“ওই দিনই আমরার বাড়িত ঈদ,যেই দিন খুনিরার বিচার হইব ” রাজনের মা

পরিবারের কারও মধ্যেই নেই ঈদের কোনো আনন্দ। ছোট ভাই সাজনের (৯) পরনে নেই নতুন জামা কিংবা প্যান্ট। ঘরের মধ্যেই ঘোরাঘুরি করছে ক্রিকেটের একটি ব্যাট নিয়ে। জানতে চাওয়াতে বলল, ‘এইটা আমার ভাই’র!

আজ শনিবার সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানা এলাকার বাদেয়ালি গ্রামে নিহত সামিউল ইসলাম রাজনের বাড়িতে গিয়ে চোখে পড়ল এমন দৃশ্য।
গত কোরবানির ঈদে সামিউল নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে উপহার পেয়েছিল ক্রিকেটের একটি ব্যাট। মারা যাওয়ার কদিন আগে সামিউল ব্যাটটি প্রতিবেশী একজনের কাছে বিক্রি করে দেয়। রাজন হত্যার পর সেই ক্রেতা ব্যাটটি ফেরত দিয়ে গেছেন। এর পর থেকেই সেটি হাতছাড়া করছে না সাজন।
সামিউলের মা রুবনা বেগম বললেন, সকালে সাজনের হাতে রাজনের ব্যাটটি দেখে ওর বাবা মো. আজিজুর রহমান হাউমাউ করে কেঁদেছেন। আর ব্যাটটি পেয়ে সাজন যেন ভাইকে ফেরত পেয়েছে!
ঈদের কথা বলতেই রাজনের মা বললেন, ‘সেই দিন খুনিরার বিচার হইব, ওই দিনই আমরার বাড়িত ঈদ’।
গত ৮ জুলাই সামিউলকে চোর সন্দেহে সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্টেশনে কয়েক ব্যক্তি পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর ‘অজ্ঞাত’ বলে রাস্তায় লাশ ফেলার সময় একজন ধরা পড়েন। ঘটনার পর অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ হত্যাকারীদের বাঁচাতে এমন মামলা করে বলে অভিযোগ রাজনের বাবার।
সামিউলকে মারধরের দৃশ্য ফেসবুকে দিতে হত্যাকারীরা ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখে। গত ১০ জুলাই ২৮ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওচিত্র প্রথম আলোর সিলেট কার্যালয়ে পৌঁছায়। এরপর ১২ জুলাই প্রথম আলোর শেষ পাতায় ‘নির্মম পৈশাচিক!’ শিরোনামে ভিডিওচিত্রের বর্ণনা দিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই দিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সামিউলকে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি দেশে-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হলে একে একে সামিউলের হত্যাকারীরা ধরা পড়ে। এ পর্যন্ত এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এজাহারভুক্ত চার আসামিসহ ১১ জনকে আটক করা হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আজ ঈদের দিন ভোর থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিবেশীরা সামিউলের মা-বাবাকে সান্ত্বনা দিতে এসেছেন। সামিউলের ছোট ভাই সাজন দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত কয়েক দিন ধরে বাড়িতে মানুষের ভিড় দেখে সাজন অনেকটা চুপচাপ হয়ে গেছে। সাজনকে কোলে তুলে নিলে শুধু একটা কথাই সে বারবার বলছে, ‘ভাই নাই! ভাইরে তারা মারি ফালাইছে। আমার ভাই আর আইত নায়।’
চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত সামিউল পড়াশোনার পর সংসারের অভাবে তাকে পড়াশোনা ছাড়তে হয়। সামিউলকে প্রথম শ্রেণিতে পড়িয়েছেন বাদেয়ালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক কামাল হোসেন। ঈদের নামাজ শেষে অনেকের মতো তিনিও সামিউলের কবর জেয়ারত করেছেন। সামিউল সম্পর্কে জানতে চাওয়াতে তিনি বললেন, ‘পড়াশোনা ছাড়লেও আবার সে স্কুলে ফিরে আসবে বলেছে। কিন্তু তার তো আর ফেরা হবে না!’

আতিক

১৯ thoughts on ““ওই দিনই আমরার বাড়িত ঈদ,যেই দিন খুনিরার বিচার হইব ” রাজনের মা

Leave a Reply to Abul Kashem Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.