এদিকে সরকারের এমন প্রচারে নিবন্ধন কেন্দ্রে গিয়ে লাখ লাখ মানুষের ভোগান্তির পর মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুটি প্রচারই ছিল ভুল ও বিভ্রান্তিকর। তবে নিজেদের ভুল স্বীকার না করে মন্ত্রণালয় ও বিএমইটি বলছে, তা ‘মানুষের বোঝার ভুল’।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৮ ফেব্রুয়ারি ৪ দিনের সফরে আসা সৌদি আরবের প্রতিনিধি দলের মূল এজেন্ডা ছিল বাংলাদেশ থেকে নারী শ্রমিক বা গৃহকর্মী নেওয়া। ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে তারা। যেখানে গৃহকর্মীদের বিনা খরচে নেওয়া ও তাদের মাসিক বেতন ৮০০ রিয়ালে সম্মত হয় উভয় দেশ।
তবে এর আগে গত মাসে বাংলাদেশ সরকারের দাবি ও মন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলের সৌদি সফরে নারী শ্রমিক নেওয়ার পর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য খাতেও লোক নেওয়ার আশ্বাস দেয় রিয়াদ। বিষয়টিকে সরকারের বিরাট সফলতা উল্লেখ করে সৌদি আরব ‘শিগগিরই’ বিনা খরচে সব ক্যাটাগরিতে লোক নেবে বলে প্রচার করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।
সর্বশেষ গত সোমবার শুরু হওয়ায় ৪ দিনের ডিজিটাল মেলায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্যাভিলিয়নে সৌদি আরবে যেতে ইচ্ছুকদের নিবন্ধন করানো হবে বলে রোববার গেজেট প্রকাশ করে বিএমইটি। গেজেটে আরও বলা হয়, মেলার পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিএমইটি ও জেলা জনশক্তি রপ্তানি অফিসেও এ নিবন্ধন করা যাবে।
এক দিকে সৌদি আরবের সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানিতে সরকারের চুক্তি ও সব ক্যাটাগরিতে লোক পাঠানোর প্রচার আর অন্যদিকে বিএমইটির গেজেট প্রকাশের কারণে হরতাল-অবরোধের মধ্যেও টক অব কাট্রিতে পরিণত হয় বিষয়টি।
সরেজমিন দেখা যায়, এরই মধ্যে বিনা খরচে সৌদি আরব যেতে নিবন্ধনের জন্য ডিজিটাল মেলা, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিএমইটি ও জেলা জনশক্তি রপ্তানি অফিসে ভিড় করে লাখ লাখ মানুষ। তবে বিষয়টি বিভ্রান্তিকর হওয়ায় প্রচার করেও নিবন্ধনের জন্য কোনো প্রস্তুতি নেয়নি মন্ত্রণালয় বা বিএমইটি। মেলায় একটি প্যাভিলিয়ন থাকলেও আলাদা কোনো ডেস্ক না থাকায় নিবন্ধন করতে ভোগান্তিতে পড়ে অসংখ্য মানুষ।
তবে নিজেদের ঘোষণা ও মানুষের ভোগান্তির কোনো দায় নিতে রাজি নয় মন্ত্রণালয় ও বিএমইটি। তাদের দাবি- বিষয়টি সাধারণ মানুষের বোঝার ভুল।
এ প্রসঙ্গে বিএমইটি মহাপরিচালক বেগম শামসুন্নাহার বলেন, বিদেশ যেতে নিবন্ধন একটি চলমান প্রক্রিয়া। যেকোনো সময়ই বিএমইটি ও জেলা জনশক্তি অফিসে এ নিবন্ধন করা যাবে। মেলা উপলক্ষে শুধু বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একটি প্যাভিলিয়ন দেওয়া হয়েছে। মেলায় বেশি মানুষকে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে বিএমইটির পক্ষ থেকে সৌদি আরবের কথা বলা হয়।
সংবাদটি পুরোপুরি না জেনেই মানুষ নিবন্ধনের জন্য ভিড় করছে বলে দাবি করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব অর্থসূচককে বলেন, বাংলাদেশে অনেক মানুষ বেকার। সৌদি আরব যেতে সাধারণ ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়। বিনা খরচে যেতে পারবেন শুনে সবাই নিবন্ধন করতে মরিয়া হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, সৌদি আরব শুধু নারী শ্রমিকদের বিনা খরচে নেওয়ার বিষয়ে চুক্তি করেছে। অন্যান্য ক্যাটাগরির বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলেনি। আর অফিস চলাকালীন যেকোনো সময় এ নিবন্ধন করার সুযোগ রয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি ও নিবন্ধনের বিষয়টি ভুলভাবে প্রচার করা হয়েছে।
তিনি জানান, সৌদি আরব কোনো পুরুষ শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে চুক্তি করেনি।
Rashed Jamal liked this on Facebook.
Rajib Ahmed liked this on Facebook.