রেলওয়ে খালাসি পদে লোক নিয়োগ নিয়ে বিব্রত রেল মন্ত্রণালয়। ১ হাজার ৪৪১ পদের বিপরীতে এমপি ও মন্ত্রীরাই তিন হাজার ২১৭ জনের জন্য তদবির করেছেন। এর বাইরে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও সরকারদলীয় নেতারা আরও প্রায় দুই হাজার জনের জন্য সুপারিশ করেন। রেলওয়ে শ্রমিক লীগ ও রেলওয়ে সংগ্রাম পরিষদও আলাদাভাবে প্রায় পাঁচশ’ পদের জন্য তদবির করেছে। সুপারিশ ও তদবিরের চাপে ৪২৬ জনকে নিয়োগ দেওয়ার পর বাকি নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
রেলওয়ে মন্ত্রণালয় এসব সুপারিশ করা আবেদনপত্র নিয়োগ কমিটির কাছে হস্তান্তর করে। নিয়োগ-সংক্রান্ত নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রকৃত প্রায় দশ গুণ সুপারিশ ও তদবির। এর মধ্যে অভিযোগ উঠেছে একটি সিন্ডিকেট এমপি-মন্ত্রীর সুপারিশের অজুহাতে তাদের লোকদের নিয়োগ দিতে উঠেপড়ে লেগেছে।
নিয়োগ-সংক্রান্ত কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, রেলওয়ে সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. নোমান ২টি, আলী আজগর টগর ৩টি, সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ৩টি, মোসলেম উদ্দিন ২টি, ফাতেমা জোহরা রানী ২টি, সংসদীয় কমিটির বাইরেও যে সকল মন্ত্রী-এমপি তদবির করেছেন তারা হলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি ২৫টি, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপি ১৫টি, ডা. আফছারুল আমীন এমপি ৩১টি, ড. হাছান মাহমুদ এমপি ১০টি, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি ৫৩টি, মইনউদ্দীন খান বাদল এমপি ৪টি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ১টি, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি ১২টি, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এমপি ১৭টি, তাজুল ইসলাম এমপি ১৮টি, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু ৫টি, সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি ১২টি, রেলওয়ে শ্রমিক লীগের ৬৩০টি, রেলওয়ে সংগ্রাম পরিষদের ১১৬টিসহ প্রায় সকল এমপি, মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, উচ্চপদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের ৩ হাজারেরও অধিক সুপারিশ মন্ত্রীর দপ্তরে জমা পড়ে। সূত্র বলছে, মন্ত্রী-এমপিরা চাকরির জন্য সুপারিশ করতেই পারেন। এটা কোনো গর্হিত কাজ নয়।
নিয়োগ কমিটির প্রধান বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে নিয়োগ কমিটি যাচাই-বাছাই করে সুপারিশকৃত তালিকা হতে নিয়োগ দেওয়া হয় ৪২৬ জনকে। নিয়োগ কমিটি ও মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) মো. মোজাম্মেল হকসহ নিয়োগ কমিটির সদস্যরা ১ হাজার জনের নিয়োগ দেওয়ার জন্য তালিকা চূড়ান্ত করলেও তা অদৃশ্য কারণে আটকে আছে।
এদিকে সংসদীয় কমিটির সদস্য এবং মন্ত্রী, এমপিদের অনেক সুপারিশ বাদ পড়ায় তারা রেলমন্ত্রীর ওপর নাখোশ। অভিযোগ উঠেছে রেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এখনও নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনেকের কাছ থেকে বাকি ১ হাজার জনের তালিকায় নাম রয়েছে_ এমন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। তবে এসব নিয়োগ-বাণিজ্য মন্ত্রীর দপ্তর কিংবা মন্ত্রীর অগোচরে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি বলেন, সুপারিশ করা অন্যায় নয়, একজন মন্ত্রী-এমপি তার নির্বাচনী এলাকার লোকদের চাকরির জন্য সুপারিশ করতেই পারেন। তিনি বলেন, তার কাছে সারাদেশ থেকে মন্ত্রী-এমপি ও রাজনৈতিক দলের নেতা, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের ৩ হাজারের অধিক সুপারিশ এসেছে।
এসব সুপারিশ নিয়োগ কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নিয়োগ কমিটি নীতিমালার আলোকে কোটা মেনে সুপারিশকৃত তালিকা থেকে ৪২৬ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। তার অফিস কিংবা মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো ধরনের নিয়োগ-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নন। নিয়োগ-বাণিজ্য সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বড় ধরনের নিয়োগ ও দীর্ঘদিন রেলে নিয়োগ বন্ধ থাকায় নিয়োগের সুপারিশ বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেন রেলমন্ত্রী।
One thought on “মন্ত্রী-এমপিদের তিন হাজার তদবির”