তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা, প্রতিপক্ষ রাশিয়া-ন্যাটো

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ ‘অনিবার্য’ যা থেকে শুরু হতে পারে তৃতৃীয় বিশ্বযুদ্ধ। রাশিয়া ও সামরিক জোট ন্যাটোর সামরিক মহড়ার পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এই যুদ্ধ অপর একটি বিশ্বযুদ্ধের রূপ নিতে পারে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক ইউরোপীয় লিডারশিপ নেটওয়ার্কের (ইএলএন) নতুন এক প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে।

ইএলএনের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ডেইলিস্টার জানিয়েছে, ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক জোট ন্যাটোর মধ্যকার উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। রাশিয়ার ক্রিমিয়া অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে ১৮ মাস আগে এই বিরোধের শুরু হয়।

রাশিয়ার সামরিক বিমান ও জাহাজ প্রায়ই যুক্তরাজ্যের সীমানার মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করছে। তবে যুক্তরাজ্যের বিমান সংস্থা এসব যানের সীমানা পার হওয়া বন্ধ রেখেছে।

চলতি বছরের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ন্যাটোর মাধ্যমে রাশিয়ার বিমানের পথ পরিবর্তন করানোর ২৪৫টি ঘটনা ঘটেছে। স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এই প্রথম এমন ঘটনার সংখ্যা এতটা বেশি।

ইএলএনের নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়, ন্যাটোর সঙ্গে লড়তে বেশ জোরেশোরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। আর প্রতিটি পক্ষই অপর পক্ষের দুর্বলতা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, উভয় পক্ষের পরিকল্পনায়ই যুদ্ধ আছে। মুখপাত্ররা রাখঢাক মানুক না কেন রাশিয়া ও ন্যাটো একে অপরের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধেরই প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রতিবেদনকারী সংস্থাটি রাশিয়া ও ন্যাটোর দুটি সামরিক মহড়া নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে। চলতি বছরের মার্চে রাশিয়ায় বিশেষ সামরিক মহড়া হয়, যেখানে ৮০ হাজার সেনা অংশ নেয়। অন্যদিকে চলতি বছরে জুনে অ্যালায়েড শিলড নামে ন্যাটোর একটি মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে জোটভুক্ত ১৯টি দেশের ১৫ হাজার সেনা অংশ নেন।

ইএলএনের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘আমরা মনে করি না দুই পক্ষের নেতৃত্ব এখনই যুদ্ধে যাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে বা সামরিক সংঘাত অনিবার্য মনে করছে। কিন্তু সামরিক মহড়া তেমনটাই নির্দেশ করছে। আর এমন মহড়া পূর্বঘোষিত না হলে বা কথা গোপন করা হলে আরো উত্তেজনা ছড়ায়। রাশিয়ায় এমন অনেক মহড়া হয়েছে।’

তবে ন্যাটো কর্মকর্তারা জোর দিয়েই বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে জোট কোনো যুদ্ধে যাচ্ছে না। ন্যাটোর মুখপাত্র কারমেন রোমেরো বলেন, প্রতিবেদনে ন্যাটোর সামরিক মহড়া সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা ঠিক নয়। ন্যাটো ইউরোপে যুদ্ধ করতে চায় না। ন্যাটোর মহড়ার কারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাশিয়ার আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপের নিরাপত্তা সুসংহত করতেই এমন মহড়া।

রোমেরো আরো বলেন, ন্যাটো রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের পথ খুঁজছে না। প্রায় দুই দশক ধরে রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করেছেন তাঁরা।

কারমেন রোমেরো আরো বলেন, রাশিয়ার তুলনায় ন্যাটোর সামরিক মহড়া বেশ সীমিত। ন্যাটো পূর্ণভাবে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি সমর্থন করে, যা থেকে পাওয়া যায় বিশ্বাস ও ভরসা।

রাশিয়ার পদক্ষেপের সমালোচনা করে রোমেরো বলেন, রাশিয়া প্রায় প্রতিটি চুক্তিতেই সমস্যা সৃষ্টি করেছে- যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ‘কনভেনশনাল ফোর্সেস ইন ইউরোপ’ চুক্তি, ‘ওপেন স্কাই’ চুক্তি ও ‘ভিয়েনা ডকুমেন্ট’।

ইউক্রেন নিয়ে সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের বিরোধ শুরুর পর প্রায় দেড় বছর কেটে গেছে। বর্তমানে চলা নিষেধাজ্ঞার লড়াইয়ে সর্বশেষ সংযোজন হলো, রাশিয়ার বাজার থেকে সব পশ্চিমা খাবার ধ্বংসে পুতিনের নির্দেশ।

১২ thoughts on “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা, প্রতিপক্ষ রাশিয়া-ন্যাটো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *