হাসপাতালের ৭ তলা থেকে ছুড়ে পঁচিস দিন বয়সী শিশু হত্যা

কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আবদুল্লাহ নামের মাত্র পঁচিস দিন বয়সী শিশুকে হাসপাতালের ৭ তলা থেকে ছুড়ে হত্যা করা হয়েছে । এ শিশুটিই শিকার হলো পৃথিবীর বর্বরতা ও নৃশংসতার। জন্মের পর সুস্থ্য হয়ে মায়ের কোলে বাড়ি ফেরার কথা যার, তাকে কিনা জন্ম নেওয়ার কয়েক দিন পরই লাশ হয়ে ফিরতে হলো। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ঘাতক বেছে নিয়েছে একটি হাসপাতালকে। যে হাসপাতালের চিকিৎসাতেই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলো শিশুটি। সেই হাসপাতালেরই সাত তলা থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হলো নিষ্পাপ শিশুটিকে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ ঘটনায় স্তম্ভিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। হতবাক পুলিশ প্রশাসন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ আটক করেছে শিশুটির এক আত্নীয়াকে।

আদরের প্রিয় সন্তানের এমন নিষ্ঠুর আর অমানবিক পরিনতি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মা নুরুন্নাহার। বুকফাটা আর্তনাদে মাতম করবেন সেই সুযোগও নেই তার। শোক প্রকাশের ভাষা তো জন্ম থেকেই পাননি বাকপ্রতিবন্ধী মা। আত্নীয়রা যখন শোকে মূহ্যমান তখন প্রিয় সন্তান হারানোর শোকে নিথর পাথর বাকপ্রতিবন্ধী নুরুন্নাহার। তার শোকের অশ্রুই দেখা গেলো প্রতিবেশিদের মাঝে। শিশুটির বাবা ফজলুল হক পেশায় গাড়ি চালক। থাকেন সাভার পৌরসভার জামসিং মহল্লায়। সাভারের একটি ক্লিনিকে সন্তান ভূমিষ্ট হবার পর রক্তে জীবাণুর সংক্রমণ ও মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু আবদুল্লাহকে গত ৬ জুলাই উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা.শাহীন আক্তারের তত্ত্বাবধানে মাত্র চারদিন বয়সী শিশুটিকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালের নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে।

আর নবজাতকের মাকে রাখা হয় ৭১৬ নম্বর কেবিনে। সুস্থ্য হওয়ার পর হাসপাতালের ছাড়পত্রের সঙ্গে শিশুটিকে পাঠানো হয় তার মায়ের কাছে। রোববার দিনগত রাতে একই কেবিনে অবস্থান করছিলেন মা নুরুন্নাহার (২৫), তার ফুপু জবেদা খাতুন (৫০) ও স্বামী ফজলুল হক। রাত দুটোয় মায়ের বুকের দুধ পান করার পর শিশুটিকে নিয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। ফজুলল হক বলেন, ভোর আনুমানিক চারটার দিকে আমার ফুপু শাশুড়ি আমাদের ডেকে তোলেন। তিনি জানান, বাবুকে (আবদুল্লাহ) পাওয়া যাচ্ছে না। আমি বলি, কেবিনের দরজা তো বন্ধ। আর শিশুটিও তো ছোট। ওর পক্ষে তো আর একা বের হওয়া সম্ভব না। উদভ্রান্তের মতো আমি কেবিন থেকে ছুটে বাইরে এসে নিরাপত্তা কর্মীদের বিষয়টি জানাই। তারা সঙ্গে সঙ্গেই সব প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেয়। গেটে যোগাযোগ করে তারা জানতে পারে, শিশুটিকে নিয়ে কেউ বের হয়নি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এর কিছুক্ষণ পর খবর পাই, আমার আবদুল্লাহ’র নিথর দেহ পড়ে আছে হাসপাতালের নিচে।

সেখান থেকে ওয়ার্ড বয়রা শিশুটিকে তুলে নিয়ে আসার পর দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে হাসপাতালের আনসার সদস্য বাবুল হোসেন জানান, এ হাসপাতালের ইতিহাসে কখনো শিশু চুরির ঘটনা ঘটেনি।অভিযোগটি পাবার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সবাইকে সর্তক হতে বলি। শুরু করি খোঁজাখুঁজি। পরে কেবিনে গিয়ে দেখি, জানালা বরাবর শিশুটিকে জড়িয়ে রাখা কাপড়গুলো পড়ে আছে। পরে সেই বরাবর নিচে গিয়েই ওর নিথর দেহ পাওয়া যায়। হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুল মালেক জানান, যেখানে শিশুটির নিথর দেহ পাওয়া যায়, ঠিক সেখানেই শিশুটির খোঁজ করছিলেন জবেদা খাতুন। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন হওয়ায় আমাদের সন্দেহ হয়। পরে শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকেও প্রাথমিকভাবে জবেদা খাতুনকে অভিযুক্ত করা হলে, আমরা তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিই। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জবেদা খাতুন বলেন, আমি নাতির সঙ্গে ছিলাম।

নাতির খোঁজ করতে গিয়েই আমাকে সন্দেহ করে আটক করা হলো। সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিশুটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এনামুর রহমান এমপি জানান, এমন নির্মম ঘটনায় আমরা হতবাক। প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্রুত শিশু আবদুল্লাহ’র খুনিদের সনাক্ত করতে। সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান জানান, আটককৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ফজলুর (শিশুটির বাবা) শ্বশুড় বাড়ির লোকেরা সম্পত্তির লোভে এ ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আতিক/প্রবাস

২২ thoughts on “হাসপাতালের ৭ তলা থেকে ছুড়ে পঁচিস দিন বয়সী শিশু হত্যা

Leave a Reply to Sohag Rana Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.