এবার ঈদগাহ-র জায়গা দখল করেছে সরকার সমর্থকরা

খুলনার রূপসা উপজেলার সেনেরবাজার ফেরিঘাট চত্বরের ঈদগাহ ময়দানের সীমানা প্রাচীর গুঁড়িয়ে দিয়ে জায়গা দখল করে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এ সময় স্থানীয় ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও ভাঙচুর করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে এ হামলা, ভাঙচুর ও দখলের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রতিবাদে রূপসা-নড়াইল রুটে বাস, টেম্পো, ইজিবাইক, ভ্যান এবং জেলখানা ঘাট থেকে সেনেরবাজারে ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।

পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। এলাকাবাসী জানায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রূপসা উপজেলার সেনেরবাজার ঈদগাহ ময়দানের পূর্ব ও উত্তর পাশের সীমানা প্রচীর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা এমপির অনুসারী প্রফেসর আশরাফুজ্জামান বাবুলর বাহিনী। রাতেই ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ঈদগাহ ময়দানের জমি জবরদখলকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল সকাল থেকেই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী।

এমনকি তারা গতকাল সকাল থেকে সকল প্রকার স্থল যান ও নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়। সকাল ৯টার দিকে রূপসা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে। তবে চলতে থাকে বিক্ষোভ। বেলা ১১টার দিকে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মোস্তফা রশিদী সুজা ঘটনাস্থলে এসে সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন।
সেনেরবাজার ফেরিঘাট জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা মো. আব্দুর রশিদ মল্লিক বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারি ১২ থেকে ১৫জন লোক হামার দিয়ে ঈদগাহর সীমানা প্রচীর ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে এসে দেখি আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুজ্জামান বাবুল প্রফেসরের ভাই যুবলীগ নেতা লিটনের নেতৃত্বে আজাদ মেম্বর, আলমগীর মাঝি, সেলিম মাঝি, কামরুজ্জামান ও স্বপন মাঝিসহ ১৫/১৬জন প্রাচীর ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। এ সময় আমি তাড়াতাড়ি মসজিদে গিয়ে মাইকে ঘোষণা দেই। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় লোকজন বেরিয়ে পড়লে তারা চলে যায়। পরে জানতে পেরেছি, বাবুল প্রফেসর ঈদগাহ ময়দানের ওই জায়গাটিতে টেম্পো স্ট্যান্ড করার জন্যই তার লোকজন দিয়ে প্রাচীর ভেঙে দিচ্ছিল।’
সেনেরবাজার ফেরিঘাটের ট্রলাল মালিক-শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আবু হানিফ বলেন, শুধু ঈদগাহর প্রাচীর ভেঙেই তারা ক্ষান্ত হয়নি সন্ত্রাসীরা আমাদের ইউনিয়ন কার্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। সন্ত্রাসীরা ঈদগাহ ভাঙচুরের ঘটনাটি ক্ষমতার দাপটে ধামাচাপা দেবার চেষ্টা চলছে। ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় মাঝিরাও জড়িত থাকার প্রতিবাদে সেনেরবাজারের পাড়ে কোন ট্রলার ভিড়তে দিচ্ছে না। যতক্ষণ এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হবে ততক্ষণ ফেরিঘাট নদী পারাপার বন্ধ থাকবে।
তবে ট্রলার মাঝিদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে জেলখানাঘাট-শিঙেরচর-পথেরবাজার ট্রলার মালিক-শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. হায়দার আলী শেখ বলেন, ভেঙেছে ক্ষমতাসীনরা, আর দোষ হচ্ছে অসহায় মাঝিদের! মাঝিরা কেন ঈদগাহ ময়দানের জায়গা দখল করতে যাবে?
বিক্ষোভ সমাবেশে স্থানীয় বাসিন্দা শেখ আবু হোসেন বাবু বলেন, যতক্ষণ এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না হবে ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। ক্ষমতাসীনরা এতো কিছুই করছেন, এখন ঈদগাহ ময়দানের স্বল্প একটু জমির দিকেও হাত বাড়াচ্ছেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। স্থানীয় এমপি আন্দোলনকারীদের সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

আতিক/প্রবাস

৯ thoughts on “এবার ঈদগাহ-র জায়গা দখল করেছে সরকার সমর্থকরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *