মালয় রিংগিতের লাগামহীন দরপতন চলছেই , ১ রিঙ্গিতে এখন ১৮ টাকা

মালয়েশিয়ান মুদ্রা রিংগিতের দরপতন চলছেই। এ নিয়ে বিপাকে আছেন মালয়েশিয়ায় কর্মরত পাঁচ লক্ষাধিক বাংলাদেশী প্রবাসী। রিংগিতের মান কমে যাওয়ায় দিনদিন কমে যাচ্ছে প্রবাসীদের আয়। গত এক বছর ধরে রিংগিতের দরপতন হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে। গেলো ১৭ বছরের মালয়েশিয়ায় রিংগিতের এমন দরপতন আর দেখা যায়নি।

১৯৯৮ সালের ৩১ আগস্টের পর থেকে এটাই রিঙ্গিতের সবচেয়ে বড় ধস। ৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে রিঙ্গিতের দাম ৩ দশমিক ৮০ হয়েছিল এবং ২০০৩ সাল পর্যন্ত সেটাই থাকে।২০০৩ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছিলো রিংগিতের দর। কখনো কখনো কমলেও সামান্য কমতো। তা হয়ত ক’দিন পর আবার বেড়ে যেত। সেই ২০০৩ সালে, মালয়েশিয়ার এক রিংগিতের বিপরীতে ১৫টাকা পাওয়া যেতো। এক দশকে তা বাড়তে বাড়তে ২০১৩ সালের দিকে সর্বোচ্চ ২৭ টাকা পর্যন্ত হয়েছিল।

২০১৫ সালে তা কমতে কমতে বর্তমানে (১৫ সেপ্টেম্বর’১৫) এক রিংগিতের বিপরীতে ১৭.৯৪টাকা হলো। তাতে প্রবাসীদের আয় অনেক কমে গেলো। দেশে টাকা পাঠিয়ে শান্তি পাচ্ছেন না প্রবাসীরা। স্বাভাবিকভাবে দেশে থাকা পরিবারের সদস্যরা প্রবাসীদের কাছ থেকে দিন যত যায় তত বেশি টাকা আশা করে। কিন্তু গত এক বছর ধরে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের বেলায় হচ্ছে তার উল্টোটা। যতো দিন যাচ্ছে টাকা পাঠানো কমছে। তার একমাত্র কারন রিংগিতের ধারাবাহিক দরপতন।

যে প্রবাসী এক বছর আগে এক হাজার রিংগিত পাঠালে দেশে ২৫হাজার টাকা পেয়েছেন, তা এখন পাচ্ছেন মাত্র ১৮হাজার বা এর চেয়েও কম। খুবই বিপাকে পড়েছেন মালয়েশিয়ায় প্রবাসীরা। কুয়ালালামপুরে অবস্থিত ন্যাশনাল ব্যাংকের রেমিট্যান্স হাউস ‘এনবিএল’ এর পরিসংখ্যান বলছে এ বছরের ১১জুন রিংগিতের বিপরীতে টাকার মান ছিলো ২০.৮০। ৮আগষ্ট ১৯.৭৯, আর চলতি মাসে (১৫ সেপ্টেম্বর’১৫) ১৭.৯৪ করে।

আগস্ট মাসের আট তারিখে ৯০০ রিংগিত পাঠিয়ে বাংলাদেশে পেয়েছেন ১৭,৬০১ টাকা, এর একমাস পর সেপ্টেম্বরের ১০তারিখে ৯০০ রিংগিত পাঠিয়ে দেশে পেয়েছেন মাত্র ১৫,৮৭৫টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ১,৭২৬ টাকা কম। পরের মাসে যেখানে বেশি পাঠানোর কথা, সেখানে উল্টো আরো কম। গত এক বছর এভাবে চলছে মালয়েশিয়ান রিংগিতের দরপতন।

প্রতিমাসে প্রতিদিনে কমছে মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের আয়। অন্যদিকে বাড়ছে মাসিক খরচ। রিংগিতের মান কমার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। তাই প্রবাসীদের থাকা-খাওয়ার খরচও বেড়েছে। শুধু চাকুরিজীবী নয়, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্য আমদামীকারী ব্যবসায়ীরাও রিংগিতের মান কমার ফলে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন।

আরেক দিকে গত ৩/৪ বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমানে তৈরিপোশাক রপ্তানি হচ্ছে মালয়েশিয়াতে। যাঁরা তৈরিপোশাকের ব্যবসায় আছেন তাঁদেরও সমস্যা হচ্ছে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে। কারন প্রতি মাসে দাম বাড়াতে হচ্ছে পণ্যের।

ব্যাবসায়ীরা বলছেন, বিদেশি ব্যংকগুলো স্থানীয় নোট ছেড়ে দিচ্ছে। চায়নার নিম্নমুখী অর্থনীতি এবং তেলের দাম কমে যাওয়ায় এটা উঠছে না।

সিঙ্গাপুর ডলারের বিপরীতেও রিঙ্গিতের দাম কমে গেছে। গত শুক্রবার ১ সিঙ্গাপুর ডলারের বিপরীতে রিঙ্গিতের মূল্য ছিলো ২ দশমিক ৯৬। যেটা এখন ২ দশমিক ৯৯।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া তথ্যমতে, ৩১ জুলাই মালয়েশিয়ার আর্ন্তজাতিক রিজার্ভ ছিল ৯৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, ১৪ আগস্ট এই পরিমাণ নেমে দাঁড়িয়েছে ৯৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে।

১২ thoughts on “মালয় রিংগিতের লাগামহীন দরপতন চলছেই , ১ রিঙ্গিতে এখন ১৮ টাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *