বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী সপ্তাহে লন্ডনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি সমাবেশে বক্তৃতা করবেন। যদিও এর তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি, তবু এই মর্মে আভাস দেয়া হচ্ছে যে, আগামী ২৭ অক্টোবর অথবা ৩০ অক্টোবর এ সমাবেশ হতে পারে। এই সমাবেশকে ঘিরে ইতিমধ্যে লন্ডন ছাড়াও বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে বেশ কৌতুহল দেখা দিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনের এই সমাবেশে দেশের রাজনীতি নিয়ে বক্তব্য রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এতে দিক-নির্দেশনামুলক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যও থাকতে পারে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনে আছেন এক মাসের বেশি সময় ধরে। চোখের চিকিৎসা আর ছেলে তারেক রহমানসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে দেখা করাই তার সফরের মূল উদ্দেশ্য বলে দলের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে বার বার বলা হয়েছে। তারপরও শুরু থেকেই তার এই বিদেশ সফর নিয়ে রাজনৈতিক সচেতন মহলে নানা কৌতুহল ছিলো। শুরু থেকেই অনেকেই একে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সফর হিসেবে আখ্যা দিচ্ছিলেন। এমনকি সেখানে বিদেশিদের মধ্যস্থতায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে একটা সমঝোতা হতে পারে, এমনও পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। উল্টো, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি এবং বিদেশি নাগরিক হত্যার জন্য বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চলেছে। তার মধ্যেই বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন এ সমাবেশ করতে যাচ্ছেন। মধ্য লন্ডনের কোনো সভাগৃহে বিএনপি নেত্রী দলীয় ওই সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।
এই সমাবেশের আয়োজন করছে বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখা। যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতারা এই সমাবেশকে সফল করার জন্য জোরশোরে প্রস্তুতি চালাচ্ছেন। গত মাসে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের মতো যাতে সভায় কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় তার জন্যও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের আন্দোলন চলাকালে তার গুলশানস্থ কার্যালয়ে একাধিকবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। এরপর একবারই তিনি আনুষ্ঠানিক বক্তব্য রাখেন, আর তা হলো গত ২৬ এপ্রিল। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষ্যে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তারপর এই দীর্ঘ সময়ে প্রস্তুতি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য রাখেননি বিএনপি চেয়ারপারসন। এরমধ্যে বেশ ক’টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তৈরি হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটেই লন্ডনের সমাবেশটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, লন্ডনের এই সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে বিএনপি যথাসম্ভব গোপনীয়তা বজায় রাখতে চাইছে। তার কারণ হলো আওয়ামী লীগের দিক থেকে সভা ভন্ডুলের চেষ্টার আশঙ্কা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শেষ দুটো লন্ডন সফরে যেমন বিএনপি তার হোটেলের সামনে বা এয়ারপোর্টে লাগাতার বিক্ষোভ দেখিয়ে তাকে নাজেহাল করেছে। আওয়ামী লীগ তার বদলা নিতে চাইবে এই আশঙ্কা আছে ষোলো আনাই। আর ঠিক সে কারণেই তারা সভাস্থল এখন অবধি ঘোষণা করতে চাইছেন না যাতে আওয়ামী লীগ লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিক্ষোভের আগাম অনুমতি পর্যন্ত না নিতে পারে।
বিএনপির একটি শীর্ষস্থানীয় সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছেন, সভাটি হবে সেন্ট্রাল লন্ডনের কোনো সভাগৃহে। লন্ডনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রায় সব সভাই হয়ে থাকে পূর্ব লন্ডনে। যদিও ওই অঞ্চলটি প্রধানত জামায়াতে ইসলামী অধ্যুষিত বলেই পরিচিত। ইস্ট লন্ডন মসজিদ অর্থাৎ লন্ডন মুসলিম সেন্টারকে কেন্দ্র করে ওই অঞ্চলে জামায়াত সমর্থকদের কর্মকাণ্ড যেমন বিশাল, প্রভাবও তেমনি সমীহ করার মতো।
কিন্তু বিএনপি নেত্রী তার এবারের লন্ডন সফরে জামায়াতের কাছ থেকে রীতিমতো দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন, তাই যুক্তরাজ্য বিএনপিও চাইছে না লন্ডনে জামায়াতের নাকের ডগায়, তাদের খাস তালুকেই খালেদা জিয়া কোনো জনসভায় ভাষণ দিন। তাছাড়া পূর্ব লন্ডনে আওয়ামী লীগের পক্ষেও তাদের সমর্থকদের জড়ো করা তুলনামূলক সহজ, সে কারণেই জনসভাটি সেন্ট্রাল লন্ডনে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য বিএনপি। আর তাতে সায় দিয়েছেন তারেক রহমানও।
আসলে যেহেতু খালেদা জিয়ার এবারের লন্ডন সফরের ঘোষিত উদ্দেশ্য হলো চিকিৎসা আর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো । তাই তিনি আদৌ কোনো রাজনৈতিক সভায় ভাষণ দেবেন কি-না এটা নিয়ে তিনি নিজেও যথেষ্ট দ্বিধার মধ্যে ছিলেন। লন্ডনে বিএনপি নেতাকর্মীরা অবশ্য আগাগোড়াই চাইছিলেন নেত্রী বিশাল একটি সভায় ভাষণ দিন, কিন্তু খালেদা জিয়া নিজেই সে ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখাননি।
অবশেষে ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কোরবানির ঈদের দিন লন্ডন শহরতলির ফেয়ারলপ এলাকায় যুক্তরাজ্য বিএনপি যে শুভেচ্ছা বিনিময় সভার আয়োজন করেছিল তাতে খালেদা জিয়া আসতে রাজি হন। তার বক্তৃতায় যথারীতি রাজনীতির প্রসঙ্গও এসেছিল, কিন্তু সেদিন তার ভাষণকে ছাপিয়ে গিয়েছিল সভায় দলের নেতাকর্মীদের একাংশের তুমুল হৈচৈ আর বিশৃঙ্খলা। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের কথা তো বাদ, তারেক রহমান পর্যন্ত বারবার অনুরোধ করেও ওইসব কর্মীকে থামাতে পারেননি, যে কারণে খালেদা জিয়া নিজেও অসম্ভব বিরক্ত হয়েছিলেন।
এরপর লন্ডনে তিনি যে আবার কোনো জনসভায় ভাষণ দিতে রাজি হবেন, সেটা কিন্তু অনেকেই ভাবতে পারেননি। কিন্তু কী এমন হলো যে বিক্ষোভের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও খালেদা জিয়া একটি রাজনৈতিক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে আসতে রাজি হয়ে গেলেন?
এ প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাজ্য বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা জানান, নানা কারণে নেত্রীর লন্ডন সফর দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তার ঢাকা ফেরার টিকিট দুই দুইবার পেছানো হয়েছে এর মধ্যেই। আর সেটা ডাক্তারদের পরামর্শেই। ছেলে, বৌমা-নাতনির সঙ্গেও আর কিছুদিন সময় কাটাতে চাইছেন তিনি। কিন্তু মুশকিল হলো, এটার ভুল ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নানা ধরনের দুরভিসন্ধিমূলক প্রচার শুরু করেছে। সেটির জবাব দিতেই বেগম জিয়া মত পাল্টেছেন এবং তিনি এখন এই জনসভায় ভাষণ দিতে রাজি হয়েছেন।
অর্থাৎ কারণটা স্পষ্ট। ঢাকায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতামন্ত্রীরা যে ইতোমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন খালেদা জিয়া আর লন্ডন থেকে ফিরবেন না কিংবা বিদেশের মাটিতে বসেই তিনি বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরির ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন তার জবাব দেয়ার জন্যই লন্ডনে জনসভাকে বেছে নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এখন তিনি এগুলোর কী জবাব দেন সেটি দেখার বিষয়।
তাছাড়া দল পুনর্গঠনের যে কার্যক্রম চলছিলো এর পাশাপাশি নতুন আরেকটি ইস্যু এসে দাঁড়িয়েছে, আর তা হলো- দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচন নিয়ে কিছুটা তৎপরতা শুরু হলেও কেন্দ্রীয় নেতারা একেবারেই অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন। বিএনপি আদৌ এ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাও এখন পর্যন্ত পরিষ্কার নয়। মনে করা হচ্ছে, লন্ডনের সমাবেশে বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এই ইস্যুটিতেও দলের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এমনকি বেগম খালেদা জিয়া কবে দেশে ফিরবেন তাও এই সমাবেশের পরই বোঝা যাবে। লন্ডনে ছেলের বাসভবনে ওঠার পর থেকে খালেদা জিয়ার সমস্ত দেখাশোনা করছেন তারেক রহমান। আর তার চিকিৎসার যাবতীয় তদারকি করছেন পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান। তিন নাতনি আর স্বজনদের নিয়ে সময় কাটছে খালেদা জিয়ার। একচোখে অপারেশন সম্পন্ন হলেও আরেক চোখ বাকি রয়েছে। সেটিও করাতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। এরপরে পায়ের চিকিৎসাও করাতে পারেন খালেদা জিয়া। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর।
Shahin Miah liked this on Facebook.
Masum Bangla liked this on Facebook.
Md Azizul liked this on Facebook.
Rezina Akhter liked this on Facebook.
Arif Uddin liked this on Facebook.
Moin Ahmed liked this on Facebook.
Md Liton liked this on Facebook.
Ahad Khan liked this on Facebook.
Mohammed Shakur liked this on Facebook.
Iqbal Cool liked this on Facebook.
Ariful Islam Jony liked this on Facebook.
Shareef Rasal liked this on Facebook.
Raju Ahammed liked this on Facebook.
Shahadat Hossian liked this on Facebook.