‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ – বলতে আপনি কি বুঝবেন

১৯৭২-৭৪ সালে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমান বিদেশী ত্রাণ আসে যুদ্ধবিধবস্ত বাংলাদেশের মানুষের জন্য যা লুট হয়ে যায় এবং ব্ল্যাকে বিক্রি হতে থাকে। সেই সময় আওয়ামীলীগের নেতা ও তখনকার রাস্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন – “আমার ডানে চোর, আমার বামে চোর, আমি যেদিকে দেখি শুধু চোর আর চোর। আমার কম্বল কই?”

শেখ মুজিবের আরো একটি বানী ছিল — “এতদিন তোরা খাইছস ওহন আমার পোলারা খাইব”

উপরের বানী ও নীচের বানীর সাথে সম্পর্ক ছিল মধুর। চুরি, ডাকাতি ও দুর্নীতিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল সেদিন। শেখ মুজিবের বিভিন্ন ভিডিও স্বাক্ষাতকার থেকে জানা যায় সেসময় শেখ মুজিব বিদেশের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন । সেসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার  বাংলাদেশকে  ‘তলাবিহীন ঝুড়ি‘ বলে আখ্যাইয়িত করেছিলেন। বাংলাদেশ নামক  ঝুড়ির তলায় ছিদ্র অর্থাৎ দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতির মাধ্যমে বাংলাদেশের সব সম্পদ চলে যাবে মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে (অহন আমার পোলারা খাইব)।

বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আসে মূলত দুইটি সেক্টর থেকে ঃ তৈরি পোষাক শিল্প ও প্রবাসে কর্মরত শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স।
তৈরি পোষাক শিল্প শ্রমিকদের অবস্থা সবার জানা আছে। উৎপাদনের সাথে সরাসরিভাবে যারা যুক্ত তাদের মজুরী এত কম যে ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে যায়। প্রবাসে কর্মরত শ্রমিকদের অবস্থা আরো শোচনীয় । যারা বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসে তারা অবহেলিত। বৈদেশিক মুদ্রা  বিদেশেই চলে যায় – কিছু পাচার আর কিছু বিদেশের পন্য ক্রয়ের মাধ্যমে।

বাংলাদেশের তৈরি পোষাক শিল্প শ্রমিকেরা কেমন আছেন?
বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকেরা কেমন আছেন?
কেমন আছেন মানব পাচারকারীদের প্রতারণার শিকার পাচার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশীরা?
আমরা কি এদের খবর রাখি? ভাগ্য বদলাতে যেয়ে মানবপাচারকারীদের ফাঁদে ধরা খেয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেক বাংলাদেশী। গত বছরের অক্টোবরে থাইল্যান্ড এমবেসীর মাধ্যমে জানা যায়, থাইল্যান্ডের জেলে প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশীকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। এদেরকে পাওয়া গেছে থাইল্যন্ডের জঙ্গলে। মালয়েশিয়া যাবার আশায় এরা বাংলাদেশ ত্যাগ করে কিন্তু যেয়ে পৌছায় থাইল্যান্ডে। থাই এমবেসীর চাপে কিছু বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ সরকার।

Thai_Jail

বিদেশীরা চাপ না দিলে বাংলাদেশ সরকার নড়াচড়া করেনা। বাংলাদেশের জলসীমা থেকে অনেক সময় বার্মিজ জল পুলিশে বাংলাদেশী জেলেদের ধরে নিয়ে যায় কিন্তু বাংলাদেশ সরকার কোন পদক্ষেপ না নেবার ফলে এইসব বাংলাদেশী জেলেরা বার্মিজ জেলে অযথা নির্যাতন ও অপমানের শিকার হয়।
সব চাইতে দুঃখজনক ঘটনা হলো বাংলাদেশীরা শিশু পাচার করা হয়েছে মালয়েশিয়াতে। শিশুদের সাথে যারা আছে তারা শিশুদের অভিভাবক নন।
মালয়েশিয়ার জেলে পাচার হয়ে যাওয়া শিশুরা

এ ব্যাপারেও বাংলাদেশ সরকারের কোন ভূমিকার কথা জানা যায়নি। বাংলাদেশের কোন পরিবার থেকে এইসব শিশু পাচার করা হয়েছে তা জানা যায়নি। এরা কি পথকলি? এরা কি এতিম শিশু? বস্তির শিশু? এরা যদি সুশীল সমাজের শিশু হতো তাহলে আমরা ফেসবুকসহ সাড়া বাংলাদেশের সকল মিডিয়ার মাধ্যমে এদের মাবাবার কান্নাকাটির ছবি দেখতাম। এরা যেহেতু কোন বিত্তশালী পরিবারের শিশু না তাই এদের হারিয়ে যাওয়ার বা পাচার হয়ে যাওয়ার খবর কেউ রাখেনা।

মালয়েশিয়ার জেলেও প্রচুর বাংলাদেশী আটকা পড়ে আছে। এটা মালয়েশীয়ার কিছু বাংলাদেশীদের জন্য একটা বাণিজ্যের পথে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। কারো ভাদ্রমাস কারো সর্বনাশ। এইসব আটকা পড়া বাংলাদেশীদের সাথে দেখা করে বা তাদের কাছ থেকে তাদের পরিবার পরিজনের ঠিকানা ও ফোন নম্বর নিয়ে এরা “আটকে পড়া বাংলাদেশী”কে ছাড়িয়ে দেশে পাঠাবার জন্য সহযোগীতা করবে বলে প্রচুর পরিমানে টাকা মেরে দিয়ে কেটে পড়ে। মালয়েশিয়াতে বসবাসরত কিছু প্রতারক বাংলাদেশীরা এই জেল বাণিজ্য করে প্রচুর টাকা কামায় করছেন।

শিশুসহ অগুনিত বাংলাদেশীরা এখন মালইয়েশিয়াতে বন্দী রয়েছে। বাংলাদেশে যেহেতু কাজ পাবার সুযোগ কম, আইন আদালত ও আইন শৃংখলারক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যরা নিজেরাই অপরাধের সাথে জড়িত তাই কাজের খোজে হন্যে হয়ে ঘুড়ে বেড়ানো সাধারণ মানুষগুলো খুব সহজেই মানবপাচারকারীদের প্রলোভন ও প্রতারণার শিকার হয়। অনেক মহিলা মানবপাচারকারী আছে যারা গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে যেয়ে মেয়েদেরকে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নেবার জন্য লোভ দেখায়। বিদেশে যেয়ে এরা যৌন হয়রানির শিকার হয়।

সেই ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত, এখনো বাংলাদেশ সেই তলাবিহীন ঝুড়িই রয়ে গেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের লোক সংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। গনহত্যা, হত্যা ও দুর্ভিক্ষে কিছু মানুষের মৃত্যু হয়েছে যার কোন সঠিক পরিসংখ্যান কেউ করেনি। ২০১৫ সালে লোক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ষোলো কোটির মত তার মানে দ্বিগুণ । প্রভাবশালী মহলের চুরি, ডাকাতি, চোরাকারবার, দুর্নীতির ফলে সেই বাংলাদেশ নামক ঝুড়ির তলের ছিদ্রটি এখন বিশাল আঁকার ধারণ করেছে আর যা কিছুই উপার্জন হচ্ছে তা এই বিশাল ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে প্রভাবশালী মহলের মুষ্টিতে যেয়ে জমা হচ্ছে।  বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কয়েদখানাতে বাংলাদেশীরা অমানবিক অবস্থায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে। তথাকথিত মুসলিম বিশ্বের মানবরুপী হিংস্র পশুদের যৌন লালসা ও নির্যাতণের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশী নারী শ্রমিকেরা যারা নিজ দেশের হিংস্র জানোয়ারদের হাতেই পাচার হয়ে গেছে। দেশে বা প্রবাসে যেখানেই হোক দরিদ্র বাংলাদেশী শ্রমিকেরা সব খানেই অসহায় । দেশপ্রেমিক সরকার না থাকার ফলে বাংলাদেশের অদক্ষ শ্রমিকেরা তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে মালিকের দ্বারা ও কর্মস্থলের বাইরে মানবপাচারকারীদের দ্বারা  প্রতারণা ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।

২ thoughts on “‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ – বলতে আপনি কি বুঝবেন

Leave a Reply to Aysha Khaled Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.