ঢাকা: উগান্ডার শিশুদের কাছে বই বা স্কুলের চেয়ে মাছ ধরার নৌকা আর জালই যেন বেশি পছন্দ। আর হবেই বা না কেন? মাছ ধরলে যে কিছু পয়সা পাওয়া যায়। এমনটাই জানিয়েছেন মালুবা নামে একটি ছোট মৎসজীবি গ্রামের ভিক্টরিয়া ভিউ একাডেমির শিক্ষক গ্রাসিয়াস ওমোন্ডি। তাদের স্কুলের তৃতীয় সাময়িক পরীক্ষার শেষ সপ্তাহ চলছে। তিনি শ্রেণিকক্ষে নিরবিচ্ছিন্নভাবে নজর রাখছেন। রংবিহীন শ্রেণিকক্ষে তার অনুসন্ধানী চোখ যেন ছাত্রদের খুঁজছে।
লেক ভিক্টরিয়া উপকূলের একটি ছোট্ট শ্রেণিকক্ষে তিনি প্রায় ১০ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছেন। পরীক্ষার এই সময়টাতেই আসলে ছাত্রদের যাচাই করা যায় যে তারা বিগত সপ্তাহগুলোতে তারা কি শিখতে পেরেছে। একটি গাঢ় সবুজ শার্ট এবং হাতে একটি লাঠি নিয়ে ওমোন্ডি ক্লাসে পাহারা দিচ্ছেন। আজ গণিত পরীক্ষা। তবে তিনি জানেন যে তার সামনে যে শিশুরা বসে আছে তাদের কারোরই এই বিষয়টার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক বা ভালবাসা নেই।
কিছুটা আক্রমণাত্মক স্বভাব থাকা সত্ত্বেও ওমোন্ডি খুব বিপদে পড়েছেন। কারণ মালুবায় পড়াশুনাকে ভালভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে না। সেখানে শিক্ষার পতনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ওমোন্ডি বলেন, ‘যখন সাময়িক শুরু হয়েছিল, তখন এই স্কুলে মোট দেড়’শ ছাত্র ছিল। কিন্তু আজ পরীক্ষা দিচ্ছে মাত্র ৩০ জন শিক্ষার্থী।’ হতাশভাবে মাথা নেড়ে তিনি নিজেকেই যেন প্রশ্ন করলেন আর ১২০ জন কোথায়?
মালুবা একটা ছোট্ট গ্রাম। আর ভিক্টরিয়া লেকের ওপরই এই গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাদের জীবিকা নির্ভরশীল। আর এই লেকে প্রচুর পরিমানে মাছ পাওয়া যায়। আর এতে বাসিন্দারা খুবই সন্তুষ্ট। তবে অর্থনীতির দিক দিয়ে তারা মোটামুটি স্বচ্ছল থাকলেও তাদের শিক্ষার মান একেবারে নিচু স্তরে পৌঁছেছে। খাতা কলম ফেলে মাছ ধরার জাল হাতে নেওয়া শিশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তারা হয়ত এটাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে আর্থিক স্বচ্ছলতা শিক্ষার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অধিকাংশ বাবা-মা উপকূল থেকে মাছ ধরেই ছেলেমেয়েদের বড় করছেন। ক্লাসরুমের ভেতরে কি হচ্ছে তা নিয়ে তাদের মনের মধ্যে মাঝে মাঝে হয়ত কিছু উদ্বেক প্রকাশ পায়। অনেক বাবা-মা চাননা তাদের সন্তানরা স্কুলে যাক। বরং তারাই বার বার সন্তানদের পড়াশুনা ছেড়ে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দেন।
ওমোন্ডির স্কুলে আসমান সিজেহ নামের এক ছাত্র ছিল। সেও স্কুল ত্যাগ করেছে। ১৪ বছরের এই কিশোরকে নিয়ে শিক্ষকদের অনেক ভরসা ছিল। তারা ভেবেছিলেন আসমানের কারণে আরো অনেক শিশুই স্কুলে ফিরবে।
কিন্তু তা হয়নি। আসমান তার বাবার পেশাকেই গ্রহণ করেছে। ক্লাসরুমে বসে পড়াশুনা করার চেয়ে তার কাছে মাছ ধরাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। ভাল রেজাল্টের চেয়ে আসমানের কাছে বড় স্বপ্ন হচ্ছে একটা কাটের নৌকায় উপকূলে ভাসিয়ে মাছ ধরা আর তা বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা। ঠিক তার বাবার মত।
তার মতে, ‘আমার বাবা-মা মাছ ধরেই আমাদের বড় করেছে। তারা খুব সুখী জীবন-যাচন করে। তাহলে আমি কেন স্কুলে যাব? মাছ ধরলে আমি অনেক টাকা পাই। যদি আমি বাসায় বা স্কুলে বসে থাকি তাহলে তো আমি অর্থ উপার্জন করতে পারব না।’ ওমোন্ডি জানিয়েছেন, আসমান খুব মেধাবী। সে পড়াশুনায় ভাল ছিল। কিন্তু সে স্কুলেই আর যায় না। আসলে ওই অঞ্চলের সব শিশুদের কাছে এখন বই নিয়ে বসে থাকার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মাছ ধরে টাকা কামানো। তাই নৌকা আর জালকেই তারা বইয়ের চেয়ে বেশি ভালবাসে।
Anowar Dhali liked this on Facebook.
probasnews24.com liked this on Facebook.
Laltu Hossain liked this on Facebook.