‘সেনাবাহিনীর মধ্যে জঙ্গিদের ছাঁকনি দিয়ে বের করার সময় এসেছে’

বাংলাদেশের চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর এক সুরক্ষিত ঘাঁটির ভেতর মসজিদে বোমা হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যে একজনকে এ পর্যন্ত আটক করার কথা স্বীকার করা হয়েছে বলা হচ্ছে সে নৌবাহিনীরই একজন কর্মচারী।
শুক্রবার পুলিশ জানিয়েছিল এই হামলার সময় স্থানীয় মুসল্লিরা মিজান নামে নৌবাহিনীর একজন ‘ব্যাটম্যানকে’ আটক করে পুলিশে দিয়েছিল।
সে ভূয়া শিক্ষাসনদ দেখিয়ে নৌবাহিনীতে চাকরি নিয়েছিল বলেও জানিয়েছিল পুলিশ ।
সুরক্ষিত সামরিক এলাকায় এধরণের হামলার ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে বর্ণনা করছেন অনেকেই।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এবং গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের পরিচালক মেজর জেনারেল আবদুর রশিদ বলছেন সামরিক বাহিনীরই একজন কর্মচারী সুরক্ষিত সেনা এলাকায় হামলার সঙ্গে জড়িত বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক, যদিও সন্দেহভাজন হামলাকারী ইউনিফর্ম পরা সেনা কর্মচারী নয়।
তিনি বলছেন এই ব্যক্তি অনেকদিন ধরেই নৌবাহিনীতে কর্মরত ছিল এবং যতদূর জানা যাচ্ছে সে প্রায় বছর তিনেক ধরে নৌবাহিনীতে কাজ করেছে। মিঃ রশীদ বলছেন তাকে যে জঙ্গীবাদে দীক্ষা দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
‘‘তবে এই তিন বছরের মধ্যে তার জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার বিষয়টা যে ধরতে পারা গেল না – সেটা অবশ্যই চিন্তার কারণ।’’
তিনি বলছেন ওই ব্যক্তি নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল প্রায় তিন বছর আগে। যে কাজে সে যোগ দিয়েছিল তার জন্যে সে ছিল ‘ওভারকোয়ালিফায়েড’।
‘‘সেক্ষেত্রে একজন ওভারকোয়ালিফায়েড ব্যক্তি যখন সেখানে স্বেচ্ছায় যোগদান করেছে – সেটাকে আমি গোয়েন্দা পরিভাষায় বলব – একধরনের ‘অনুপ্রবেশ’।’’
সামরিক বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে ‘ভেটিং’ বা যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া রয়েছে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুর রশিদ বলছেন তার মতে সেটা এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তিনি একথাও বলেছেন যে সাধারণত যারা ফাঁকি দেওয়ার কাজ করে তারা জানে কীভাবে এসব তথ্য সাজালে তা নিয়োগকারীদের চোখ এড়িয়ে যেতে পারে।

যেহেতু এখন দেখা যাচ্ছে সামরিক বাহিনীকে টার্গেট করে তার ভেতরেও ‘ইনফিলট্রেশন’ বা ঢোকার একটা চেষ্টা শুরু হয়েছে তাই মিঃ রশীদ মনে করছেন আগের তুলনায় এই যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া আরও শক্ত হাতে করা প্রয়োজন বিশেষ করে নিচের তলার গ্রেডগুলোতে।
‘‘আমার মনে হয় এই নিচের তলার কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্যগুলো আর হাল্কা করে দেখার সুযোগ এখন আর নেই।’’
‘‘এছাড়াও যারা বর্তমানে চাকরি করছে, তাদের বিষয়ে আবার নতুন করে খতিয়ে দেখতে হবে যে এরকম ফাঁকফোঁকর দিয়ে কতজন লোক এসে গেছে- আমার মনে হয় সময় এসেছে নতুন করে আবার ছাঁকনি দেবার।’’
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুর রশীদ মনে করছেন সামরিক বাহিনীকে টার্গেট করার পেছনে একটা কারণ আন্তর্জাতিকভাবে একটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করার বিষয়। তিনি বলছেন একটা সুরক্ষিত এলাকার ভেতরে কোনো হামলা করতে পারলে চিরাচরিতভাবে তারা জানে তারা সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে।
তবে তিনি বলছেন জঙ্গীরা এধরনের হামলার মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনের ক্ষমতা বোঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি মনে করেন না যে তারা এখনই এতটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে তারা এভাবে সরকারের পতন ঘটাতে পারবে।

২ thoughts on “‘সেনাবাহিনীর মধ্যে জঙ্গিদের ছাঁকনি দিয়ে বের করার সময় এসেছে’

Leave a Reply to Mh Symum Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.