সুইডেনের মুরগির চেয়েও কমদামি বাংলাদেশের মানুষ

টাঙ্গাইলে তিনজন মানুষকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। তাদের অপরাধ হচ্ছে, সেখানকার এক মা ও ছেলেকে বিবস্ত্র করে লাঞ্চিত করার ঘটনায় তারা প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলো! এই ঘটনায় সব মিলিয়ে সাতজন পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়েছে! প্রত্যাহার মানে হচ্ছে এক জায়গায় থেকে আরেক জায়গায় ট্রান্সফার করা হয়েছে। এই সব ঘটনা দেখে আমার বার বার সেই মুরগীর খামারির কথা মনে পড়ে যায়।

সুইডেনের বিখ্যাত একটি ইংরেজি খবরের কাগজের প্রায় বছর সাতেক আগের শিরোনাম ছিলো অনেকটা এইরকম: একটি মুরগি খামারের খুব কাছ দিয়ে সুইডিশ বিমান বাহিনীর কিছু বিমান উড়ে যাবার জন্য বিমান বাহিনীর ক্ষমা প্রার্থনা এবং ক্ষতিপূরণ!

ঘটনার বিবরণ অনেকটা এই রকম: এক মুরগি খামারির খামারের খুব কাছে, নিচ দিয়ে সুইডিশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান উড়ে যাবার ফল স্বরূপ যে বিকট শব্দ হয় তাতে করে ওই খামারির ছোট ছোট বেশ কিছু মুরগীর বাচ্চা ভয় পেয়ে যায় আর এতে করে তাদের মাঝে থেকে কিছু বাচ্চা অন্যরকম আচরণ শুরু করতে থাকে; যাকে কিনা ডাক্তার পরবর্তীতে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে ঘোষণা করে। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই খামারি বিমান বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়। এর ফলশ্রুতিতেই বিমান বাহিনী ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয় ও ওই খামারিকে সকল ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয়।

মজার বিষয় হচ্ছে এই ঘটনাটি খবরের কাগজগুলোতে খুব বড় আকারে প্রকাশ হয়।

আর বাংলাদেশে ছেলের সামনে মা’কে যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় পুলিশ গুলি করে তিন জন জলজ্যান্ত মানুষকে মেরে ফেলল! পুলিশ বাহিনী এই ঘটনার জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা, আজ শুনলাম সেখানকার ৭০০ জনের বিরুদ্ধে নাকি পুলিশ মামলা করেছে!

সুইডেনের সাথে বাংলাদেশের মানবাধিকার হয়তো মেলানো ঠিক হবে না। কারণ মানব উন্নয়ন সূচকের প্রথম সারির দেশ সুইডেনের একটি অতি ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রীয় সংস্থা একজন ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চাইবে ও ক্ষতিপূরণ দিবে এটাই স্বাভাবিক। তবে যে বিষয়টি পীড়াদায়ক তা হচ্ছে, শুধুমাত্র কিছু পাখি গোত্রীয় প্রাণীর ভয় পাওয়া ও তার প্রেক্ষিতে তাদের কিছুটা মানসিক সমস্যার কারণে এতো বড় একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা ক্ষমা চাইলো, আর বাংলাদেশে তিনজন জলজ্যান্ত মানুষকে পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলল; অথচ পুলিশের কারো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা উল্টো পুলিশ ৭০০ জনের নামে মামলা ঠুকে দিয়েছে।

তাহলে কি এই দেশে কি মানুষের মূল্য, পশুপাখির চাইতেও কম!

২৭ thoughts on “সুইডেনের মুরগির চেয়েও কমদামি বাংলাদেশের মানুষ

Leave a Reply to Rasuler Soinik Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.