অবরোধ প্রত্যাহার করুন, আলোচনায় বসুন

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অবরোধ প্রত্যাহার এবং আলোচনায় বসুন দাবিতে একজন প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাকে রাস্তার পাশে নিরুপদ্রবে রাত কাটাতে দিন। শীতের রাতে পুলিশ দিয়ে চোরের মতো এটা ওটা হরণ করে বিরক্ত করবেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করে নেবেন, আমার ঠাণ্ডার দোষ আছে। যা করার দিনে করবেন। রাতে বিছানাপত্র চট, ছালা, কাঠ, বাঁশ চুরি করে আমাকে নিউমোনিয়ায় মারার চেষ্টা করবেন না। যদি আরও অমন করেন তাহলে আগামী মঙ্গলবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গণভবনের গেটে বসব। কাফনের কাপড় ছাড়া সেখান থেকে সরাতে পারবেন না। আপনি না জানলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে জানেন এবং চিনেন। তাই আমার কাঠ, বাঁশ, জিনিসপত্র সময় থাকতে ফিরিয়ে দিন- যাতে আমি শান্তিপূর্ণ অবস্থান চালিয়ে যেতে পারি।

মানুষের অবস্থান কখনো সখনো পাখির চেয়েও গতিময়। বহু বছর পর ২৪ জানুয়ারি কালিয়া স্কুল মাঠের জনসভায় লোকসমাগম ভালোই হয়েছিল। কালিয়ার নিবেদিত কর্মী সেলিমের বাবার খরচের খাবার খেয়ে মাঠে আসতেই শুনলাম বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা গেছে (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। বুকটা মোচড় দিয়ে উঠেছিল। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে হঠাৎ মারা যাওয়ার কথা শুনে সভায় বক্তৃতা করতে পারিনি। কোকো আমাদের কেউ নয়, তবু এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে সভা শুরু করেছিলাম। আরাফাত রহমান কোকো মারা গেছে শনিবার, মঙ্গলবার লাশ ঢাকায় আনা হয়। বায়তুল মোকাররমে জানাজায় শরিক হয়েছিলাম। অভাবনীয় লোক হয়েছিল। অথচ কোকো কোনো রাজনীতি করত না, কোনো নেতাও ছিল না। লোক দেখাতে নয়, মুসলমান হিসেবে জানাজায় অংশ নিয়েছিলাম। চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন চৌধুরী জানাজায় শরিক হওয়ায় আওয়ামী লীগ তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে শুনে তাজ্জব হয়েছি। আওয়ামী লীগের মুসলমানের জানাজাতেও অসুবিধা তাই আওয়ামী লীগ করি না। বঙ্গবন্ধুর স্বাভাবিক মৃত্যু হলে দেশের কোনো মাঠে জানাজায় জায়গা হতো কিনা জানি না। কিন্তু ঘাতকের হাতে নিহত হলে টুঙ্গিপাড়ায় তার জানাজায় ১৭-১৮ জন লোক হয়েছিল। অথচ কী কপাল! জিয়ার জানাজায় লাখো জনতা। কত বছর পর তার ছেলে কোকোর জানাজায় অভাবনীয় লোকসমাগম- এসবই মহান দয়াময় প্রভুর ইচ্ছে। দেশের অবস্থা এমন, একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানের জানাজায় শরিক হলে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। এমন হলো বিএনপি আর আওয়ামী লীগ। কোনো গ্রামে দুই মাতব্বরের বনিবনা না থাকলে সে গ্রামে গরিবের বাস করা মুশকিল। আর এত বড় দুই দলের এমন বনিবনায় দেশের মানুষ কেমন ব্যাঙচ্যাপ্টা তার বড় প্রমাণ বর্তমান অবস্থা। কোথাও কোনো শান্তি নেই, স্বস্তি নেই, মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। গতকালের এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সেটা নাকি শুক্রবারে হবে। মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেছেন, ‘কিসের পরীক্ষা কিসের কী?’ কী বলি তাকে? একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানকে গ্রেফতার করেছিলেন। অথচ এখন সেই দলের নেতা। তাকে বললে তো শুনবেন না। আমরা তো নাদানেরা শেষ হয়ে গেলাম। কিন্তু নতুন প্রজন্ম যে লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে, সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য নিরূপণ করবে, কারও রক্তচক্ষুকে পরোয়া করবে না- সেই প্রজন্মটাকেও এভাবে ধ্বংস করে ফেলছি। দেশে একদিকে বিরোধী দলের অবরোধ, অন্যদিকে আলোচনায় না বসার ছাগলের খুট্টি- মানুষ কোথায় যাবে? সত্যিই সাধারণ মানুষের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। কতজন কতভাবে জিজ্ঞেস করে, একটা কিছু করুন। একটা কী করব? তাই ভাবলাম বেকার মানুষ, ঘরে বসে অন্ন ধ্বংস করি। তার চেয়ে যাই না রাস্তায় গিয়ে শুয়ে থাকি, তাতে যদি কারও চোখ খোলে। তাই ২৮ তারিখ থেকে মতিঝিলের ফুটপাতে শুয়ে বসে আছি। চট, জাজিম, পলিথিন যতই বিছাই নিচের ঠাণ্ডা ফেরে না। আমার আবার সারা জীবনের ঠাণ্ডার দোষ। তাই গতকাল এক চৌকি বানিয়েছি। তবে এখানে নির্বিবাদে শুয়ে থাকাও খুব নিরাপদ নয়। শনিবার কলিজার টুকরো কুশিমনি, দীপ, তার মা নাসরীন এসেছিল। অবস্থানস্থলে বসেছিল অনেকক্ষণ। একবার কুশিমনি গলা ধরে বলেছিল, আব্বু তোমার কাপড়ের ঘর খুব সুন্দর হয়েছে। এটা তো আবার ফুপি (ফুপি মানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) ছিঁড়ে ফেলবে না? নিষ্পাপ শিশুরা আল্লাহর ছায়া। গত চার দিন মুহূর্তের জন্যও অমন ভাবিনি, মামনি ওরকম আশঙ্কা করার ৩-৪ ঘণ্টা পরেই জল্লাদের মতো মতিঝিল থানার ওসি এসে হাজির- ফুটপাতে থাকায় অসুবিধা নেই, গাড়ির মাইক চালাতে বাধা নেই, রাস্তায় চেয়ার নিয়ে বসতে পারেন। যতসব বাধা রাস্তার পাশে দুই-চার হাত জায়গাজুড়ে যে ঘেরাও দিয়েছেন ওটা রাখা চলবে না। আমার সঙ্গেও কথা হয়েছিল। বলেছিলাম, রাত অনেক হয়েছে। যারা বাঁধাবাঁধি করেছে তারা কোথায় ঘুমিয়েছে জানি না। সকাল হোক তাদের বলে কয়ে অবশ্যই একটা কিছু করব। কে একজন আবার বলল মতিঝিলের ওসির বাড়ি গোপালগঞ্জ। তাকে কোনো দিন দেখিনি তাই গোপালগঞ্জ কিনা জানি না। মনে হলো ভদ্রলোকের ভালো ট্রেনিং নেই। সুন্দর করে কথা বলতে পারেন না। অনেকটা হুকুমের সুরেই বললেন উপরের ছাউনিটা আপনার লোক দিয়ে ভাঙবেন, না আমরা ভাঙব। আমি আর কথা বাড়াইনি। সারা দিন দু’চোখ এক হয়নি তাই শুতে শুতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। অমন মরণ ঘুম আমার খুব একটা হয় না। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাসে এক সময় ঘুম ভেঙে যায়, তখন বুঝতে পারি সকালের জন্য মতিঝিল থানা অপেক্ষা করেনি। তীব্র ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্য চট দিয়ে যে বেড়া দিয়েছিলাম সেটাসহ উপরের ছাউনির অনেকটাই খুলে ফেলে কাঠ, বাঁশ নিয়ে গেছে। কাঠ বাঁশ নিয়েছে তাতে দুঃখ করি না। আমাদের চৌদ্দ পুরুষের পুরনো ১০-১২ হাত লম্বা দুটি বৈঠাও নিয়েছে। সকালে উঠে সাথীদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, জিনিসপত্র যে নিয়ে গেছে কোনো সিজার লিস্ট দিয়ে গেছে? দেয়নি। হয়তো মনে করেছে বাপ-চাচার জিনিস লিখিত দেওয়ার দরকার কী? বঙ্গবন্ধু নিহত হলে খুনি সরকার আমার বাড়ি তালাবদ্ধ করেছিল। কিন্তু সেই খুনিরাও একটা সিজার লিস্ট দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সিজার লিস্ট করা হয়েছিল যা এক সময় জননেত্রী শেখ হাসিনা বুঝে নিয়েছিলেন। ইদানীং আইনের কোনো মর্যাদা নেই। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কারও কোনো কিছু নিলে লিখে দেবেন। একমাত্র চোর-ডাকাতরা কারও কোনো জিনিস নিয়ে প্রাপ্তি রসিদ দেয় না। খুব বিরক্ত লেগেছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ফুটপাতে শীতের রাতে উপরে কাপড়ের ছাউনি দিয়ে নিরাপদে থাকতে পারব না- এটা কল্পনাও করিনি। আমার শিথানের ৮-১০ হাত দূরে মণি ভাইয়ের ছেলে তাপসের বাংলার বাণীর অফিস। সেই অফিসের জিনিসপত্র হেফাজত করতে রাত-দিন পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। অথচ একজন প্রবীণ প্রধান মুক্তিযোদ্ধার নিরাপত্তার জন্য সরকারি কোনো ব্যবস্থা নেই- এই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের সরকারের একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রতি আচরণ। আর আমার ব্যাপারে জননেত্রীর অগোচরে পানের বোটায় চুন লাগানো সম্ভব নয়, সব তিনি জানেন। আমাকে যদি খুন করা হয় সে খবরও তিনি আগেই জানবেন- এটা আমার বিশ্বাস। তাহলে সামান্য একটি ছোট্ট দাবি নিয়ে বসে আছি, কীভাবে আছি তা তিনি জানেন না- অবশ্যই জানেন।

শুক্রবার বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজে গিয়েছিলাম। জনাব তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, রাশেদ খান মেনন, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী, প্রাক্তন সংসদ সদস্য মোস্তফা জালাল মহীউদ্দিন নামাজে গিয়েছিলেন। জনাব রাশেদ খান মেনন এবং আমির হোসেন আমুর মাঝে বসে নামাজ আদায় করেছি। এক বুক দরদ নিয়ে আমির হোসেন আমু বারবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন, এই বয়সে ফুটপাতে পড়ে থাকলে শরীর খারাপ হবে না? বলেছিলাম, হলে হবে। কিন্তু উপায় কী? তেমন কিছু তো চাইনি, শুধু খালেদা জিয়াকে বলেছি, অবরোধ প্রত্যাহার করে দেশের ভবিষ্যৎ বাচ্চাগুলোকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, আলোচনায় বসুন। রাষ্ট্র চালাবেন আলোচনায় বসবেন না, নামাজ পড়বেন অজু করবেন না, এ কেমন কথা? তাই আমার প্রিয় বোন যে জানেন না, তা মানি কী করে? আমি কখন কোথায় কী করি তা সব তিনি জানেন বলেই বিশ্বাস করি। মা-বাবা, বড় ভাই আমায় বজ্র বলে ডাকতেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শ্বশুরের নাম কাদের মিয়া, তাই তিনি আমায় কাদের নামে না ডেকে বজ্র নামে ডাকেন। মা আমায় বজ্র বলে ডাকলে যেমন লাগত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বজ্র ডাকও অনেকটাই তেমন লাগে। অনেক সময় আমার মার সামনেই তিনি বজ্র নামে ডাকতেন, তাতে আমি যেমন খুশি হতাম, মাও খুশি হতেন। এক সময় তিনি খাবার নিয়ে বসে থেকেছেন। তিনি জানেন আমার ঠাণ্ডার দোষ আছে। ছেলেমেয়েদের ঠাণ্ডা বা কাশি হলে বাঙালি মায়েরা চুন-তেল গরম করে হাতে-পায়ে দেয়। তিনি অনেকবার আমার জন্য চুন-তেল করে দিয়েছেন। সেই তিনি রাতে বাতাস ফেরানোর জন্য আমার চটের বেড়া ভেঙে দিতে বললেন, এটা বিশ্বাস করি কী করে? আবার তার অনুমতি ছাড়া আমার আশপাশে রাতে কোনো কর্মকর্তার বুটের আওয়াজ শোনা যাবে তাই-বা মানি কী করে? বড় দ্বন্দ্বে আছি। গতকালের রাতটা বড় খারাপ গেছে। ঠাণ্ডা আমার সহ্য হয় না। বুক যেমন ভার ছিল তেমনি গলা বন্ধ ছিল। আজ কতটা কী হবে জানি না। তবুও যদি আল্লাহ এই মহান দুই নেত্রীকে হেফাজত করেন, হেদায়েত করেন তাহলে ঠাণ্ডায় ব্রঙ্কাইটিস হয়ে মরে গেলেও আপনজনদের গর্ব হবে।

দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত, আওয়ামী লীগ-বিএনপি। শীল-পাটায় ঘষাঘষি মরিচের জান ক্ষয়। দুই দলের এক দলে না থেকে এখন কারও বাঁচার উপায় নেই। ব্যবসায়ী, শিল্পী, উকিল-মোক্তার, ডাক্তার, সংবাদপত্র, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া- সব ভাগ। আমরা যে দুই দলকেই আসামি করেছি তাই পত্রিকা আমাদের কথা লিখবে কেন? ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সময় দেবে কেন, তারপরও যতটুকু দিয়েছে সেই তো মাথা সমান। আমাদের গণঅবস্থান কর্মসূচির প্রথম দিনই কেউ কেউ লিখে দিলেন অনশনে বসে প্রকাশ্যে খাবার খাচ্ছেন, এটা দেখে অনেকে হাস্যরস করেছে। কী বলি, সেসব সংবাদ মাধ্যমকে আর তাদের প্রতিনিধিকে। যারা গণঅবস্থান আর প্রতীকী অনশনের পার্থক্য বুঝে না বা বুঝেও বুঝতে চায় না তাদের সঙ্গে কথা বলে লাভ কী? ছয় ফুটের উপরে লম্বা মানুষ আমি। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের মতে কিছুটা বোকার দলের। তাই বলে অত বোকা হতে যাব! একদিকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, অন্যদিকে জননেত্রী শেখ হাসিনা আর আমি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কাদের সিদ্দিকী অনশন করে অপঘাতে প্রাণ দেব, আমি তো সকালে নাস্তা খেয়ে একটা পর্যন্ত প্রতীকী অনশন শেষে ছবি টবি তুলে ভাঙতে পারব না। আমি অনশন করলে জীবন থাক আর যাক মহাত্দা গান্ধীর মতো ৩৯ দিন করব। ডায়াবেটিসের রোগীদের খালি পেটে বেশিক্ষণ থাকলে সুগার নিল হয়ে অল্প সময়ই মরতে হবে। আমি তো কানে পানি দিয়ে দুই নেত্রীকে শুধু সজাগ করতে চাই, দেশটা যে শুধু তাদের দুজনের নয়, দেশটা ১৬ কোটি মানুষের। তাদের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার প্রতি দুই নেত্রীর শ্রদ্ধা রাখতে হবে। যদি তা না রাখেন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

আগেই বলেছি, সব কিছুতেই ভাগাভাগি। আমি যেখানে ফুটপাতে আছি অল্প দূরেই ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এফবিসিসিআইর অফিস। দলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীকসহ কয়েকজনকে পাঠিয়েছিলাম এফবিসিসিআইর বর্তমান সভাপতি গোপালগঞ্জের মানুষ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রিয়ভাজন এস এম আকরামের কাছে। শুনেছিলাম শীতের জন্য তার ব্যাংক থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বিতরণের জন্য ৩৮ হাজার কম্বল দিয়েছেন। আমাদের কর্মীরা রাস্তায় পড়ে আছে, প্রচণ্ড বাতাস এবং শীত- তাই আমাদের দুই-একশ কম্বল দিয়ে সাহায্য করলে এবং এক বেলা দু’মুঠো খেতে দিলে খুব খুশি হব। প্রতিনিধিরা ফিরে এসে বলেছে, তাদের অবস্থা ভালো নয়। প্রধানমন্ত্রীকে ৩৮ হাজার কম্বল দিলেও আমাদের ৩৮টা দিতেও অসুবিধা। তাই তাদের সাহায্য করা কষ্টকর। আমাকে নিয়ে সমস্যা হলো, হিন্দু শাস্ত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যেমন অনেক রাজ-রাজাদের উৎপত্তির খবর জানতেন, আমিও এদের অনেকের পিছনের খবর জানি। কোনো সময় দেশে ছিলাম, কখনো ছিলাম না। তবু সর্বজনাব চট্টগ্রামের আখতারুজ্জামান বাবু, সালমান এফ রহমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আনিসুল হক, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, মহসীন বুলবুল ভাইর বন্ধু মাহবুবুর রহমান- যিনি আমায় প্রথমদিকে চিরতরে একটি মোবাইল দিয়েছিলেন এদের সবাইকে চিনি। এরা কেউ বর্তমান সভাপতির মতো এমন মানসিকতার লোক ছিলেন না। নির্ধনের সঙ্গে যেমন আমার উঠাবসা, তেমনি ধনবানও দু’চারজন কম চিনি না, জানি না। অনেকেই আন্তরিকভাবেই সম্মান করেন, সমীহ করেন, ভালোবাসেন। কেন যেন এমনিতেই মনে হয়েছে আমরা মুক্তিযুদ্ধ না করলে এই এস এম আকরাম অফিসার হতে পারতেন না। ব্যবসায়ী হয়ে ব্যাংকের মালিক তো দূরের কথা বিড়ির দোকানদার হতে পারতেন কিনা সন্দেহ। পাকিস্তান আমলে হুজুর মওলানা ভাসানী কোনো এক মন্ত্রীকে বলেছিলেন, তোমাদের মতো ১০ মন্ত্রী পেশাবের সঙ্গে ভাসিয়ে দিতে পারি। আমি তো আর তেমন বলতে পারি না। জনাব আকরামের মতো মানুষের সাহায্য মেথরের হাত দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা হয়তো বলতে পারি। বছর বিশেক আগে মালা শাড়ির আনোয়ার কোনো অনুষ্ঠানে পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। ইদানীং তার ছেলে মনে হয় বেশ বড় ব্যবসায়ী। বছর ৫-৬ আগে দেখা হয়েছিল। এর পর আর কোনো খোঁজখবর জানি না। সেই আনোয়ার মিয়ার টাকার সঙ্গে একটা চিঠি পাঠিয়েছিলাম। লিখেছিলাম, এমন অর্থের প্রয়োজন হলে অবশ্যই আপনাকে জানাব। কয়েক মাস পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাড়িতে মালা শাড়ির আনোয়ারের কথা ওঠে। কোনো কারণে এরশাদ সাহেব টাকা চেয়েছিলেন। তার জন্য জনাব আনোয়ার ২৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। আমাকে পেয়ে এরশাদ সাহেব দুঃখ করছিলেন, প্রেসিডেন্ট থাকতে কত বাপ বাপ ডাকত। এখন পার্টির দরকারে ২৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছে। মুখপোড়ার মতো বলেছিলাম, ক্ষমতার সন্তানরা ক্ষমতায় গেলে বাপ চিনে না।

লেখক : রাজনীতিক।

৯ thoughts on “অবরোধ প্রত্যাহার করুন, আলোচনায় বসুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *