বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে মধুর সমস্যা!

মধুর সমস্যা বাসা বেধেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে। সমস্যা তবে মধুর? এ আবার কেমন সমস্যা? হুম, এটা হলো দলে পারফরমারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সমস্যা! একের পর এক প্রতিভাবান ক্রিকেটারের উঠে আসার সমস্যা! কাকে রেখে কাকে নিয়ে সেরা একাদশ সাজানোর সমস্যা। এমন সমস্যা যেকোন দলের জন্যই যে মধুর সেটা বিনাবাক্যব্যায়ে হয়তো মেনে নিতে চাইবেন যে কেউ।

বাংলাদেশ একদিনের ক্রিকেটে দ্রুত উন্নতি করছে। এই উন্নতির একটি কারন মুল স্রোতে নিয়মিত ভাল ক্রিকেটারের যোগান। আর সে কারনেই হয়তো নির্বাচকদের হিমশিম খেতে হবে সেরাদের মধ্যথেকে সেরা একাদশ বাছায় করতে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ইঞ্জুরিতে না পড়লে সমস্যাটা আরো প্রকট আকার ধারন করতো। দলে নতুন কোন খেলোয়ারকে সুযোগ দিলেই রীতিমত চমকপ্রদ খেলা প্রদর্শন করতঃ উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আগাম বার্তা দিয়ে নিজের জায়গাটাকে পরিপোক্ত করে নিচ্ছে। নজরে পড়ছেন ক্রিকেট প্রেমীদের আর হয়ে উঠছেন এক একজন সুপারস্টার। এমন ৫ নবীন সুপার স্টাররা হলেন – সাব্বির রহমান, তাসকিন আহমেদ, সৌম্য সরকার, মোস্তাফিজুর রহমান ও লিটন কুমার দাস।

২০১৪ এর নভেম্বরে অভিষেক হওয়া সাব্বির রহমান ব্যাট করেন লোয়ার মিডল অর্ডারে। দলের প্রয়োজন অনুসারে ঐ জায়গাটায় যে তাকেই বেশি মানায় সেটা তিনি ইতিমধ্যে ভালভাবেই প্রমান করেছেন। বাংলার সাফল্য গাঁথা গত বিশ্বকাপেও তার পারফরমেন্স ছিল চোখে পড়ার মত। অনেকেতো তার ব্যাটিং করার স্টাইলের মধ্যে ভিরাট কোহলি ও এবিডি ভিলিয়ার্সের ছায়া খুঁজে পান। ৩১.১১ গড়ের এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের কাছাকাছি পজিশনে ব্যাট করেন দলে বহুবার প্রতিভার প্রমান দেয়া নাসির হোসেন। তার গড় ৩৪.৮৪।

স্পিড স্টার তাসকিন আহমেদ। উদিয়মান তরুন এই ডান হাতি পেস বোলারের অভিষেকও ২০১৪ তেই। তারিখ ১৭ই জুন। ভারতের বিপক্ষে বৃষ্টি বিঘ্নিত সেই ম্যাচে ৮ ওভার বল করে মাত্র ২৮ রানের বিনিময়ে নিয়েছিলেন ৫ টি উইকেট। ১৪০ কিমি. গতির কাছাকাছি বল করা এই বোলার ১২ ম্যাচে উইকেট কুড়িয়েছেন ১৯টি।

আবারো ২০১৪, এবার আগমন বাংলাদেশ দলে রীতিমত নির্ভরতার প্রতিক হয়ে উঠা সৌম্য সরকারের। জিম্বাবুয়ের সাথে সিরিজের শেষ একদিনের ম্যাচে অভিষেক হওয়া এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান করেছিলেন ২০ রান। তারিখ পহেলা ডিসেম্বর। বিশ্বকাপের আগে এই একটাই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ছিলেন সৌম্য। ২০, রান হিসেবে খুব বেশি না হলেও তার খেলার ধরন ঠিকই ইঙ্গিত দিয়েছিল সুন্দর আগামি দিনের। সে হিসেবেই নির্বাচকদের আস্থা আর বিশ্বকাপে সেরা ১১ তে স্থান পাওয়া। খেলেছেন একটি অর্ধশতক সহ কার্যকরি কিছু ইনিংস। ইংলিশদের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে চোখ ধাঁধানো ৪০ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন এই বাঁহাতি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এখনো পর্যন্ত খেলেছেন ১০ টি ইনিংস। ৩৯.৮৮ গড়ে তার রান ৩৫৯।

মোস্তাফিজুর রহমান ও লিটন দাসের একদিনের ক্রিকেটে এখনো অভিষেক হয়নি। একটি করে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন দুজনই। পেসার মোস্তাফিজুর রহমান খেলেছেন একটি টি-টোয়েন্টি আর উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান লিটন দাস খেলেছেন একটি টেস্ট। ম্যাচ একটি তাতে কি? দুজনেই নজর কেড়েছেন দর্শকদের। ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত মোস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভার বল করে মাত্র ২০ রানের বিনিময়ে নিয়েছেন ২ টি উইকেট। একটি শহীদ আফ্রিদির অন্যটি মোহাম্মাদ হাফিজের।

এই পাঁচজন ছাড়াও অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন হাই পারফরমেন্স স্কোয়াডে স্থান পাওয়া ও ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ১৪ সদস্যের তালিকায় থাকা রনি তালুকদার।

এই ৬ জনের কয়জন থাকবেন ভারতের বিপক্ষে সেরা একাদশে সেটা জানা যাবে ১৮ তারিখে তবে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের পাশাপাশি এই নবীনদের ব্যাটিং-বোলিং এর দিকেও এদেশের ক্রিকেট ভক্তরা যে তাকিয়ে থাকবেন সেটা বলার অবকাশ রাখেনা। প্রত্যাশা ও বাস্তবতার সমান্বয় কত টুকু ঘটে সেটাই এখন দেখার বিষয়। এগিয়ে যাক টাইগাররা, তাদের হুংকার ও আক্রমনে পর্যাদস্ত হোক ক্রিকেট পরাশক্তিগুলো। সাফল্য গাঁথা সিঁড়ি বেয়ে বাংলার ক্রিকেট উঠুক মর্যাদার শিখর চূড়ায়।

আতিক/প্রবাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *