ভারতে গর্ভ ভাড়া দেয়া একটি লাভজনক ব্যবসা

ভারতে গর্ভ ভাড়া দেয়া একটি লাভজনক ব্যবসা
দেশ-বিদেশের সন্তানহীন দম্পতিদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে ভারতে গর্ভ ভাড়া দেয়ার ব্যবসা ক্রমশ ফুলেফেঁপে উঠছে৷ ভারতে গর্ভ ভাড়া সহজলভ্য ও খরচ কম হওয়ায় গর্ভ ভাড়া বা সারোগেসি বাণিজ্যের বাজার দাঁড়িয়েছে ১৫০০ কোটি টাকার মতো৷

ভারতে গর্ভ ভাড়া দেয়ার ব্যবসার পরিসর দ্রুত বাড়ছে, যেহেতু এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের উপযুক্ত আইন এখনও নেই দেশটিতে৷ কৃত্রিম উপায়ে গর্ভাধান নিয়ন্ত্রণ বা অ্যাসিস্টেট রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি বিল এখনও পাস হয়নি৷ ৩৮ বছর আগে ভারতে কৃত্রিম গর্ভাধান বা ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের (আইভিএফ) যাত্রা শুরু হয়৷ আর এখন ভারতে প্রায় ২০ হাজার আইভিএফ ক্লিনিক আছে, যার বেশিরভাগই অবশ্য অনুমোদিত নয়৷ এ ধরনের ক্লিনিক সবথেকে বেশি আছে দিল্লি, মুম্বই ও চন্ডিগড়ে৷ ওদিকে ভারতে সন্তানহীন দম্পতির সংখ্যা প্রায় ১৫ থেকে ১৬ কোটি৷ অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে গরিব ও অশিক্ষিত পরিবারের মহিলাদের গর্ভ ভাড়া দিতে এজেন্টরা রাজি করায় এবং সেই সুযোগটা নিয়ে থাকে বিদেশি সন্তানহীন দম্পতিরা৷ উন্নত দেশগুলিতে গর্ভ ভাড়া দেবার নিয়মবিধি খুব কড়া৷ আর দিলেও পয়সা দেয়া-নেয়া নিষিদ্ধ৷ তবে গর্ভ ভাড়া নেবার আগে ঐ মহিলার বয়স ৪৩ বছরের নীচে কিনা, সেটা দেখে নেয়া হয়৷ দেখে নেয়া হয় তাঁর শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য৷ এছাড়াও আগে তিনি অন্তত একটি সন্তানের মা হয়েছেন কিনা এবং গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মের সময় কোনো সমস্যা হয়েছিল কিনা – সেটাও যাচাই করা হয়৷

গর্ভ ভাড়া দেবার নৈতিকতা ও অনৈতিকতার সীমারেখা নিয়ে চলেছে ঘোর বিতর্ক৷ যুক্তি টেনে বলা হচ্ছে, দেহদান বা অঙ্গ প্রতিস্থাপন যদি অনৈতিক না হয়, তাহলে গর্ভ ভাড়া অনৈতিক হবে কেন? একজন সন্তানহীন দম্পতি, যাঁরা নানাভাবে চেষ্টা করেও সন্তানের মুখ দেখতে পারেননি, তাঁরা সন্তান পাবেন – এর মধ্যে অনৈতিকতা কোথায়?
অন্যদিকে বিরুদ্ধবাদীদের মত হলো, দেহদান বা অঙ্গ প্রতিস্থাপন এককালীন চিকিত্সা প্রক্রিয়া৷ নব্য ধণতান্ত্রিক চিকিত্সা-বিজ্ঞানের এক ইতিবাচক দিক৷ কিন্তু গর্ভ ভাড়া নিয়ে গর্ভাধানের চিকিত্সা প্রক্রিয়া হয় দীর্ঘকালীন৷ আইভিএফ পদ্ধতিতে স্ত্রী ও পুরুষের ডিম্বাণু ও শুক্রাণু দেহের বাইরে নিষিক্ত করে তা নারীর গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়৷ বলা বাহুল্য, সন্তান জন্ম না হওয়া পর্যন্ত যেই নারী গর্ভধারণ করেছেন, তাঁর দেখভাল, চিকিৎসা – সবকিছুই করতে হয়৷
নৈতিকতার অবশ্য আরও একটা দিক আছে৷ যে গরিব মহিলার গর্ভ ভাড়া নেয়া হচ্ছে, তাঁর প্রসব পরবর্তী স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব কে নেবে? এখানেও রয়ে গেছে একটা ধোঁয়াশা৷ এত ঝুঁকি নেবার বিনিময়ে যে অর্থ প্রসূতিকে দেয়া হয়, তা বড়জোর তিন-চার লাখ টাকা৷ এ অর্থের একটা বড় অংশই কমিশন হিসেবে চলে যায় এজেন্টের পকেটে৷
Flash-Galerie Schwangere
গর্ভাবস্থার ডায়বেটিস? জেনে নিন কারণ ও উপায়
হবু ‘মা’
নারী পূর্ণতা পায় মা ডাক শুনে৷ কিন্তু সেকথা আর নতুন করে বলার কিছু নেই৷ মা ডাক শোনার আগেই, অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় থাকে হবু মায়ের নানা প্রশ্ন৷ পেটের শিশুটির সব ঠিক আছে তো? কী করলে সন্তানটি সুস্থভাবে পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে? আরো কত কিছু৷ গর্ভাবস্থায় অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ তারই একটি মায়ের ডায়বেটিস হওয়া, যা সব সময় বোঝা যায় না৷ তাই প্রয়োজন কিছু সতর্কতা বা বিশেষ চেকআপ৷
1234567
দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডেনমার্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, এর মধ্যে আইভিএফ ক্লিনিকের ডাক্তারদেরও কিছু কারসাজি আছে৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মহিলাকে জানতে দেয়া হয় না কতগুলি ভ্রুণ তাঁর গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে৷ চিকিত্সা শাস্ত্র অনুযায়ী দুটি বা তিনটির বেশি ভ্রুণ প্রতিস্থাপন করা হলে, তা একেবারেই নিরাপদ নয়৷ এক্ষেত্রে মায়ের স্বাস্থ্যের যথেষ্ট ঝুঁকি থেকে যায়৷ এ বিষয়ে গরিব অশিক্ষিত মায়ের সঙ্গে আলোচনা করা হয় না বা তাঁদের মতামত চাওয়া হয় না৷ তাঁদের অন্ধকারে রেখেই মহিলার ভাড়া করা গর্ভে অনেকগুলি ভ্রণ প্রতিস্থাপন করা হয়৷
চিকিত্সা শাস্ত্রের দৃষ্টিতে এটা অনৈতিক, বলেন সমাজবিদ তুলিকা প্যাটেল, যিনি এ বিষয়ে সমীক্ষা চালিয়েছেন৷ ভারতীয় চিকিত্সা গবেষণা পরিষদের (আইসিএমআর) নির্দেশিকায় বলা আছে, একইসঙ্গে দু’জন মহিলার গর্ভ ভাড়া নেয়া যাবে না৷ অথচ সেটা যাচাই করার কোনো ব্যবস্থাপনা নেই ভারতে৷ ইচ্ছুক দম্পতি পরে চাইলে একটি রেখে অন্যটির গর্ভপাত করিয়ে নেন৷ গবেষকদের মতে, যেহেতু নারী একাধিকবার গর্ভবতী হতে পারেন, সেহেতু বারংবার তাঁর গর্ভ ভাড়া নেবার বা দেবার একটা তাগিদ থাকে৷ দিল্লির একটি নাম করা হাসপাতালের আইভিএফ সেন্টারের প্রধান ডাক্তার আভা মজুমদার বলেন, ‘‘এমন অনৈতিকতা বেশি হয় গর্ভ ভাড়া নিতে ইচ্ছুক বিদেশি দম্পতিদের ক্ষেত্রে৷ কমিশন এজেন্টরা বেশি পয়সার লোভে সব ব্যবস্থা করে দেয়৷ তাই এই প্রবণতা রোধে দরকার কড়া আইন৷”
সারোগেসি পদ্ধতিতে ভূমিষ্ট হওয়া সন্তানের কিছু আইনগত অন্য দিকও আছে৷ প্রচলিত বা ট্র্যাডিশনাল আইভিএফ পদ্ধতিতে মহিলার ডিম্বাণু এবং গর্ভ – দুটোই ভাড়া নেয়া হয়৷ সেক্ষেত্রে সন্তানের ওপর মায়ের একটা জৈবিক অধিকার থেকে যায়৷ অন্যটা হলো জেস্টাশন আইভিএফ৷ এক্ষেত্রে মায়ের ডিম্বাণু ‘স্পার্ম ব্যাংক’ থেকে আনা অন্য পুরুষের শুক্রাণুর সঙ্গে অথবা পিতার শুক্রাণু ডোনার মহিলার ডিম্বাণু দেহের বাইরে নিষিক্ত করে ভাড়া দেয়া মহিলার গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়৷ যেহেতু গর্ভ ভাড়া দেওয়া মহিলার ডিম্বাণু ব্যবহার করা হয়নি, সেহেতু ভূমিষ্ট সন্তানের ওপর সেই মহিলার কোনো অধিকার বর্তায় না৷ তবে মাতা-পিতার ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু নিষিক্ত করে যে ভ্রুণ তৈরি করা হয়, তার পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব নিয়ে কোনো সংশয় থাকে না৷ অনেকে আবার আইভিএফ পদ্ধতিতে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু নিষিক্ত করাকে টেস্ট-টিউব বেবি বলে ভুল করে থাকেন৷ প্রতিটি টেস্ট-টিউব বেবি ভ্রুণ অবস্থায় মাতৃগর্ভেই বেড়ে ওঠে৷ বলা বাহুল্য, জিনগত দিক থেকে কোনো ত্রুটি থাকলে তা প্রতিস্থাপন করা হয় না৷

১৪ thoughts on “ভারতে গর্ভ ভাড়া দেয়া একটি লাভজনক ব্যবসা

Leave a Reply to Mizanur Rahaman Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.