পাশবিক বাংলাদেশে মুক্তি আসছে

“মমতাময়ী মা” শব্দটা মা’ দের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় যেহেতু সন্তান জন্ম দিতে এত কস্ট হওয়া সত্বেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মা তার সন্তানকে নিজের প্রানের চাইতেও ভালবাসেন। সাড়া বিশ্বের সবার মা আছে বা ছিল। মা ছাড়া সন্তান পৃথিবীতে আসতে পারেনা। কারণ সন্তান আকাশ থেকে পড়ে দুনিয়াতে হাটা শুরু করেনা বা নারী নির্যাতন করা শুরু করেনা। মায়ের গর্ভে নয় মাস থেকে তারপর লালিত পালিত হয়ে তারপর সেই সন্তান পুরুষ হয় এবং নানা সময়ে নানা কারণে নারী নির্যাতন ও ধর্ষন করে। নারী যখন সন্তান গর্ভে প্রতিপালন করেন তখন এই সন্তানের সাথে তার নাড়ির সংযোগ স্থাপিত হয়ে থাকে। এই সংযোগের মাধ্যমেই পেটের ভেতরে মায়ের কাছ থেকে সন্তান খাদ্য গ্রহণ করে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। এই সময়ে মায়ের সাথে সন্তানের একটি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে। গর্ভে থাকা অবস্থায় হাসিখুশী মায়ের সন্তান হাসিখুশী হয়। মা কান্না করলে সন্তানের উপরে তার প্রভাব পড়ে। গর্ভাবস্তায় মায়ের উপরে যদি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয় তাহলেও পেটের সন্তানের উপরে এই কস্টের প্রভাব পড়ে।

অন্য একজন মায়ের সন্তানকে যে পুলিশ গুলি করে হত্যা করছে সেই পুলিশও কোন এক মায়ের সন্তান। যে ছেলেকে পুলিশ হত্যা করছে সেই ছেলের মা আর পুলিশের মা ঠিক একই ভাবে তাদের জন্ম দিয়েছে। পুলিশ যার নির্দেশে বা যাকে ক্ষমতায় ধরে রাখার জন্য গুলি করে ছেলেদের হত্যা করছে সেই নির্দেশদাত্রীও একজন মা। পুলিশের নিজেরও সন্তান রয়েছে। একজন পিতা কিভাবে অন্য একজন পিতাকে পুত্রহারা করতে পারে?

একজন মা কিভাবে অন্য একজন মা কে পুত্রহারা করতে পারে?
কেউ যদি কোন অপরাধ করে তাহলে সেই অপরাধের জন্য সেই ছেলেকে গ্রেফতার করা যেতে পারে। আদালতে অপরাধ প্রমানিত হলে ফাঁসী দেওয়া যেতে পারে।

মনিষা গর্ভবতী। শুধুমাত্র বিএনপির সদস্য হবার অপরাধে মনিষার স্বামী নুরুজ্জামান জনিকে হত্যা করা হলো। সন্তান ভূমিষ্ট হবার আগেই সন্তানের কাছ থেকে তার পিতাকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো । বাংলাদেশে প্রতিদিন যেসব ছেলেদের হত্যা করা হচ্ছে তাদের সবার মা বাবাদের কাছ থেকে সেইসব সন্তানদের ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যারা হত্যা করছে তারাও পিতা। কিন্তু এটা এখন আর বড় কোন প্রশ্ন নয়। বিচার বহির্ভুত হত্যা এখন স্বীকৃত। এই হত্যা কারুকে বিস্মিত করেনা। ক্ষমতায় যাবার জন্য সবাই অবরোধ করে। ক্ষমতা ভাগ বাটোয়ারা করার জন্য অনেকেই আলোচনাতে বসতে চায়। সেই আবদার করে অনশন করে কিন্তু বিচার বহির্ভুত হত্যার বিরুদ্ধে কেউ অনশন করেনা। বিচার বহির্ভুত হত্যার বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন হয়না। বিচার বহির্ভুত হত্যা এখন একটি আইন হয়ে গেছে।

