বাংলাদেশি চিত্রশিল্পীর আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন

কামরুল হাসান জনি, ইউএই :
বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পরিচয়কে জানান দিতেই যেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে পা রেখেছেন ফরিদপুরের অন্বিকাপুর গ্রামের মোহাম্মদ আবদুল্লাহ রহমান। আমিরাতের জাতীয় দিবস উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার আবুধাবীর মাসদার ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ২ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ক্যালিওগ্রাফি প্রদর্শনীতে এবারও নিজের চিত্রকর্ম নিয়ে স্ব-গৌরবে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীদের মধ্যে তার স্টলটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গতবছরও আবুধাবীর দেলমা মলে আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে বিশ্বের ৩০টি দেশের মধ্যে তিনি বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। আন্তর্জাতিক ওই প্রদর্শনীতে স্থান পাই তার ১২টি চিত্রকর্ম ও ক্যালিওগ্রাফি। কাঠ খুঁদাই ও আর্ট কাগজে আঁকা তার শিল্পকর্ম স্থানীয় অ্যারাবিয়ানদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষ স্থান দখল করে নেয়। নিলামে বিক্রি হয়ে যায় সব চিত্রকর্ম। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। একান্ত প্রচেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হন একজন আন্তর্জাতিক শিল্পী ও ক্যালিওগ্রাফার হিসেবে। তার তুলির নিপুন আঁচড়ে ফুটে উঠেছে আরবের ইসলামী ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ইসলামী কালচার। পাশাপাশি মুসলিম স্থাপত্যকলার অনেক নিদর্শন। ইতিমধ্যে তিনি দু’টি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। যার সুবাদে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক চিত্রশিল্পীর খ্যাতি।

তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এইচএসসি পাশ করেই সংসারের হাল ধরতে পাড়ি জমান সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবীতে। সেখানে একটি কোম্পানীর অধিনে ক্যাটারিং সুপারভাইজার হিসেবে কাজে যোগ দেন। চাকরি করলেও তার মাথায় ঘুরপাক খেতো আর্ট ও ক্যালিওগ্রাফি। মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়া আবদুল্লাহ বিদেশের মাটিতে এসেও তাই মনের মধ্যে শিল্পী ও ক্যালিওগ্রাফার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।

একদিন তার সাথে পরিচয় হয় আমিরাতের প্রখ্যাত ক্যালিওগ্রাফার মোহাম্মদ মেনদীর। যিনি আবুধাবীস্থ শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদে ক্যালিওগ্রাফি এঁকে বিশ্ববিখ্যাত হয়ে আছেন। তাঁর কাছে তিন মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন আবদুল্লাহ। সারাদিন অফিসের খাটুনির শেষে বাসায় ফিরে বসে যেতেন রং আর তুলি নিয়ে। আঁকতেন মনের মাধুরী মিশিয়ে বিভিন্ন ক্যালিওগ্রাফি ও আমিরাতের ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ এবং ইসলামী ঐতিহ্যের চিত্রকর্ম। চেষ্টা আর সাধনায় একসময় তিনি দক্ষ আর্টিস্ট এবং ক্যালিওগ্রাফার হয়ে ওঠেন। বিচরণ করেন তার স্বপ্নের রাজ্যে এবং তৈরি করতে থাকেন চোখ ধাঁধানো চিত্রকর্ম ও ক্যালিওগ্রাফি।

অতঃপর তিনি ডাক পান সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে। বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করতে তাকে সহযোগিতা করেন আবুধাবীর এডুকেশন-এর ডিরেক্টর হামেদ আল দাহেরী। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ‘আবুধাবী এডুকেশন কাউন্সিল’ চিত্রকর্ম ও ক্যালিওগ্রাফির জন্য পুরস্কৃত হন। তাকে দেয়া হয় ‘টেলেন্ট অব আর্টিস’ খ্যাতি।

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘আবুধাবীস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সহযোগিতা পেলে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেগুলোতেও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মান বয়ে আনার চেষ্টা করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে দেশে গিয়ে একটি আর্ট স্কুল চালু করার ইচ্ছে আছে। যেখানে লেখাপড়া বঞ্চিত, অবহেলিত এবং অসহায় গরীব শিশুদের বিনা পয়সায় আর্ট ও ক্যালিওগ্রাফি শেখানো হবে।’

৩ thoughts on “বাংলাদেশি চিত্রশিল্পীর আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন

Leave a Reply to Sumon Aminul Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.