আওয়ামী লীগই শামসুল হুদাকে নামিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর বীর উত্তম। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মতিন খসরু এমপিকে উদ্দেশ তিনি বলেন, কীসের সংলাপ। তাহলে আবার তলে তলে শামসুল হুদাকে কেন লালন করছেন? এ টি এম শামসুল হুদা তো আওয়ামী লীগের লোক। সংলাপের জন্য আপনারাই তো তাকে নামিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে দর্শকদের প্রথম প্রশ্ন ছিল- দেশে চলমান সংকট নিরসনে নাগরিক সমাজের ব্যানারে যে সংলাপের প্রস্তাব করা হয়েছে, তা পুরোপুরি নাকচ করে দেয়া কি রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে? জবাবে আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ‘সংকট সমাধানে সংলাপ বা আলোচনার বিকল্প নেই, এটি গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু পেট্রলবোমা হামলা করা তো গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট নয়। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তো কেউ সংলাপে বসে না। তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে সংলাপ হবে না। আগে সহিংসতা বন্ধ করেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জিনিসের একটি প্রেক্ষাপট থাকে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে যারা সহিংসতা চালাচ্ছিল তারাই এখন করছে। আন্দোলন করছে বিএনপি এবং আর পেট্রলবোমা মারবে আওয়ামী লীগ এটা নির্বোধ শিশুও বিশ্বাস করবে না। তারা (২০ দল) নির্বাচনে না গিয়ে তাদের মৌলিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘সুশীল সমাজের যারা উদ্যোগ নিয়েছেন তারা মুনাফেকি করছেন।’ তার বক্তব্যের জের ধরে শাহজাহান ওমর বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রথম শর্ত হলো কোনো বিষয়ে মতবিরোধ হলে বিরোধীপক্ষকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আস্থায় ফিরিয়ে আনা। আজকে আমাদের দেশের বিষয় নিয়ে বিদেশিরা উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কারণ আমাদের লজ্জা নেই।’ তিনি বলেন, ‘আপনি (মতিন খসরু) বলছেন কীসের সংলাপ। তাহলে আবার তলে তলে শামসুল হুদাকে কেন লালন করছেন? শামসুল হুদা তো আওয়ামী লীগের লোক। সংলাপের জন্য আপনারাই তো তাকে নামিয়েছেন।’ নাগরিক সমাজের উদ্যোগ তো বিএনপি জোট সমর্থন করছে- এ প্রশ্নে শাহজাহান ওমর বলেন, ‘নাগরিক সমাজের প্রস্তাবিত বিষয়টি তো বিএনপির।
তারা এক বছর ধরেই সরকারকে সংলাপের আহবান জানাচ্ছে। আর বিএনপি হরতাল-অবরোধ দিলেও সহিংসতা করে না, বোমা মারে না। যারা মারে তাদের গ্রেফতার করে সরকার বিচার করুক।’ মেজর জেনারেল অব. গোলাম কাদের বলেন, ‘আজকের এ পরিস্থিতি ভয়াবহ। এ থেকে উত্তরণের পথ বের করতে সংলাপে বসতে হবে। লিঙ্গসমতা, গণস্বাস্থ্য, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে বাংলাদেশ সম্ভবনাময় অবস্থানে আছে। দেশকে এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার।’ তিনি বলেন, ‘কী বিষয়ে সংলাপ হবে বা পেট্রলবোমা বন্ধ করা কিংবা যেভাবেই বলেন সেটা বলতে পারেন।
কিন্তু সংলাপ শুরুই করলেন না, তাহলে কীভাবে সমাধান হবে?’ এ দু’জন ছাড়াও এবারের অনুষ্ঠানে প্যানেলে সদস্য ছিলেন; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল অব. গোলাম কাদের ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী। তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘জনগণ যা চায় রাজনৈতিক দল দু’টোর কেউই তা বুঝছে না। সংলাপের জন্য চাপ আরো বাড়াতে হবে, গণমানুষের বক্তব্য আনতে হবে।’ অনুষ্ঠানে বেশিরভাগ দর্শক রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে বসা উচিত বলে মত দেন। তারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বিবাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সাধারণ জনগণ। এজন্য দু’দলই দায়ী।
আতিক/প্রবাস