বাংলাদেশ আর্মীর সাথে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এরা যেকোন সাধারণ খুনীর মত। একইভাবে একাত্তুরে যারা বিভিন্ন বাসাতে লুট করেছে, আগুন লাগিয়েছে, ধর্ষন করেছে তারাই একাত্তরের ষোলই ডিসেম্বরে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে আওয়ামীলীগে যোগ দিয়ে তাদের কাজ চালিয়ে গেছে। জিয়ার আমলের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানেরা সবাই অতীতের আওয়ামীলীগ, মুসলিমলীগ, জামাতে ইসলামের সদস্যরা । সরকার বদল হলে সেক্রেটারিয়েটের আমলাগুলা বদল হয়না। গুলি চালানো বা ঘুষ খাওয়া পুলিশের বদল হয়না। ওরা শুধু যে সরকার আসে তাদের প্রতি আস্থা আনে ও হুজুর হুজুর করে। অপরাধীরা সবাই যেহেতু বহাল তবিয়তে যার যার অবস্থানে থেকেই যায় তাই দেশে সরকার পরিবর্তন হলেও জনগনের অবস্থার পরিবর্তন হয়না। একটি দেশের সকল সম্পদের মালিক জনগন আর সেই সম্পদ যদি সেই দেশের অপরাধীদের মুঠিতে আবদ্ধ থাকে তাহলে জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্টিত হওয়া সম্ভব না। সম্পুর্ন নিরপেক্ষ ও সুষ্ট নির্বাচন হলেও সম্ভব নয়। জিয়ার আমলের মজার ব্যাপার সেটাই ছিল। শেখ মুজিবের আমলের কোন দুর্নীতির বিরুদ্ধে এইসব আমলা বা চোর, ডাকাত, ধর্ষক, খুনী, পুঁজিপতিরা সংগ্রাম করেনি। করার প্রশ্নই উঠেনা। শেখ মুজিবকে হত্যা করা হলে এরা সবাই মুখে নতুন মুখোশ এটে জিয়ার পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যায়। এখনও এরাই দাঁড়িয়ে আছে বর্তমান সরকারের পিছে।
সরকার প্রধান সবার সামনে মিথ্যা কথা বললেও কিছু যায় আসেনা। সবাই জানে, বুঝে, শুনে মিথ্যা এবং দ্যাখে মুখের উপরের আবরণ বারে বারে খসে পড়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছুই করতে পারেনা যেহেতু দেশের অপরাধীরা শক্তিশালী এবং সাইনবোর্ড হিসাবে জনগণের সামনে ঠোট নাড়াবার জন্য শক্তিশালী খুঁটিতে সরকারকে বেঁধে রেখেছে বা রাখবে। ভারত সরকার নির্বাচন করবে ভারতের স্বার্থে আর বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন অপরাধীরা সেই সরকারকে ধরে রাখবে তাদের নিজেদের স্বার্থে। জনগন একে অন্যের সাথে হানাহানিকাটাকাটি করে মরুক। মরছে। মরবে। সেটাই নিয়ম।