ভারতের বাজারে প্রথম দিনেই ৫০ কোটি রুপি। আন্তর্জাতিক বাজারের আলাদা আয়ের কথা না হয় পরেই হোক। ভারতের সর্বকালের ব্যয়বহুল ছবি ‘বাহুবলি’র উন্মাদনা এখন সবখানে। এই মহাকাব্যিক অ্যাকশন ড্রামাকে অনেকেই বলছেন হলিউডি মিথোলজিক্যাল ছবির বলিউডি জবাব হিসেবে। কী আছে এই ছবিতে, যা নিয়ে এত তোলপাড়? বি টাউনের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ফিল্মফেয়ার আগাগোড়া তলিয়ে দেখেছে এই ছবির।
হলিউডের পৌরাণিক অ্যাকশন ছবিগুলোর ভঙ্গিমাতেই ভি এস রাজামৌলি তৈরি করেছেন ‘বাহুবলি’। পরিচালক বয়স অনুযায়ী অপেক্ষাকৃত তরুণ, তাতে কী, তিনি উচ্চাভিলাষীও! স্পেশাল ইফেক্টের মারকাট ব্যবহার এই তাঁর প্রথম নয়, ২০০৯ সালের ‘মাগাধিরা’ ছবিতেও দেখা গিয়েছিল। তবে ‘বাহুবলি’র সাপেক্ষে বলা যায়, ‘মাগাধিরা’ দিয়ে নেহাত একটু হাত পাকিয়ে নিয়েছিলেন রাজামৌলি। দর্শককে চমকে দেবে, কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যাবে—এমন কিছু দেখাতেই তৈরি করা হয়েছে ‘বাহুবলি’। তাত্ত্বিকরা এরই মধ্যে একই ঘরানার ছবি বানানোর ওস্তাদ শংকরের উত্তরসূরি হিসেবে দেখছেন রাজামৌলিকে।
‘বাহুবলি’র কাহিনীতে ভারতীয় পুরাণের বিশাল প্রভাব রয়েছে স্বাভাবিকভাবেই। কস্টিউম থেকে ক্যারেক্টার—সবকিছুতেই রয়েছে মহাভারতের ছায়া। একজন ন্যায়নিষ্ঠ রাজাকে নিয়ে এগিয়েছে ছবির কাহিনী, যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রভাস। জন্মের পরপরই তার ওপরে নেমে আসে মৃত্যুর হুমকি, তখন তাকে বাঁচানোর জন্য জীবন দেয় এক নারী, এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন রামাইয়া কৃষ্ণন। তবে মৃত্যুর আগে তরুণ রাজাকে ঠিকই একটি পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে যায় সে। সেখানেই বেড়ে উঠতে থাকে তরুণ রাজা। বড় হয়ে উঠলে একসময় সে অনুভব করে, পাহাড়ের অন্য প্রান্তে তার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে বহু কিছু। সে বুঝতে পারে, তার বেঁচে থাকার কারণ অনেক বড়, তার অস্তিত্ব এমনকি তার জীবনের চেয়েও। এখান থেকেই ‘বাহুবলি’র গল্প শুরু।
তবে মজার বিষয় হলো, তিন ঘণ্টার এই দীর্ঘ ছবির মাধ্যমে কিন্তু ‘বাহুবলি’র সমাপ্তি ঘটেনি। এটা হলো শুরু! ছবির ট্যাগলাইন লক্ষ করলে আপনিও বুঝবেন, ‘বাহুবলি : দ্য বিগিনিং’! আগামী বছর আসবে ‘বাহুবলি : দ্য কনক্লুশন’। তার আগ পর্যন্ত এই অর্ধসমাপ্ত ধুন্ধুমারী ছবি দেখেই ফিরতে হবে দর্শকের।
ছবির কাহিনীতে মৌলিকত্বের অভাব খানিকটা দেখা যায়, তবে সবকিছুই ঢেকে গেছে পরিচালকের মুন্সিয়ানায়। রাজামৌলির দূরদৃষ্টি এবং প্রয়োগ, দুটোই দারুণ মানছেন সমালোচকরা। ছবির নায়ক-নায়িকা সবাই দক্ষিণী সুপারস্টার, তবে এই ছবির আসল তারকা অবশ্যই পরিচালক রাজামৌলি। অ্যাকশন কোরিওগ্রাফি, সেট ডিজাইনিং, লোকেশন, চরিত্র, অ্যাকশন দৃশ্য—সবকিছুতে দুর্দান্ত স্পেশাল ইফেক্টের ব্যবহারের মাধ্যমে চিত্রায়ণ; রাজামৌলি নিজ হাতে গড়েছেন ছবিটিকে।
ছবিতে নায়ক এবং খলনায়ক চরিত্রে রয়েছেন যথাক্রমে প্রভাস এবং রানা দগ্গুবাতি। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন তামান্না, আনুশকা শেঠি ও রামাইয়া কৃষ্ণন। প্রবীণ অভিনেতা সত্যরাজ এবং নাসেরও তাঁদের চরিত্রে উতরে গেছেন ভালোভাবেই। তবে সবকিছু ছাপিয়ে রাজামৌলির নির্দেশনাই আসল ভূমিকা রেখেছে—এ কথা মনে করিয়ে দিতেই হয়।
‘বাহুবলি’ নিঃসন্দেহে একটি মাস্টওয়াচ মুভি। তবে এই অভিজ্ঞতা পরিপূর্ণ করতে দর্শককে আরো এক বছর অপেক্ষা হবে, বাহুবলির তো কেবল শুরু হলো!
ফেনী থানা ছাত্র দল liked this on Facebook.