যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশিদের বহিষ্কারের চাঞ্চল্যকর তথ্য

স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় পাড়ি দিয়েও স্বপ্ন পূরণের পথ সুগম হলো না তাদের। এক বছরের বেশি সময় ডিটেনশন সেন্টারে কাটিয়ে হাত-কড়া পরাবস্থায় বাংলাদেশে ফিরতে হলো শূন্য হাতে। গত ৪ মাসের ব্যবধানে এমন পরিস্থিতির শিকার হলেন দুই শতাধিক বাংলাদেশি। এরা সকলেই বিএনপির কর্মী/সমর্থক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু কেউই প্রয়োজনীয় ডক্যুমেন্ট দেখাতে সক্ষম হননি যে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে তারা জীবন বাঁচানোর জন্যে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন এবং সেই দেশে পাঠিয়ে দিলে তারা মহাবপিদে পড়বেন। যুক্তরাষ্ট্র হোমল্যান্ড সিকিউরিটি তথা ইমিগ্রেশন দপ্তর এসব যুবকের বক্তব্যকে আমলে নেয়নি বলে সংশ্লিষ্টদের এটর্নিরা জানিয়েছেন। গত এপ্রিল মাসে শতাধিক বাংলাদেশিকে বিশেষ বিমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেটি ছিল ইমিগ্রেশন দপ্তরের চ্যালেঞ্জ। তারাও ভেতরে ভেতরে আশঙ্কা করেছিলেন যে, এরা নিজ দেশে ফেরার পর হয়তো সরকারের রোষানলে পড়বেন। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এবং কয়েকটি এনজিও’র মাধ্যমে এসব বাংলাদেশি যুবকের অবস্থানের ওপর গভীর পর্যবেক্ষণ রাখা হয়। কোন ধরনের সমস্যায় তারা পড়েননি। তারউপর এটি নিশ্চিত হয়েছেন যে, এরা কেউই বিএনপির লোক নন। সুন্দর ভবিষ্যতের লক্ষ্যে দালাল ধরে বিরাট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছিলেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের লক্ষ্যে মিথ্যা ঘটনার অবতারণা করেন। এ কারণে একইভাবে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় ইমিগ্রেশন-এজেন্টদের হাতে ধরা পড়া অন্যদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন ইমিগ্রেশন জজরা। তারই অংশ হিসেবে গত ২৫ জুলাই আরও ৪০ জনকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বিশেষ বিমানে। টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, আলাবামা, লুইজিয়ানা, আরিজোনা, পেনসিলভেনিয়া প্রভৃতি স্থানের ডিটেনশন সেন্টারে আরও ৭ শতাধিক বাংলাদেশি একই প্রক্রিয়ায় রয়েছেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। বহিষ্কার প্রসঙ্গে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এর মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘কেন তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সরকার কখনোই কোন কমেন্ট করে না, তবে বহিষ্কার না করার জন্যে যদি কোন উপায় থেকে থাকে, তার সুযোগ পুরোপুরি সংশ্লিষ্টরা পেয়ে থাকেন। সকলকেই যথেষ্ঠ সুযোগ দেয়া হয় যাতে তারা এহেন প্রক্রিয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।’ আইস বলেছে, ‘বহিষ্কারের চূড়ান্ত নির্দেশ জারির আগে একজন ইমিগ্রেশন জজের এজলাসে পরিপূর্ণ এবং যথাযথ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকের এসাইলাম প্রার্থনার গুরুত্ব বিবেচনা করে মাননীয় জজ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, তারা কোন ধরনের সুযোগ পাবার যোগ্য নন। এজন্যেই তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান আইন অনুযায়ীই আইস তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।’ প্রসঙ্গত, এর আগে আরও ১৬৫ জনকে একইভাবে বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশ পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরা সকলেই বিপুল অর্থ দালালকে দিয়ে বিভিন্ন দেশ ঘুরে মেক্সিকো হয়ে দুর্গম পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় গ্রেফতার হন। সাথে সাথে তারা নিজেদের বিএনপির কর্মী/সমর্থক দাবি করে এসাইলাম চান। এসাইলামের প্রাথমিক শুনানিতে কারোরই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় সকলকে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়। বছরাধিককাল ডিটেনশন সেন্টারে অবস্থান করে অতিষ্ট হয়ে তারা অনশন শুরু করেছিলেন। অনশনরতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হলেও অন্যদেরকে টেক্সাস থেকে ফ্লোরিডা, আলাবামা, লুইজিয়ানা, ক্যালিফোর্নিয়া, আরিজোনা, পেনসিলভেনিয়াসহ বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে নেয়া হয়। এখনও ৭ শতাধিক বাংলাদেশি বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে রয়েছেন। তারা সকলেই বিএনপির কর্মী হিসেবে এসাইলাম চেয়েছেন বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *