মোস্তাফিজ আতংকে ঘুম হারাম দঃ আফ্রিকা দলের

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর ঘুমই বোধ হয় কেড়ে নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান! শিষ্যদের নিশ্চয়ই মুস্তাফিজের বোলিংয়ে প্রচুর ভিডিও-টিডিও দেখাচ্ছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে কোথায়? ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নিয়েছিলেন মুস্তাফিজই। আজ টেস্ট অভিষেকেই চার উইকেট নিয়ে আরেক দফা মুগ্ধ করলেন এই বাঁ হাতি পেসার। মুস্তাফিজ-ধাঁধার উত্তর খুঁজে পায়নি ভারত। পাচ্ছে না দক্ষিণ আফ্রিকাও।

একজন বোলার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এসেই একের পর এক বিস্ময়ের জন্ম দিচ্ছেন। তাঁকে নিয়ে প্রতিপক্ষের চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে না, তা কী হয়! আর দলটা যখন দক্ষিণ আফ্রিকা, নিশ্চিতভাবেই ভালো হোমওয়ার্ক করেই খেলতে নেমেছে। আর এসেই একের পর এক সাফল্য পাওয়া মুস্তাফিজকে নিয়ে কাটাছেঁড়া হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে প্রতিপক্ষের সব গবেষণা আর কৌশলকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাজিমাত করেই চলেছেন তরুণ পেসার।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা তেম্বা বাভুমার কাছে দক্ষিণ আফ্রিকারই এক সাংবাদিক জানতে চাইলেন, মুস্তাফিজের বোলিংয়ের ভিডিও দেখেছেন কি না। এক প্রান্ত আগলে ধরে রাখা বাভুমা সংবাদ সম্মেলনেও উত্তরটা দিলেন রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে, ‘মুস্তাফিজের ভিডিও খুব বেশি দেখিনি। আমি আসলে ভিডিও-প্রিয় নই। তবে ওয়ানডে দলে থাকা খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলেছি। হ্যাশের (হাশিম আমলা) সঙ্গেও কথা বলেছি ওর বোলিং নিয়ে। বিশেষ করে ওর দ্রুতগতির কাটারগুলো নিয়ে। চেষ্টা করেছি কৌশল বের করে কাজে লাগাতে।’

কিন্তু সেই ‘কাজে লাগানো’ আর হচ্ছে কই? দল তো বটেই, বাভুমা নিজেও ব্যক্তিগত লড়াইয়ে হেরেছেন মুস্তাফিজের কাছে। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট ফিফটি পেয়েছেন। কিন্তু দল কাটিয়েছে বাজে একটা দিন। ব্যাটিং বিপর্যয়ের মূল কারণ হিসেবে মুস্তাফিজের চার বলে তুলে নেওয়া তিন উইকেটের কথাই জানালেন বাভুমা, ‘এক ওভারে তিন উইকেট অবশ্যই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। তখন থেকে আমরা ছন্দ হারাতে শুরু করি। ওরাও আমাদের ওপর চাপ বাড়াতে থাকে। আমরা আর সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। মুস্তাফিজের ওভারটা ছিল দুর্দান্ত।’ মুস্তাফিজকে বিশ্বমানের বোলার হিসেবে মূল্যায়ন এ প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানের, ‘আজ বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। আর বাঁহাতি পেসার তো ছিল বিশ্বমানের।’

কথাটা সুনীল গাভাস্কারও বলেছেন, তাঁর অভিজ্ঞতায় পুষ্ট চোখ দিয়ে। নতুন এলে অনেক খেলোয়াড়ই চমকে দেয়। এই চমকে দেওয়াটাই আসল নয়। আধুনিক ক্রিকেটে প্রযু​ক্তির সাহায্য নিয়ে সব খেলোয়াড়ের ডিএনএ পর্যন্ত বের​ করে ফেলা হয়। সেখান থেকে নিজের ভাঁড়ারে আরও অস্ত্র যোগ করা, নিজেকে দুর্বোধ্যই রাখার মধ্যেই একজন আসল প্রতিভার সার্থকতা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৮৩ ওভার বোলিং করে ১৩.৯২ গড়ে ২৫ উইকেট নেওয়া মুস্তাফিজ এখন পর্যন্ত সেই পরীক্ষায় দারুণভাবে সফল।
তবে গাভাস্কার আরও একটি জরুরি কথা বলেছেন, সব দিনই মুস্তাফিজ সফল হবে না। সেই অসফল হওয়ার দিনেও তাঁর কাঁধে সাহসের, নির্ভরতার একটা হাতের স্পর্শ যেন থাকে।

আতিক/প্রবাস

১৩ thoughts on “মোস্তাফিজ আতংকে ঘুম হারাম দঃ আফ্রিকা দলের

Leave a Reply to Tariq Miah Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.