আ. লীগ নেতাকে কোপালেন ছাত্রলীগ নেতা!

দীর্ঘ চার কিলোমিটার পথ দৌঁড়েও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের হামলা থেকে রেহাই পেলেন না তাঁরই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্য। প্রাণ বাঁচাতে একটি মাদ্রাসায় আশ্রয় নিলেও ইউপি চেয়ারম্যান শতাধিক মাদ্রাসা ছাত্রের সামনেই কুপিয়ে জখম করেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পান্থশালা ফেরিঘাটের মাদ্রাসায় এই ঘটনা ঘটে। এ সময় মাদ্রাসায় ব্যাপক ভাঙচুর চালায় রাসেলের সহযোগীরা।

আহত ইউপি সদস্য হাজি মো. শাহ আলমকে (৫২) নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি রায়পুরার শ্রীনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য।

শাহ আলমের ছেলে মনিরুজ্জামান ও ভাতিজা জয়নাল আবেদীন জনু  অভিযোগ করেছেন, এলজিএসপির রাস্তার টাকা আত্মসাৎ করার লিখিত অভিযোগ দায়ের করায় শ্রীনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও রায়পুরা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মোরশেদ খান রাসেল ওই হামলা চালিয়েছেন। আজকের হামলার আগে ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল শাহ আলম ও তাঁর প্রতিবেশীদের  ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেন।

এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল মুঠোফোন বন্ধ করে রাখায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রীনগর ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্টের (এলজিএসপি) অধীনে একটি রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে কোনো কাজ না করেই বরাদ্দ করা ৬০ হাজার টাকার পুরোটাই আত্মসাৎ করেন। এই ব্যাপারে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শাহ আলম রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ইউএনও বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গত ২৮ জুন বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে সাক্ষ্য দিতে হাজির হন শ্রীনগর ইউপির আরো সাতজন সদস্য। জড়ো হয় এলাকার ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষও। এ অবস্থায় ইউপি চেয়ারম্যন ও ছাত্রলীগ নেতা রাসেল ছাত্রলীগের কর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তকাজে বাধা দেন। তাঁরা কৃষি কর্মকর্তা ও ইউপি সদস্য শাহ আলমকে গালাগাল করে মারধরের চেষ্টা করেন। এ অবস্থায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তদন্ত ছাড়াই ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

সাক্ষ্য দিতে যাওয়া ইউপি সদস্যসহ লোকজনও স্বাক্ষী না দিয়েই ফিরে যান। এ ঘটনার পর এলাকার লোকজনের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরের দিন ২৯ জুন ইউপি চেয়ারম্যান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে শাহ আলমের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে হুমকি দেন। এ অবস্থায় শাহ আলমের এক ছেলে ইউপি চেয়ারম্যান রাসেলকে ঘুষি মারেন। এতে হট্টগোল সৃষ্টি হলে শাহ আলম দৌঁড়ে গিয়ে ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে মীমাংসা করে দেন। কিন্তু এতেও ক্ষান্ত হননি চেয়ারম্যান রাসেল। মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে তিনি আবার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় শাহ আলম ও তাঁর প্রতিবেশীদের বাড়িঘরে হামলা চালান। তারা জয়নাল মাস্টার, প্রবাসী সাফির উদ্দিন, জামাল মিয়া, হযরত আলী, জালাল মিয়া ও মৃত বজলুর রহমানেরসহ ১০-১২টি ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে কমবেশি ২০ লাখ টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হলে ঘটনাটি মীমাংসার জন্য রায়পুরার সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু উদ্যোগ নেন। ঘটনা মীমাংসার আগ পর্যন্ত তিনি উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার নির্দেশ দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আজ মঙ্গলবার ইউপি সদস্য শাহ আলম রায়পুরা উপজেলা সদরে যান একজন আওয়ামী লীগ নেতার সাথে দেখা করতে। এ ঘটনা টের পেয়ে রাসেল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে শ্রীরামপুর রেলগেট এলাকায় শাহ আলমকে ঘেরাও করেন। শাহ আলম সেখান থেকে পালিয়ে দীর্ঘ চার কিলোমিটার পথ দৌড়ে মেঘনাঘাট পান্থপথে চলে যান। রাসেল ধাওয়া দিয়ে পান্থপথে পৌঁছান। উপায় না দেখে শাহ আলম ঘাটের একটি মাদ্রাসার ভেতরে ঢুকে পড়েন। দরজার ছিটকিনি লাগানোর সময় রাসেল লাথি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে শাহ আলমকে এলোপাতারি কুপিয়ে জখম করেন। তাঁর সঙ্গীরা মাদ্রাসায় ভাঙচুর করেন। এ সময় আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে শাহ আলমকে উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ঘটনার পর ইউপি চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগ নেতা রাসেলের বিরুদ্ধে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাহার আলী বলেন, ‘ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনা শুনেছি। এ ব্যাপারে এখনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *