তিস্তার জট খোলার বার্তা দিলেন মোদি

ঢাকা: ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন সফরে তিস্তা চুক্তি না হলেও মোদি চুক্তি নিয়ে চলমান জট খুলতে চান। বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতেই তিনি তা করতে চান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইতোমধ্যে সেই বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

নরেন্দ্র মোদি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নকে সময়ের তাগিদ বলেই মনে করছেন। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশে জঙ্গি দমনে হাসিনা সরকারের কঠোর মনোভাব এ ক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে।

খবরে বলা হয়েছে, আগামী দিনে জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে দু্ই দেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করতে চায়। সাউথ ব্লকের কর্মকর্তারা মনে করছেন বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা দিন দিন বাড়ছে। একসময় মনো করা হতো এই দেশে তালেবানের মতো কোনো শক্তির আর্ভিভাব ঘটবে না। এখন সেই ধারনায় চিড় ধরেছে। তারা মনে করছে পরিস্থিতি দিন দিন বদলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জমিকে ব্যবহার করে সেখানে তালিবানি জঙ্গি তৈরি করার চেষ্টা চলছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২১ আগস্টের সমাবেশে গ্রেনেড মেরে হত্যা প্রচেষ্টা, বাংলাভাই- জেএমবি তৈরি, অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের মতো একজন মুক্তমনা মানুষকে হত্যা, সাম্প্রতিক সময়ে তিন/চারজন ব্লগার হত্যা তাদের সেই ধারণাকে বদ্ধমূল করে তুলেছে।

বর্তমান অবস্থায় জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে হাসিনা সরকার কঠোর মনোভাব নিয়েছে। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতবিরোধী কোনো তৎপরতা চালাতে দেবে না। সাউথ ব্লক মনে করছে, বাংলোদেশ সরকার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত এলাকায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখছে তা খুবই প্রশংসনীয়।

এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিচেনায় রেখেই কথা মাথায় রেখে ভারতও মনে করে দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করা প্রয়োজন। আর তাই স্থলসীমান্ত চুক্তিকে ভারত বাস্তবায়িত করতে চলেছে। আগামী ৬ জুন সাক্ষরিত হতে যাচ্ছে সেই চুক্তি।

কেবল পশ্চিম বঙ্গ নয়, আসামে নরেন্দ্র মোদির নিজের দল বিজেপি থেকেও বিরোধিতা উঠেছিল এই চুক্তির। কিন্তু রাজ্য ইউনিটের এই বিরোধিতাকে সামলে শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদি এই চুক্তি চূড়ান্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।

সফরে তিস্তাচুক্তি হয়তো স্বাক্ষরিত হবে না। কিন্তু তিস্তা চুক্তির জট ছাড়িয়ে তাকে বাস্তবে রূপ দিতে মোদী যে বদ্ধপরিকর সে বার্তা কিন্তু শেখ হাসিনাকে দেয়া হয়েছে।

মমতা এখনই তিস্তা চুক্তি চূড়ান্ত করতে চান না। তবে মমতা কখনো বলেননি তিনি এই চুক্তির বিরুদ্ধে। তিনি আরো সময় নিতে চান।

জানা গেছে, আগামী বছর রাজ্য বিধান সভার নির্বাচন। তিস্তা চুক্তি হলে পানিবণ্টন নিয়ে অসন্তোষ ওই নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।

মমতার বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার কাছে প্রধান অগ্রাধিকার হল রাজ্যের স্বার্থ। তিস্তাচুক্তি এমনভাবে সম্পাদন করতে হবে যাতে উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত না হয়।

তিস্তা সিকিম থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশ যাচ্ছে। জলের অভাবে সিকিম আটটি হাইড্রলিক বাঁধ নির্মাণ করেছে।

মমতার বক্তব্য, এই বাঁধগুলোর ফলে উত্তরবঙ্গে জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ, ভারতের এই দুই রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিতর্ক আগে মোদিকে মেটাতে হবে।

সিকিম সরকার পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে যে পানি ধরে রেখে তারা বাঁধ নির্মাণ করেনি। পানির চলন্ত স্রোতকে অবরুদ্ধ না করেই তা থেকে পানি নিয়ে বাঁধের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক পাঠানো প্রয়োজন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বীণা তিক্রি মনে করেন, গঙ্গাচুক্তির সময় সমস্যাটা কম ছিল। কারণ ওখানে কার কাছে কতটা পানি যাচ্ছে তার একটা পরিমাপ ছিল। এই সুনির্দিষ্ট পরিমাপ যোগ্যতার ব্যবস্থা তিস্তা নদীতে নেই। এর ফলে এই পরিসংখ্যান নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।

এখনও পর্যন্ত যে খসড়াটি মনমোহন সিং সরকার তৈরি করেছিল সেটাই রয়েছে। এই খসড়ায় কোনও পরিবর্তন হয়নি বটে, কিন্তু দু’দেশের মধ্যে ট্র্যাক-টু কূটনীতি চলছে।

২০১১ সালে মনমোহন সিংয়ের সরকার তিস্তা চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছিল। তার ঢাকা সফরের সময় মমতারও আসার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মমতা আসেননি। মমতার অভিযোগ ছিল তার সঙ্গে আলোচনা না করেই কেন্দ্র তিস্তা চুক্তি করতে চাচ্ছে ঢাকার সঙ্গে।

তবে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কর্মপদ্ধতিতে একটা মৌলিক ফারাক আছে। মনমোহন যা পারেননি সেটা মোদি পেরেছেন। মোদি মমতাকে বোঝাতে পেরেছেন যে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা বিশেষ প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার

৪ thoughts on “তিস্তার জট খোলার বার্তা দিলেন মোদি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *