মানব পাচারের বিষয়টির গভীর ও ব্যাপক অনুসন্ধানের মাধ্যমে যা জানা গেল তা পিলে চমকানোর মত বিষয়।

[লেখাটি লিখেছে জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগার জাতীর নানা (ছদ্মনাম)]

পাচারের বিষয়টি বর্তমান সময়ের আলোচিত ও স্পর্শকাতর একটি বিষয়। বিষয়টির সাথে মানবধিকার লঙ্ঘনের নির্লজ্জ ব্যাপারটাও জড়িত। থাইল্যান্ডে গণকবর আবিস্কার ও মাঝ সমুদ্রে বেনামী লাশ এবং সর্বশেষ মালয়শিয়ার গহীন জঙ্গলে সারিসারি বাঙালিদের লাশ আবিস্কার এবং এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের মানব পাচারের বিষয়টি বিশ্ব দরবারে পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত।

বাংলাদেশের মানব পাচারের প্রধান নায়ক ও খলনায়ক হচ্ছে প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেন যিনি নুরা রাজাকারের ছেলে মোশা রাজাকার নামে পরিচিত। তার বড় পরিচয় তিনি হাসিনার বেয়াই যিনি ‘রাজাকার বেয়াই’ বা ‘জাতীয় বেয়াই’ হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত।

প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়র সুবাদে দীর্ঘ ৬ বছর এই মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রিত্ব করছেন এবং জনশক্তি রপ্তানি সেক্টরকে পুরোপুরি ধ্বংস করে তিনি ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা হাজার হাজার কোটি টাকা পকেটস্থ করেছেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, ২০১২ সালে মালয়শিয়ায় G2G (Govt to Govt) যা সরকার পর্যায়ে লোক পাঠানোর চুক্তির মাধ্যমে মুলত বৈধ পথে মালশিয়ায় শ্রমিক প্রেরণ বন্ধ করা হয় সরকারী তত্ত্বাবধানে দীর্ঘ ৪ বছরে মাত্র ৭ হাজার শ্রমিক মালয়শিয়ায় গেছে। কিন্তু এই চুক্তির আগেই বৈধ ভিসাধারি হওয়া সত্ত্বেও লক্ষাধিক শ্রমিককে মন্ত্রণালয় ছাড়পত্র প্রদান করেনি। এই শ্রমিকরা মালেয়শিয়ায় গেছে ২টি উপায়েঃ
১। আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের মাধ্যমে ছাত্র ও টুরিস্ট হিসাবে।
২। সমুদ্র পথে নৌকায়, জাহাজে ও বোটে চেপে দালাল চক্রের মাধ্যমে।
বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশ ও প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয়ের সার্বিক সহায়তায় জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকায় বিমানবন্দর অতিক্রম করেছে।

প্রবাসী মন্ত্রীর নিদিষ্টকৃত ট্রেভেল এজেন্সি এই আদম পাচারের প্রধান ভুমিকা পালন করতো। কোটি কোটি টাকা লেনদেন হত মন্ত্রীর নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে। সাম্প্রতি র‍্যাবের হাতে ধৃত মাহাবুব ট্রাভেলসের মালিক তার অন্যতম।

সাগর পথে মানব পাচারে কক্সবাজার, সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক মানব পাচার চক্রের সাথে প্রবাসী মন্ত্রীর ঘনিস্ট যোগাযোগ আছে। তালিকাভুক্ত মানব পাচারকারীদের সাথে মন্ত্রীর নিজস্ব বলয়ের লোকজনের সাথে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হতো।

প্রবাসী মন্ত্রীর মানব পাচার চক্রের অন্যতম সহযোগী হচ্ছে তার আত্মীয় আরিফুর রহমান, যিনি পেশায় সাংবাদিক এবং অনলাইন পত্রিকা dhakatimes24.comeisamay.comএর সম্পাদক। তিনি মতি মিয়ার প্রথম আলোতেও কর্মরত ছিলেন। মন্ত্রী ও মন্ত্রনালয়ের দুর্নীতি যাতে মিডিয়ায় না আসে সে বিষয়টি তিনি সার্বক্ষণিক মনিটর করেন। পেশায় সাংবাদিক হলেও তিনিই এখন মন্ত্রনালয়ের সরবময় কর্মকর্তা। বলতে পারেন, মন্ত্রীর সমপর্যায়ে তার মর্যদা। মন্ত্রনালয়ের সচিব থেকে পিয়ন সবাই তাকে সমীহ করে চলেন, না জানি কার কখন বদলি হয়, কে কখন সাসপেন্ড হয়, কে আবার চাকরি হারায়। বর্তমানে তিনি হাজার হাজার কোটির টাকার মালিক যা মন্ত্রীর অবৈধ আয়ের তিল পরিমান মাত্র!!!!!

প্রবাসী মন্ত্রীর মানবপাচার চক্রের অন্যতম সিন্ডিকেট লিডার হচ্ছে তার এপিএস ফোয়াদ হোসেন। রাজনীতি হতে আসা প্রায় অশিক্ষিত এপিএস মানবপাচার চক্রের CFO (Chief Financial Officer) এর ভুমিকায় আছে। মন্ত্রীর পক্ষে লেনদেনের মালিক এই ফোয়াদ এখন লক্ষ্য কোটি টাকার মালিক যা তার ও তার নিকট জনের ব্যাঙ্ক একাউন্ট চেক করলে এর সত্যতা মিলবে।

মানব পাচার বিষয়ে সরকারী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে মন্ত্রীর সাথে তার নামও এসেছে যা এখন ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। যদিয়ও পত্রিকায় আসছে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে এর অন্যতম নায়ক এম্পি বদি। বদির ব্যাপারটা হল অনেকটা এরকম; কোন এলাকায় জুয়ার আসর বসলে ঐ এলাকার থানার ওসিকে যেমন মাসিক একটা মাসোহারা দিতে হয় তেমনি বদির এলাকা দিয়ে যেহেতু এই অপকর্ম চলছে সেখানকার মানবপাচার সিণ্ডিকেটগুলো তাকে একটা মাসোহারা দেয়। বদির মূল ব্যাবসা মাদকের, মায়ানমার থেকে মাছ ও কাঠ আমদানী, বাংলাদেশ থেকে স্বর্ণ পাচার ইত্যাদি আর আছে রোহিঙ্গাদের ভোটার আইডি দিয়ে একটা ভালো অঙ্কের আয় করা। তবে বদি এই হিউম্যান ট্রাফিকিং সম্পর্কে সব জানে। যার কারনে বদিকে নিয়ে নাড়াচাড়া করলে থলে থেকে বিড়াল বের না হয়ে অজাগর সাপ বের হয়ে যেতে পারে। আমার কথার অর্থ সবাই বুঝতে পারছ আশা করি।

মন্ত্রণালয় ও এর অধিনস্ত সংস্থার বদলি, পদন্নোতি ও অন্যান্য বিষয়ের একছত্র মালিক মন্ত্রীর আত্মীয় সাংবাদিক আরিফুর রহমান ও এপিএস ফোয়াদ। এই দুইজনই মুলত সব নিয়োগ বদলির বানিজ্যের প্রধান সঞ্চালক আর এইসব কাজে কি অঙ্কের লেনদেন হয় তা অনেকে শুনলে বিশ্বাসও করবে না। তাদের প্ররোচনায় জনশক্তি ব্যুরোর একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান পরিচালক ডঃ নুরুল ইসলামকে অন্যায়ভাবে পদায়ন করে বাকিদের একটা সিগনাল দিয়েছে। এই পরিচালকের অপরাধ সম্পর্কে যতটুকু জানা গেছে তিনি নাকি গোয়েন্দা সংস্থাকে ও একটা পত্রিকাকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।

বিষয়গুলো ওপেন সিক্রেট হলেও কারো এত বড় বুকের পাটা নেই যে প্রধানমন্ত্রীর বেয়াইয়ের বিরুদ্ধে কিছু বলবে। ফলে এই বেয়াই দীর্ঘ ৬ বছর ধরে এতো অপকর্ম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকবার মন্ত্রীপরিষদে প্রবাসী কল্যান মন্ত্রীর রদবলের এজেন্ডা কেবিনেট মিটিঙে থাকলেও তা আলোচ্যসুচিতে শেষ পর্যন্ত থাকে না। বেয়াইকে অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলির সিদ্ধান্তও চুড়ান্ত হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু রাজাকার মোশারফ তার পুত্রবধু পুতুলকে দিয়ে তদবির করিয়ে তা বাতিল করতে সমর্থ হয় এবং সিন্দাবাদের বুরোর মত এখনো মন্ত্রণালয়ে চেপে আছেন। বর্তমানে তিনি মালশিয়ায় সফরে আছেন। আগামী তিন বছরে পনের লাখ শ্রমিক নেওয়ার নাকি চুক্তিও হয়েছে। এটাও আগের মত জাতিকে একটা মুলা খাওয়ানোর মত ব্যাপার। চুক্তিটা যদি সত্যিই হত তাইলে এতক্ষনে ঢোল বাদ্য বাজানো শুরু হয়ে যেত।

মালশিয়ায় প্রচুর জনশক্তির চাহিদা থাকা সত্ত্বেও নিজের ব্যাক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য একটা আত্মঘাতী চুক্তি করে সরকার। বাংলাদেশের বাজার অন্য দেশের এজেন্সি দখল করছে কিন্তু আমাদের এজেন্সিগুলো তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করার নেই। আর এই আত্মঘাতী চুক্তির কারনে মালেশিয়া, সৌদি, লেবানন সহ অনেক দেশের শ্রম বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ যা দখল করে নিচ্ছে ভারত, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিফাইন সহ অন্যান্য দেশ। মালশিয়ায় প্রচুর স্রমিকের চাহিদার কারনেই এই মানব পাচারের জমজমাট ব্যাবসা শুরু হয়েছিলো। সরকার যদি মালেশিয়ার শ্রম বাজার উমুক্ত রাখতো তাই এই মানব পাচারের ঘটনাও ঘটতো না আর আমাদেরকেও এমন করুন ট্রেজেডি দেখতে হত না।

মানব পাচারকারির মূল হোতা একজন অর্থ ও রক্তলিপ্সু বেয়াই মোশারফকে মন্ত্রিত্বে বহাল রাখে প্রধানমন্ত্রী কি অত্ত্বতৃপ্তি লাভ করছেন? মেহেদির দাগ না শুকাতে স্বামী চলে গেছেন, থাইল্যান্ডের গন কবরে নাকি মালশিয়ার গহীন জঙ্গলে খাচায় বন্দি কঙ্কাল আছে তা জানে তার নব বধু। সন্তান তার পিতার একটা খবরের জন্য আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে? মা তার সন্তানের জন্য আর কত চোখের জল ফেলতে থাকবে?

আর কতদিন প্রধানমন্ত্রী? আর কতদিন?

(ছবির টি-শার্টটা জাতির নানার গায়ে যা জাতির নানাকে প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দিয়েছিলেন প্রায় এক বছর আগে যখন এই জঘন্য মানব পাচারের ব্যাপারে দেশবাসী আঁধারে থাকলেও মন্ত্রণালয় তা জানত যার মূল কথাটি অনেক আগেই তারা হয়তো দেশবাসীকে বুঝাতে চেয়েছিলো এই স্লোগানের মাধ্যমে)

সংগ্রহে- জাতীর নানার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *