বেহিসাবি হিসাব

যুগে যুগে ধর্মের প্রবর্তন হয়েছে মানবিক কারণে। মানুষকে রক্ষা করার জন্য, আল্লাহ্‌র সব সৃষ্টিকে রক্ষা করার জন্য ধর্মের প্রবর্তন হয়েছে। ধর্ম হলো – আল্লাহ্‌র সকল সৃষ্টিকে নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে দ্বীণ ও দুনিয়াতে চলার নির্দেশনা । মানুষ দেহ ঢাকে মানবিক প্রয়োজনে। শীত, তাপ, বৃষ্টি, দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য দেহ ঢেকে রাখে। নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু সকলেই দেহ ঢেকে রাখে। নিজের শরীরের প্রয়োজনেই ঢেকে রাখে। সকল পুরুষের ধারণা তার মা থেকে শুরু করে সব নারীই তার সম্পদ। অথচ নারী পুরুষ কেউ কারু সম্পদ না। নারী, পুরুষ, প্রকৃতি সব কিছুই আল্লাহ্‌র সৃষ্টি। সবাই সম্পুর্ন। প্রতিটি সৃষ্টিকে রক্ষা করার জন্য সেই সৃষ্টির ভেতরই কৌশল রেখে দেওয়া হয়েছে। যে সৃষ্টির কোন অবলম্বন নেই সেই সৃষ্টি নিজেকে রক্ষা করার কৌশল নিজেই খুঁজে নেয়। অতীতে পুরুষেরা পরিশ্রম করতো বাইরে আর নারীরা পরিশ্রম করতো ঘরে। ঘরের পরিশ্রমকে পরিশ্রম বলে কোনদিন মূল্যায়ন করা হয়নি কারণ ঘরের পরিশ্রমে নারীকে কেউ পারিশ্রমিক দেয়নি বা নারীর পারিশ্রমিককে বার্টার ডিলের ভেতরে রাখা হয়েছে। উদাহরণ – একজন পুরুষ বিয়া করে বউ আনে সেই বউ তার ঘরে রান্না করবে সেজন্য। যাতে সে তার পেটের ক্ষুধার আগুন নেভাতে পারে, রাতে সেই নারীর উপরে আরোহণ করে পেটের নীচের ক্ষুধা মেটানোর জন্য, এই ক্ষুধা মেটানোর প্রক্রিয়াতে অনেক নারী পুরুষের ডিম্ব ও স্পার্ম মিশ্রিত হয়ে শিশুর জন্ম হয়ে যায় তখন পুরুষেরা দাবী করে এই শিশুও তাদের সম্পদ। একটি শিশু জন্মের জন্য নারী ও পুরুষ উভয়ের দরকার হয়। বিশেষ করে নারীর দরকার হয় ৯০%। এই শিশু বড় হয় নারী দেহের ভিতরে নয় মাস, জন্ম হয় নারীর যোনিপথ দিয়ে, ধীরে ধীরে এই শিশু বড় হয় নারীর দুগ্ধ পান করে। শুধুমাত্র স্পার্ম দিয়েই পুরুষেরা এই পুরা প্রক্রিয়াকে নিজের সম্পদ বলে দাবী করে একটা মাত্র কারণে তা হলো – রান্না করার জন্য বউকে কেউ পারিশ্রমিক দেয়না, রাতে বৌয়ের উপরে আরোহণ করার জন্য কেউ পারিশ্রমিক দেয়না, শিশু গর্ভে ধারণ করার জন্য মা পারিশ্রমিক পায়না, শিশুকে নয়মাস পেটে বহন করার জন্য কেউ পারিশ্রমিক পায়না, শিশুকে প্রসব করার জন্য কেউ টাকা দেয়না, শিশুকে দুধ খাওয়াবার জন্য কেউ পারিশ্রমিক পায়না। — এইসব কাজই নারী স্বাচ্ছন্দে বিনা টাকায় করে বলেই পুরুষের ধারনা তারা পরিশ্রম করে বাইরে থেকে টাকা এনে এই নারীকে ঘরে রেখেছে বলেই এই নারী বাদবাকী পরিশ্রম করতে পারছে । আজকালকার যুগে নারী পুরুষে উভয়েই কাজ করে কিন্তু নারীর ঘরের কাজগুলো বেশীরভাগ ক্ষেত্রে নারীই করে থাকে ফলে নারী ঘরে বাইরে দুইজাগাতে কাজ করছে। সময় বদলের সাথে সাথে নারীরা পুরুষকে নিজেদের সম্পদ বা দাস হিসাবে দাবী করা শুরু করেনি।

পুরুষ যে ধর্মেরই হোক না কেনো – সব পুরুষই চায় তার বউয়ের শরীর এমনভাবে ঢাকা থাকুক যাতে অন্য পুরুষেরা তার বউয়ের প্রতি আকর্ষনবোধ না করে। দেহ ঢাকার জন্য ধর্মকে টেনে আনার দরকার নাই। এই একই কারনে ধর্মে পর্দা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । আকর্ষন — নারীর দেহ পুরুষকে আকর্ষন করবে এটা স্বাভাবিক। ইসলাম ধর্মে পুরুষের প্রতি নির্দেশ দেওয়া আছে তার দৃষ্টি অবনত রাখার জন্য। অন্য কোন নারীর প্রতি কুদৃষ্টি না দেবার জন্য। ইসলাম ধর্মে পুরুষের উপরে নির্দেশ দেওয়া আছে শরীরের বিশেষ অংশ ঢেকে রাখার জন্য যাতে প্রকৃতির অন্যান্য সৃষ্টি বিরক্ত না হয়।

ইসলাম ধর্মে আরো বলা আছে – অপচয় না করার জন্য, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য, ঘর, ঘরের আঙ্গিনা, রাস্তা, সমাজকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য, নামাযের আগে অজু করতে হয় কারণ আমরা সব চাইতে পাক ও পবিত্র হয়ে আল্লাহ্‌ সামনে হাজির হতে চাই। সাড়া বিশ্বই আল্লাহ্‌র সৃষ্টি তাই পারিপার্শ্বিকতাকে পাক ও পবিত্র রাখতে হবে, পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে আল্লাহ্‌কে খুশী করার জন্য। বাংলাদেশের যেখানে সেখানে মানুষ ময়লা ফেলে। ড্রেনের ভেতরে এইসব ময়লা জমে। তারপর বৃষ্টির পানিতে সাড়া শহর প্লাবিত হয়ে যায়। ড্রেনগুলোতে ময়লা জমে থাকার ফলে পানি বেড়ুতে পারেনা। সোজা হিসাব। সবাই যদি আল্লাহ্‌র নির্দেশ মেনে চলতো, সবাই যদি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতো, সবাই যদি ময়লা এমনভাবে ফেলত যাতে আল্লাহ্‌র অন্য সৃষ্টিকে বিরক্ত বা নস্ট না করে তাহলে এই পানি জমতোনা। নোংরা পানি মিলেমিশে একাকার হতোনা।

ইসলাম ধর্মে আরো বলা আছে অভুক্ত প্রতিবেশীর সাথে খাবার ভাগ করে খাবার জন্য। কম খাবার জন্য। দরিদ্র আত্মীয়কে সাহায্য করার জন্য, প্রতিষ্টিত করার জন্য, এতিমকে দেখাশোনা করার জন্য, মানুষের মত মানুষ করার জন্য, সবাই যদি ইসলাম ধর্মে মেনেই চলতো তাহলে সমাজে ধনী গরিবের বিশাল পার্থক্য সৃষ্টি হতোনা। ঘুষ ছাড়া বাংলাদেশে কোন কাজ হয়না। ঘুষ নেওয়া ও দেওয়া দুইটাই ইসলামের চোখে অপরাধ এবং গোনাহের কাজ। একজন মানুষ যদি ঘুষ দেয় বা নেয় সে আর মুসলমান থাকেনা।

আমি যদি বাংলাদেশের দিকে তাকায় তাহলে দেখি বাংলাদেশের তথাকথিত ৯০% মুসলমানের গল্প শুধু রুপকথা। বাংলাদেশের কোথাও ইসলাম পালনের কোন চিহ্ন নাই। তবে ফেসবুকের স্টাটাসে সবাই ব্যাপকভাবে মুসলমান যার কোন প্রমান সেইসব ফেসুবুকারদের জীবনে নাই ফলে সেই ইসলাম পালনের প্রতিফলন সমাজে নাই।

সবাই সরকারকে দোষ দেয় অথচ সাড়া বাংলাদেশের সকল জনগন আওয়ামীলীগ সমর্থন করেনা। সাড়া বাংলাদেশে দুর্নীতি শুধু আওয়ামীলীগেই করেনা। সাড়া বাংলাদেশে ভারতের পন্য শুধু আওয়ামীলীগের সমর্থকেরাই কেনেনা। সুতারাং সরকারকে দোষ দিয়া কোন লাভ নাই। সরকারকে পরিবর্তন করা জনগনের দায়িত্ব। জনগনের চাইতে সরকার বেশী শক্তিশালী হতে পারেনা। জেল ভর্তি নিরীহ মানুষ আছে – সেজন্য অনেক মানুষ লাভবান হচ্ছে। পুলিশ যখন ভুয়া মামলাতে কারুকে ফাঁসায় তখন এক শ্রেনীর লোকে লাভবান হয়। সেজন্য এই প্রথা প্রতিষ্টিত হয়েছে । সমাজে মানুষ এইসব নিপীড়ন সহ্য করছে সেজন্য এইসব অন্যায় টিকে আছে, প্রতিষ্টিত হয়েছে। দুর্নীতি সহ্য করার জন্যই দুর্নীতি প্রতিষ্টিত হয়ে গেছে।

যার যার ধর্ম সে সে যদি ঠিকভাবে পালন করতো তাহলে সমাজ সুন্দর হতো কারণ সব ধর্মই মানুষের সুন্দর জীবনের জন্য প্রবর্তন করা হয়েছে। অপরাধীরা এখন ক্ষমতায়ন করেছে। অপরাধের শিকারেরা অপরাধীদের ক্ষমতায়ন করার জন্য সাহায্য করেছে। সহযোগীতা করছে। অন্যায়কে সবাই প্রশ্রয় দিয়েছে কেউ প্রতিবাদ করেনি, না বলেনি।
sunny
সাড়া বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে ইয়াবা, পতিতা, ফেন্সিডিল, পর্ণ, অপরাধী, দুর্নীতিবাজ, খুনী, ধর্ষক, চোর, ডাকাতেরা — সেখানে পর্ণ স্টার সানি লিইওনের বাংলাদেশে এসে শো করাটা কোন ইস্যু নয়। সাড়া বাংলাদেশে পাহাড়ের সমান আবর্জনা আর নোংরামীর স্তুপে সামান্য একটা নোংরা ইটের টুকরার টোকা মাত্র ।



One thought on “বেহিসাবি হিসাব

Leave a Reply to Yusuf Un Nobi Babu Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.