ইতিহাস মুক্তি চায়

ইতিহাস কোন দিন বর্তমান থেকে বেরুতে পারেনা। ইতিহাস হতে পারেনা। কেনো এমন হয়? ইতিহাস মুক্তি চায়। ইতিহাসের বয়স হয়েছে। ইতিহাস অবসর চায়। লাইব্রেরীর অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে কোনে ঠায় চায়। ইতিহাস থেকে কেউ কিছু শিখে না তাই ইতিহাসের ছুটি হয়না। ইতিহাসের হাড্ডীশ্লসার বুড়া শরীরে তরতাজা যৌবন কেমন যেন বেমানান। যার যেখানে থাকা উচিত সে যদি সেখানে না থাকে তাহলে বেখাপ্পা লাগে। এই ত সেদিন বেতশ লতার মত চিকন মাবাপ হারা শেখ হাসিনা এলো। লাজুক মুখে মাথায় আধখানা ঘোমটা টেনে অধ্যাপক গোলাম আজম সাহেবের পায়ে সালাম করল।

অধ্যাপক সাহেবের একটা ভিডিও থেকে জানতে পারি উনি কেনো পাকিস্তান সমর্থন করেছিলেন। শেখ সাহেবের সাথেই উনি আন্দোলন করেন। ছয় দফা আন্দোলনের মূলমন্ত্রই ছিল পূর্ব পাকিস্তানের ডিফেন্স শক্তিশালী করা আর শক্তিশালী পাকিস্তান কায়েম রাখা। অধ্যাপক গোলাম আজম, শেখ মুজিব দুইজনেই এটা চেয়েছিলেন তাই দুইজনেই ১৯৭১ সালের পূর্ব বাংলার গনহত্যার সময় পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করেন নি। মুজিব পাকিস্তানে চলে যায়। অধ্যাপক সাহেব কিছুদিন হানাদার বাহিনীর গনহত্যা উপভোগ করে জামাতে ইসলামের কাজে পাকিস্তান চলে যান। মুজিবে পাকিস্তানের সাধারন নির্বাচনে জয়লাভ করে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের আশীর্বাদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়।

আর অধ্যাপক সাহেবের নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়। অধ্যাপক সাহেবের জন্ম ঢাকাতে। ১৯৭৪ সালে মুজিব লাহোরে ইসলামিক সন্মেলনে যাবার আগে ১৯৭৩ সালের নভেম্বরে সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করে।

জিয়াউর রহমান শুধু শেখ হাসিনাকেই ফিরিয়ে আনেনি জামাতে ইসলামকেও পুনর্বাসিত করেন। কারন মেজর জিয়া ইতিহাস থেকে কিছু শেখেননি।

১৯৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭২-৭৫ সালের গনহত্যার নায়ক আর খুনীদের ক্ষমা করে দেন। কি অধিকার ছিল জিয়ার?

এভাবেই জিয়া নিজের জীবন সহ শত শত মুক্তিযোদ্ধার জীবন নস্ট করেন। ইতিহাস কিছুতেই জিয়াকে রুধতে পারেনি। ইতিহাস শেখ মুজিবকে রুধতে পারেনি। এরা সবাই বাংলাদেশকে পচায়।

ফিরে আসি লাজুক সাপের কদমবুচীতে। ঘাতক নির্মুল কমিটিতে ইয়াহিয়া খানের বান্ধবী সুফিয়া কামালকে দেখা যায়। ইতিহাস কেঁদেকেটে আকুল হয়। কোন লাভ হয়না। একাত্তরের রেডিও পাকিস্তানের কর্মচারী উপন্যাস লেখে – ফেলে আসা একাত্তুরের হানাদার বাহিনীর জীপে করে নিরাপদে অফিসে যাবার দিনগুলি।

ফিরে আসি কদমবুচীতে। এরশাদের বিছানার সামনে তখন মহিলাদের লাইন। কে কার আগে যাবে বিছানায়। শুধু রওশনের চশমার আড়ালে অপেক্ষা করেছে নি:শব্দ প্রতিহিংসা। তখন বন্ধুর মেয়ে এসে চাচার পায়ে কদমবুচী করে

আহারে মাবাবা মরা মেয়ে। অধ্যাপক সাহেব কথা দেন আওয়ামীলীগের সাথে না থাকলেও তিনি বিএনপির সাথে থাকবেন না।

তাতে কাজ হয়। আওয়ামীগ ক্ষমতায় আসে। ১৯৭২-৭৫ ফিরে আসে। সেই গনহত্যার দিনগূলো ফিরে আসে। চুরি,দাকাতি,দুর্নীতি,হত্যা ও ধর্ষনের সোনালী দিন ফিরে আসে।

ইতিহাস কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে যায়।
কেউ ফিরে চায়না। বংগবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ হয়। বাংলাদেশে ভারতের বাজার পূন:প্রতিস্টা হয়। ইতিহাসের কান্না থামেনা

বাংলাদেশের আকাশে, বাতাসে, পানিতে, মাটিতে ১৯৭১ রয়েই যায়। ইয়াহিয়া খানের প্রেতাত্মা হাসে বিদ্রুপের হাসি।

শালা চুতিয়া বাংগালী
হার দিন করো ফ্রিডম ফাইট
খুদসে খুদ লড়ো
লড়কে মরো
হার দিন মরো

নতুন প্রজন্মের জন্ম হয়। ধিরে ধিরে ওরা বড় হয়। আমরা জন্মেছিলাম পাকিস্তানে। ওরা জন্ম নেয় ভারতের অংগরাজ্য বাংলাদেশে
সব ক’টা জানালা খুলে রেখে দেয়
বাতাসে মিথ্যা স্তুতিতে শ্বাস নেয়
ওরা জানে ওরা স্বাধীন
ওরা মৃত্যু দ্যাখে প্রতিদিন
ওরা জানে সাম্প্রদায়িকতা, ঘৃনা, হত্যা, মিথ্যাচার, দুর্নীতি, চুরি,প্রতারণা, এইসব খুব স্বাভাবিক ঘটনা। সীমান্তে বাংলাদেশী মরে ওরা ভারতের পতাকা বুকে করে ক্রিকেট দ্যাখে। সড়ক দুর্ঘটনায় সেলিব্রিটি মরলে ওরা রাতদিন শোক পালন করে।

সেই লাজুক মাবাবা হারা মেয়ে বুড়ি হয়। লাশের পাহাড় জড়ো করে। ইতিহাসকে টেনে ধরে রাখে ১৯৭১ সালের নয় মাসে। ঘরে ঘরে গড়ে তোলে শহীদ মিনার।

প্রজন্মের মগজশুন্য কুলাংগারেরা তার হাতের খেলনা হয়ে নাচে। লাশের পাহাড়ে বসে নাচে। বৈশাখ আসে। বস্ত্র হরনে লেগে যায় শেখ হাসিনার ছেলে। বৈশাখের উগ্র বাতাসে উলংগ মনে কি যেন ভেবে ঘুরে দাঁড়ায় মেয়ে। সেই বেতসলতা। চিৎকার করে ফাসী চাওয়া মেয়ে, ধাক্কা খেয়ে হাসপাতালে যাওয়া মেয়ে আঘাত অনুভব করে উলংগ মনে।

ঘুড়ে দাঁড়ায় সে। চারিদিকে বন্দুকের নল। সেইসব বন্দুক একদিন তাকে পাহাড়া দিয়েছিল সেইসব বন্দুকের নল থেকে গুলি এসে আজ তাকে হত্যা করবে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়না কেউ। ইতিহাসকে মুক্তি দেয়না কেউ।

ইতিহাস মুক্তি চায়।

৬ thoughts on “ইতিহাস মুক্তি চায়

Leave a Reply to Mukter Hossan Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.