তামিমকেই যত ভয় ভারতের!

ঢাকা: টেলিভিশনে নানান রকম বিজ্ঞাপণ শুরু করে দিয়েছে ভারতীয়রা। অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশকে ‘অপমান’ করে করে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে! ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকে একধাপ এগিয়ে বলছেন, টিম ইন্ডিয়া’র সামনে খড়কূটার মতো উড়ে যাবে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। ভারতীয় মিডিয়ার একটা বদ অভ্যাস আছে, তারা নিজেদের অনেক বড় করে দেখানোর চেষ্টা করে! অবশ্য কম বেশি এই কাজটা সবাই করে! ভারত বোধহয় একটু বেশিই!

ভারতীয় একটি চ্যানেলে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের সময় একাধিকবার বলা হচ্ছিল বাংলাদেশের বড় দলগুলোকে হারানোর কথা। ২০০৭ বিশ্বকাপে দলটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল। কিন্তু ওই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে ভারতের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গিয়েছিল তা আর বললো না! মূলতঃ বাংলাদেশের এই এক তরুণকেই যত ভয় ভারতীয়দের। যেদিন তামিমের ব্যাট জ্বলে উঠবে, সেদিন আর নিস্তার নাই ভারতের।

তামিম ইকবাল নামের এক তরুণের কাছে ‘আছাড়’ খেয়েছিলেন তখনকারসময়ের ভারতের সেরা বোলার জহির খান। বার কয়েক ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে তামিম বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশও পারে। দু’চারটা উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়েছিল তামিম-জহিরের মধ্যে।

এরপর থেকে ভারত-বাংলাদেশ মুখোমুখি হওয়া মানে তামিম-জহির দ্বৈরথ অবধারিত। সময়ের ব্যবধানে ভারতীয় দলে অচ্ছুৎ হয়ে পড়েছেন জহির। অথচ বাংলাদেশ দলে তামিম আছেন বহাল তবিয়ৎ।

জহির না থেকেও এসে যাচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে, ওই তামিমের কারণেই। তামিমকে প্রিয় প্রতিপক্ষের নাম জিজ্ঞেস করলে, হয়তো ভারতের কথাই বলবেন! ৫৩ বলে ৫১ রানের সেই ভয়ংকর সুন্দর ব্যাটিং! যে ইনিংসে বাংলাদেশ পেয়েছিল বিজয়ের ভিত। ২০১১ বিশ্বকাপে অতটা হয়তো খাপ খোলা ছিল না তামিমের ব্যাট। তবে ভারতের বিপক্ষে ভাল খেলার ধারাবাহিকতা ছিল। সেবার তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৮৬ বলে ৭০ রান।

৫১ এর পর ৭০। তাহলে, ২০১৫ বিশ্বকাপে কত?

এতো গেলো বিশ্বকাপের কথা। ২০১২ এশিয়া কাপের কথা ধরলে তো তামিম ভীতি আরও বেড়ে যায় ভারতীয় শিবিরে। সেবার ঢাকায় সবাই যখন শচীন টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি গড়া ঐতিহাসিক ম্যাচ এবং মুহূর্তটি নিয়ে ব্যাস্ত, তখন সেটাকে মুহূর্তে ম্লান করে দিলেন তামিম। শচীনের ঐতিহাসিক সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ২৮৯ রানের বিশাল স্কোর গড়ে ভারত। জবাবে খেলতে নেমে তামিমের সেই ‘পোর্ট অব স্পেন’ টাইপের ব্যাটিং। ৯৯ বলে ৭০ রানের ইনিংস খেলে শচীনের হাত থেকে ম্যাচটি বের করে নিয়ে এলেন এবং শেষ পর্যন্ত সেই ইনিংসের ওপর ভর করেই ৫ উইকেটে ভারতকে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপের আগে হাঁটুর ইনজুরি শঙ্কায় ফেলে দিয়েছিল তামিমকে। তাই দলের সঙ্গে একই বিমানে অস্ট্রেলিয়া না গিয়ে তামিম গেছেন পরে। সুপ্ত একটা বাসনার কথাও দেশের মানুষকে বলে গিয়েছিলেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিটা করতে চান তিনি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে খুব কাছে গিয়েও ৫ রানের আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। তবে কি প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই দেখা মিলবে তিন অঙ্কের? উত্তরটা জানা যাবে ১৯ মার্চ।

আফগানিস্তান-শ্রীলংকা ম্যাচে ব্যর্থ তামিম স্বরুপে ফিরলেন স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৯৫ রান করে। এরপর দুই ‘ল্যান্ড’ ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ফের ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি তার ব্যাট। হিসাব অনুযায়ী তৃতীয় ম্যাচে পারফর্ম করার সময় এসে গেছে বাংলাদেশ ওপেনারের!

পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, সবসময়ই ভারতের মাথাব্যথার কারণ ছিলেন তামিম। আর ভারতীয় দলও তাকেই সবচেয়ে বিপজ্জনক মনে করে। এখনও অবধি ভারতের বিপক্ষে ১৩ ম্যাচ খেলেছেন তামিম। ১২ ইনিংসে ৩৩.৪১ গড়ে পাঁচ ফিফটিতে রান করেছেন ৪০১। স্ট্রাইকরেট ৮৪.৭৭। ৪৬টি চারের বিপরীতে ছয় মেরেছেন পাঁচটি। দেখুন শুরু থেকে ভারতের বিপক্ষে তামিমের ১২টি ইনিংস-৫১, ৪৫, ৭, ০, ৫৫, ৬০, ১৭, ২২, ৭০, ৭০, ০ এবং ৪।

৩ thoughts on “তামিমকেই যত ভয় ভারতের!

Leave a Reply to Md. Babul Hossain Khan Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.