যৌন হয়রানিতে বাধা দেয়ায় বাবা মেয়ে খুন

খুলনা: যৌন হয়রানিতে বাধা দেয়ায় খুলনায় লিটন নামের বখাটে যুবক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানাকে (২৬) ধর্ষণ ও খুনের পরিকল্পনা করে মাস খানেক আগে। পরিকল্পনা মোতাবেক লিটনের নেতৃত্বে পাঁচ যুবক গত শুক্রবার রাতে পারভীন সুলতানার বাসায় ঢোকে। আগে ওই কর্মকর্তার বৃদ্ধ বাবা ইলিয়াসকে হত্যা করে। এরপর পারভীনকে পাঁচজন মিলে ধর্ষণ শেষে গভীর রাতে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

খুলনায় ব্যাংক কর্মকর্তা মেয়ে ও বৃদ্ধ বাবা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া মূল আসামি লিটন সোমবার দুপুরে আদালতে ৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছেন।

জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) মুখপাত্র এডিসি মনিরুজ্জামান মিঠু।

জবানবন্দি শেষে খুলনা মহানগর হাকিম আয়শা আক্তার মৌসুমীর আদালত লিটনকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত লিটন খুলনা নগরীর বুড়ো মৌলভীর দরগা এলাকার বাসিন্দা। সে ঢাকায় সদরঘাট এলাকায় জুতার দোকানে চাকরি করে। এলাকায় সে বখাটে ও মাদকসেবী হিসেবে পরিচিতি।

এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে খুলনা নগরীর বুড়ো মৌলভীর দরগার পাশে ৩নং সড়কের বাসায় ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানা ও তার বৃদ্ধ বাবা ইলিয়াসকে হত্যা করা হয়। রাতেই পুলিশ বাড়ির সেফটিক ট্যাংক থেকে মেয়ে ও বাবার লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে নিহত পারভীনের বড় বোন নার্গিস মামলা দায়ের করেন।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান মিঠু জানান, ২০ সেপ্টেম্বর রাতে গল্লামারি এলাকা থেকে লিটনকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করে।

সহকারী পুলিশ কমিশনার আরো জানান, সোমবার দুপুরে লিটনকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে সে মহানগর হাকিম আয়শা আক্তার মৌসুমীর খাস কামরায় জবানবন্দি দেয়।

পুলিশের তদন্ত আর লিটনের জবানবন্দি থেকে জানা গেছে, অনেক আগে থেকেই বখাটে লিটন ও তার সহযোগীরা রাস্তায় পারভীনকে উত্যক্ত ও বিভিন্ন অশালীন কথা বলতো। কয়েক মাস আগে পারভীন অফিসে যাওয়ার পথে মৌলভীর দরগা সেতুতে উঠলে লিটন তার ওড়না ধরে টান দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পারভীন নিজের হাতে থাকা টিফিন ক্যারিয়ার দিয়ে তাকে আঘাত করেন। এতে বখাটে লিটন ক্ষিপ্ত হয়। এরপর মাস খানেক আগে তারা পারভীনকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী তারা তাকে অনুসরণ করতে থাকে।

ঘটনার দিন ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার দিকে লিটন স্থানীয় আরো চারজনকে নিয়ে মই দিয়ে দেয়াল পেরিয়ে পারভীনের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। দরজা খোলা থাকায় তারা ঘরে ঢুকে প্রথমেই বাবা ইলিয়াসকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। তার চিৎকারে মেয়ে পারভীন এগিয়ে গেলে তাকে বিবস্ত্র করা হয়। এরপর গণধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে ঘরের বাইরে সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে ফেলে লাশ গুমের চেষ্টা করে তারা।

বিকেল ৪টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটনোর পর যাওয়ার সময় আলমারি থেকে তারা নগদ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরে এ টাকা ভাগাভাগি করে যে যার মতো চলে যায়। এর মধ্যে অন্য চারজন আত্মগোপন করলেও লিটন পুরো বিষয়টি নিয়ে অনেকটা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে।

জবানবন্দিতে লিটন আরো জানায়, পারভীন সুলতানাকে ধর্ষণের সময় তারা মোবাইলে চিত্র ধারণ করেছে। পুলিশ সেই ভিডিওচিত্র উদ্ধার ও বাকি চার আসামির সন্ধানে অভিযান চালাচ্ছে। কম্পিউটারটিও তারাই চুরি করেছে বলে স্বীকার করেছে লিটন।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এক ভাই আর তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট পারভীন। তিনি দুই বছর আগে এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। গত বছর ঈদুল আজহার পরে ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কর্মরত মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার আশিকুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। চাকরির কারণে পারভীন খুলনায় বাবা ইলিয়াসকে নিয়ে বড় বোন নার্গিসের বাসায় থাকতেন। ওই বাসার সেপটিক ট্যাংকেই তাদের লাশ পাওয়া যায়।

পারভীনের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার রাতে পারভীনের বড় বোন নার্গিস ঢাকা থেকে ফোন করে ছোট ভাইকে জানান যে ছোট বোন পারভীন ও তার বাবার ফোন বন্ধ। পরে ছোট ভাই ওই বাসায় গিয়ে দেখতে পান মেইন গেটে তালা ঝুলানো হয়। সীমানাপ্রাচীর টপকে ভেতরে গিয়ে দেখেন, বাইরে একটা বাল্ব জ্বলছে। কিন্তু কাউকে খুঁজে পাননি। এরপর উঠানের দিকে যেতে যেতে সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে একটি পা দেখতে পান। কাছে গিয়ে পাশাপাশি দুটি ট্যাংকে দুজনকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় দেখতে পান। খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশ দুটি উদ্ধার করে।

পুলিশ জানায়, দুটি লাশের গলায় শ্বাসরোধের চিহ্ন রয়েছে। পারভীনের লাশটি বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বাড়িটির বাইরে থেকে একটি বড় হাঁসুয়া ও ভেতরের রুম থেকে সিগারেটের টুকরা আলামত হিসেবে জব্দ করে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানায়, বছর তিনেক ধরে ইলিয়াস ও মেয়ে পারভীন সুলতানা ওই বাসায় বসবাস করছিলেন। লিটনসহ স্থানীয় বখাটেরা নানাভাবে তাদের উত্ত্যক্ত করতো। কেউ মেয়েকে যৌন হয়রানি আবার কেউ তার বাবার কাছে অর্থ ধার চাইতো।

৮ thoughts on “যৌন হয়রানিতে বাধা দেয়ায় বাবা মেয়ে খুন

Leave a Reply to Abdul Halem Bablu Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.