যৌনপল্লি থেকে পালিয়ে বাঁচা এক তরুণী

ঢাকা: উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের এক তরুণী খুবই গরিব ঘরের মেয়ে। বাবা দিনমজুর। তাই নিজেই কিছু রোজগারের চেষ্টা করছিলেন। তাতেই তার সঙ্গে আগস্টের শেষের দিকে কালু শেখ নামে এক ব্যক্তির যোগাযোগ হয়। কালু তাকে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় কাজ পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দেয়।

গত ১ সেপ্টেম্বর কালুর সঙ্গেই ওই তরুণী শিয়ালদহে পৌঁছেন। কিন্তু সেখান থেকে তাকে নিয়ে চলে যাওয়া হয় সোজা কোচবিহার। ঠাঁই হয় দিনহাটার যৌনকর্মীদের পল্লিতে।

বিষয়টি টের পেয়ে বেশ কয়েকবার সেখান থেকে পালাতে চেষ্টা করেছেন ওই তরুণী। কিন্তু পারেননি ধরা খেয়েছেন প্রতিবারই, সঙ্গে জুটেছে বেদম মার। তাই ওই তরুণীকে পাহারা দেয়ার জন্য রাখা হয়েছে এক বৃদ্ধাকে। তাকে ফাঁকি দেয়া কঠিন হয়ে পড়ছিল ওই তরুণীর।

তবে একদিন ভোর বেলায় দেখেন বিছানায় পাশে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন ওই বৃদ্ধা। কিন্তু সামান্য নড়াচড়াতেও তার ঘুম ভেঙে যেতে পারে। তাই ওই তরুণী শুক্রবার কাক ডাকা ভোরে দিনহাটার যৌনপল্লিতে বিছানা ছাড়েন অতি সাবধানে।

তাই এবার দরজা খোলার আগে ভালো করে দেখে নেন ওই বৃদ্ধাকে। তিনি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন দেখে আর পালানোর সুযোগ ছাড়েননি ওই তরুণী। সাবধানে কাঠের দরজার ছিটকিনি খুলে একরকম নিঃশব্দে পাল্লা দু’টো সামান্য ফাঁক করে বাইরে বেরিয়ে পড়েন। জুতা ছিল হাতে। সামনে একটি তালা লাগানো লোহার গেট। পা টিপে টিপে সেই গেটের কাছে গিয়ে দেখলেন, সরু গলির উল্টো দিকের বাড়ির দরজা জানলাগুলোও বন্ধ। আর দেরি করেননি। গেটটি শক্ত করে ধরে তা বেয়ে উঠে যান। গেট পেরিয়েই গলির রাস্তা ধরে বড় রাস্তায় পৌঁছে হাঁফ ছাড়েন তিনি।

দৌড়ে গিয়ে একটি কলেজের কাছে পৌঁছান তিনি। ততক্ষণে বেশ আলোও ফুটেছে। লোকজন দেখে সেখানেই বসে পড়েলন। তার দিকে এগিয়ে এসে কয়েকজন জিজ্ঞাসা করতেই ওই তরুণী কান্নায় ভেঙে পড়েন।

স্থানীয় বাসিন্দারাই তখন নারী পাচার রুখতে সক্রিয় একটি সংগঠনের কর্মী এলাকার বাসিন্দা জ্যোৎস্না বর্মনকে খবর দেন। এরপর তারাই ওই তরুণীকে পুলিশের কাছে নিয়ে যান।

ওই তরুণী বলেন, ‘ভেবেছিলাম জীবনটা শেষ হয়ে গেল। কোনো রকমে পালিয়েছি। এখন বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে চাই।’

১৫ thoughts on “যৌনপল্লি থেকে পালিয়ে বাঁচা এক তরুণী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *