ছিলেন ‘রাজা’, হয়েছেন ফকির!

নিউইয়র্ক শহরের গৃহহীনদের সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চলছিল। এ জন্য একটি সংগঠন নানা ধরনের প্রচার চালাচ্ছিল। আর এই প্রচার চালাতে গিয়ে নজরে এলো বিস্ময়কর এক সত্য।

ছবিতে আপনারা একটি ফেলে দেওয়া পিৎজা বক্সের ওপর ঘুমিয়ে থাকতে যাকে দেখছেন, তাঁর নাম উইলিয়াম প্রেস্টন কিং। ৫২ বছর বয়সী এই ব্যক্তি শুয়ে আছেন গ্রিনউইচ গ্রামের একটি রাস্তার ধারে।

সার্জেন্ট বেনেভোলেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (এসবিএ) গত সপ্তাহে তাদের এক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ছবিটি তোলে। তারা আশা করে, এই ছবি দেখে লজ্জা পেয়ে কর্তৃপক্ষ শহরের গৃহহীনদের জন্য ভালো কোনো ব্যবস্থা নেবে।
আর এই ছবি দেখেই এ ব্যক্তিকে খুঁজে পেলেন কিংয়ের বোন। উন্মোচন করলেন তাঁর আসল পরিচয়। এই উইলিয়াম প্রেস্টন কিং হলেন নিউইয়র্কের সাবেক একজন বিখ্যাত শেয়ার ব্যবসায়ী এবং ওয়াল স্ট্রিটের রাজা হিসেবে পরিচিত জর্ডান বেলফোর্টের বন্ধু।

দারুণ বিলাসী জীবন ছিল কিংয়ের। চড়তেন বিএমডব্লিউ গাড়িতে, থাকতেন বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে। শেয়ারবাজারে যেমন শ্রম দিতেন, তেমনি মনের আনন্দে পার্টিও করতেন সমানতালে। অর্থাৎ যেভাবে উপার্জন করতেন, দুই হাতে ঠিক সেভাবে খরচও করতেন দেদার।

কিন্তু সেই মাদক, অ্যালকোহলের নেশা আর অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন কিংকে এখন পথে নামিয়ে এসেছে। বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে বাস করা কিং এখন ঘুমান রাস্তায়। মাথা গোঁজার মতো সামান্য একটু আশ্রয়ও নেই তাঁর।

কিংয়ের ছোট বোন ক্রিস্টিন কিং জানান, সর্বশেষ গত জানুয়ারি মাসে ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। সে সময় প্রেসক্রিপশনের বাইরে ওষুধ সেবন করা নিয়ে ঝামেলা হয় তাঁর সঙ্গে। কিং তাঁর বোনের সঙ্গে এক বাড়িতেই বাস করতেন। কিন্তু বোনের বাড়ি থেকে ক্রমাগত চুরি করে নিজের বোনের জীবনকেই বিষিয়ে তুলছিলেন তিনি।

ক্রিস্টিন নিউইয়র্ক পোস্টকে বলেন, ‘টাকা চুরি করার পর আমি তার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করি। তাকে চিৎকার করে বলি যে, যখন সে পরিচ্ছন্ন জীবনে ফিরে আসতে পারবে, তখন ক্ষমা চেয়ে আমাকে একটি চিঠি লিখবে। আর তখনই আমরা কথা বলব।’

সেটিই ছিল ভাইবোনের মধ্যে শেষ কথোপকথন।

লং আইল্যান্ডে বেড়ে ওঠা এ দুই ভাইবোনের বাবা ও দাদা ছিলেন ঘোড়ার প্রশিক্ষক। স্কুল ও নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরে যাওয়ার পরও কিং ছিলেন দারুণ বুদ্ধিমান।

ওয়াল স্ট্রিটের স্টকব্রোকার পরীক্ষায় সেরাদের মধ্যে একজন হয়েছিলেন তিনি। সে সঙ্গে পাঁচটি ভাষায় কথা বলতে জানতেন কিং।

ভাই সম্পর্কে বলতে গিয়ে ক্রিস্টিন আরো বলেন, ‘সে কোথায় ছিল আর এখন কোথায় আছে। এখন সে পিৎজার বাক্সে ঘুমায়। এটা চিন্তা করা ও মেনে নেওয়া দুটোই আমার জন্য খুব কঠিন।’

এদিকে, এসবিএর মাধ্যমে পাওয়া এই ছবি দেখে এখন ভাইকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন ক্রিস্টিন। পোস্টার ছেপে আর লিফলেট বিলি করে ভাই কিংকে খুঁজছেন ক্রিস্টিন। আশা করছেন, রাস্তায় তাঁর ভাইকে কেউ দেখে খবর দেবেন তাঁকে।

One thought on “ছিলেন ‘রাজা’, হয়েছেন ফকির!

Leave a Reply to Md Azizul Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.