যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে মধ্যবর্তী নির্বাচনের লক্ষে ঢাকায় আসছে ইইউ’র শক্তিশালী প্রতিনিধি দল

নতুন করে এক উপদ্রব শুরু হয়েছে সরকারের জন্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্যুতিয়ালি- এই মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে সরকারের সাথে দেন দরবার। যদিও সরকার প্রকাশ্যে মুখ খুলে কিছুই বলছেনা কিন্তু ঈদ এবং নানা বাহানায় সরকারের একডজন মন্ত্রীর ইউরোপ আমেরিকা এক সাথে সফর আর উল্টো ঢাকায় ইউরোপীয় মন্ত্রী আর নীতি নির্ধারকদের সফর সেই সম্ভাবনার ক্ষেত্রকে সামনে এগিয়ে নিয়ে এসেছে।

বলা হয়ে থাকে আজকের যুগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দাবীকে খুব একটা গুরুত্ব কেউ দেয়না। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি খোদ মার্কিনীদের পরামর্শে মাঠে নামে- তখন প্রশ্ন ভিন্ন হয়ে দেখা দেয়। আর বর্তমানে সরকারের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেন-দরবার সেটাই সরকারকে এখন অশ্বস্তিতে রেখেছে। সারা বিশ্ব থেকে এতো স্বীকৃতি সব ঢাকা পড়ে যায় একজন মাত্র ইটালিয়ানের আকস্মিক হত্যার ঘটনায়। সরকারের সকল ছক যেন উলট-পালট করে দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনীতিতে যারা দেন-দরবার বা লবিস্ট হয়ে কাজ করে থাকেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনের সাথে কথা হলো সদ্য।

সেই সূত্রেই জানা গেলো, অক্টোবর মাসের ১ তারিখ থেকে ৫ তারিখের ভিতরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধিদল যাচ্ছে বাংলাদেশে। আবার তাদের ফেরত আসার পর পরই আক্টোবরের ১৫ থেকে ২১ তারিখের ভিতরে কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরে যাবে। দুটি প্রতিনিধি দলই মার্কিনীদের সবকে ঢাকা যাচ্ছে। উদ্দেশ্য- সকলের অংশগ্রহণে একটি স্বচ্ছ ও অংশ গ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য আলোচনা। সূত্র জানালেন, ভারত যদিও বিএনপিকে এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি পুরোপুরি সার্টিফিকেট দেয়নি, তারপরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবীকে একেবারে হেলাফেলা করেও দিতে পারছেনা।

মার্কিনীদের কাছে ভারতীয়দের যে বুঝাপড়া, সেই বুঝাপড়াতে বাংলাদেশের স্বচ্ছ মধ্যবর্তী নির্বাচন একটা বার্নিং ইস্যু হয়ে টেবিলের মধ্যে ঘুর পাক খাচ্ছে। নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের প্রেক্ষিতে আর দুই নেত্রীর সাথে পজিটিভ ১৫ মিনিটের আলোচনার সূত্রে অনেকটা মোদীর গ্রিন সিগন্যালেই হচ্ছে সরকারের মন্ত্রীদের ইউরোপ সফর- ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সাথে বুঝা পড়া করার জন্য। সেই বুঝা পড়ার ফলাফল থেকেই এই দুই উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের রোড ম্যাপ নির্ধারিত হয়েছে। ইউরোপীয় কমিশন চায় নির্বাচনের রোড ম্যাপ আদায় করতে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, কমিশন বিএনপির দাবী নিয়ে মাঠে।

রাজনীতির দাবা খেলায় বিএনপি না চাইতেই তাদের দাবী নিয়ে ইউরোপীয় কমিশন মাঠে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অক্টোবরের ৩ থেকে ১২ তারিখের ভিতরে এই দুই প্রতিনিধিদলের সমন্বয়কের সাথে একটি মিটিং করবেন বলে নির্ধারিত হয়েছে। কিন্তু সূত্রের মতে, দুই পক্ষের কেউই এই মিটিং এর কথা স্বীকার করছেনা- বোধগম্য কারণে। একটা বিশ্বস্ত সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিএনপি নেত্রীর নির্ধারিত লন্ডন সফর সে কারণে অনেকটাই বিলম্ব হয়ে যাচ্ছে। এই অনির্ধারিত মিটিং সামনে চলে আসায় এবং কনফার্ম হওয়ার কারণে আউটকাম জেনে নিতে চান তিনি। লন্ডনে উপস্থিত থাকলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইউরোপীয় কমিশনের ঐ প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের আগে ব্রিফ করতে সহজ হবে, যা ঢাকা থেকে দেয়া অনেকটাই দুরহ হবে।

ইতালিয়ান নাগরিকের হত্যা রাজনীতির গতিপথে নতুন এক মাত্রা এনে দিয়েছে। লন্ডনে দুই দলের দুই নেতার মিশন কোনো কারণে ব্যর্থ হলে বা সামান্যতম সম্ভাবনা বা আশার আলোর কোন পথ রেখা দেখা না গেলে, সরকারের আইএস ইস্যুতে হার্ড লাইনে গেলে বিএনপির জন্য রাজনীতি কঠিন হয়ে গেলেও নতুন বিএনপির মাধ্যমে হলেও পুরনো ছকের খেলায় সরকার আগাম নির্বাচনে চলে যাবে। না হলে সব কিছু সরকারের নাগালের বাইরে চলে যাবে- ভারতীয় এমন সিগন্যাল সরকারকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ইতালিয়ান নাগরিকের হত্যার সাথে ইউরোপীয়ান কমিশনসহ ব্রিটিশ, মার্কিনী আর পূর্ব ইউরোপের রাষ্ট্র সমূহ এমনকি অস্ট্রেলিয়া কানাডা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটা স্বাভাবিক কূটনীতির লক্ষণ নয়, সরকার ভালো করেই জানে।

শুধুমাত্র ভারতের উপর নির্ভরশীল হয়ে বন্ধুহীন হয়ে ইমেজহীন রাষ্ট্র নিয়ে চলাচল করাটাও অনেক দুষ্কর। তাছাড়া ভারতও এখন আর আওয়ামী লীগের জন্য আগের অবস্থানে নেই। একটি রাজনৈতিক পলিসি মেকার সূত্র দাবী করেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিনীদের মধ্যস্থতায় ভারতকে আগাম নির্বাচনের জন্য রাজি করা গেলেও বিএনপি এখনো অগোছালোই রয়ে গেছে। ইতালিয়ান নাগরিকের আকস্মিক হত্যাকাণ্ড না হলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জাতিসংঘে বাংলাদেশের অর্জন দিয়ে সরকার আরো অনেকদিন ভালো একটা ফর্মে থাকতে পারতো।

কিন্তু, এখন সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। নির্বাচন যে একটা এগিয়ে এসে হয়ে যাবে- সেটার আলামত ভেতরে ভেতরে শুরু হয়ে গেছে। আওয়ামীলীগের কাউন্সিল ডিসেম্বরে হয়ে যাবে, সরকার সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিরোধীদল এখনও কৌশল নির্ধারণ করতে না পারলেও তাদের হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সামনে চলে এসেছে। সুতরাং আগাম নির্বাচনও চলে আসছে সামনে। সরকারের ভিতরেও এখন সেই চিন্তা নিয়ে কাজ চলছে নীরবে বলে জানা গেছে।

এ আর




১৪ thoughts on “যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে মধ্যবর্তী নির্বাচনের লক্ষে ঢাকায় আসছে ইইউ’র শক্তিশালী প্রতিনিধি দল

Leave a Reply to Rizwan Mahmud Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.