বাংলাদেশে বিচার বহির্ভুত হত্যা এখন নিয়ম হয়ে গেছে।
মা দিবসের মত।
ভালবাসা দিবসের মত।
বাবা দিবসের মত।
বিচার বহির্ভুত হত্যা। যেকোন সময় মৃত্যু দিবস।
বিরোধীদলের রাজনীতি করলেই কোন রকম অগ্রিম নোটিশ না দিয়েই এই মৃত্যু এসে যেতে পারে
মনিষার গর্ভে যে ছেলেটি ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। কিছুদিন পরে সে পৃথিবীতে আসবে। যে পৃথিবী থেকে তার পিতাকে কোন কারণ ছাড়াই বিদায় নিতে হয়েছে। যে পৃথিবীতে মানুষ হত্যা করা খুব স্বাভাবিক ঘটনা সেই পৃথিবীতে মনিষার ছেলে আসছে। মনিষা ঠিক করেছে ছেলের নাম রাখবে “মুক্তি”। ছেলে আসার আগেই ছেলের বাবাকে চলে যেতে বাধ্য করা হলো।  বলা নেই কওয়া নেই “মুক্তি”র বাবাকে এক নিমেষেই জীবন থেকে মুক্ত করে দেওয়া হলো।

একাকী মুক্তি আসছে মা মনিষার কোলে। একাকী সে হাটতে শিখবে নিষ্টুর বাংলাদেশের রক্তাক্ত পথে। চারিদিকে দ্বিপদ জানোয়ারের মাঝখানে মুক্তি আসছে বিস্ময় নিয়ে। কৌতুহল নিয়ে। নিস্পাপ, ফুলের মত, পবিত্র শিশু “মুক্তি” আসছে পূতিগন্ধময় অপবিত্র অমানবিক পাশবিক বাংলাদেশে।  এই বাংলাদেশে ছোট্ট শিশু মুক্তি আসছে যে বাংলাদেশে গর্বের সাথে মানুষ হত্যা করা হয়। দিনে দুপুরে মানুষের বুকের ভেতর থেকে বের করে নেওয়া হয় তাজা হৃদপিন্ড। সবাই তাকিয়ে দ্যাখে। কেউ কিছু বলেনা। নিরাপত্তাহীন হিংস্র পাশবিক শহরে একাকী “মুক্তি” আসছে।

বাংলাদেশ – যেখানে আল্লাহ্‌ ও তার রাসুলের নাম নিয়ে মিথ্যা কথা বলা হয় হরদম। যেখানে আল্লাহ্‌ ও রাসুলের নাম নিয়ে মিথ্যাচার করে, প্রতারণা করে মানুষ ঠগিয়ে খায় হাজার হাজার নরপশু। বাংলাদেশ – যেখানে মানুষকে রাস্তায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় আর সেই হত্যার দৃশ্য ক্যামেরাতে ধরে রাখা হয় নির্মমতাঁর সাক্ষী হিসাবে। দেখো আমাদের পাশবিকতা দেখো। মুক্তির জন্য রেকর্ড করে রাখা হয়েছে এই রকম অনেক দৃশ্য। আগুনে জ্বালিয়ে মানুষ হত্যা করে হচ্ছে। সড়কে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। গুলি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। জ্যান্ত মানুষের নখ উপড়ে নেওয়া হচ্ছে। চোখ উপড়ে নেওয়া হচ্ছে। মানুষকে আঠারো টুকরো করে হত্যা করা হচ্ছে।

সেই দেশ – বাংলাদেশ সেখানে মনিষার কোলে নবজাতক শিশু “মুক্তি” জন্ম নেবে কিছু দিন পরে। সেই দেশ – বাংলাদেশ – যেখানে মানুষ হত্যা করা হয় মশামাছি টিপে মারার মত। এইসব মানুষ যাদের মশামাছির মত হত্যা করা হয়েছে, হচ্ছে বা হবে তাদের জন্ম দিতে সেইসব মায়েদের অনেক কস্ট হয়েছে। লালন পালন করতেও অনেক কস্ট হয়েছে। মুক্তির বাবা নুরুজ্জামান জনিকে জন্ম দিতে মুক্তি দাদীর যেমন কস্ট হয়েছিল ঠিক তেমনি কস্ট হবে মুক্তিকে জন্ম দিতে মনিষার।

আরো অনেক বেশী কস্ট হবে পিতৃহীন মুক্তিকে একাকী লালনপালন করতে। আরো কস্ট হবে যখন এই মুক্তিকে আবার কোন শেখ হাসিনার নির্দেশে হত্যা করা হবে।

দুইজন মমতাময়ীর গর্ভে দুইজন “মুক্তি” জন্ম নেবে। একজন জন্ম নেবে “মুক্তি” কে জীবন থেকে “মুক্ত” করে দিতে ।

http://www.sylheteralap.com/category/politics/40292/
আগামী ২১শে মার্চ “মুক্তি” আসছে এই পাশবিক বাংলাদেশে।

৬ thoughts on “পাশবিক বাংলাদেশে মুক্তি আসছে

Leave a Reply to Anjana Alam Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.