ঢাকা: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধের কারণে দেশের পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করছে কম। এ কারণে ভাড়া বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। ব্যবসায়ী, পরিবহন ঠিকাদার এবং গাড়ি মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অবরোধে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা দিলেও মালিকদের অনেকেই গাড়ি বের করছেন না। এর ফলে গাড়ি ভাড়া বেড়েছে। পরিবহন ব্যয় বাড়ায় রাজধানীতে শাকসবজিসহ বিভিন্ন কাঁচাপণ্যের দামও বেড়েছে।
পরিবহন ঠিকাদাররা জানান, স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে একটি কাভার্ডভ্যানের ভাড়া ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। কিন্তু গত ১৪ দিন ধরে এ ভাড়া গুনতে হচ্ছে ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকা। অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে একটি কাভার্ডভ্যানের ভাড়া অন্য সময় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। এখন দিতে হচ্ছে ২৫ হাজার টাকা।
তেজগাঁওয়ের পরিবহন ঠিকাদার আবুল কালাম জানান, বাড়তি ভাড়া দিয়ে গাড়ি পাওয়া যাবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। মালিকদের অনেকে নাশকতার ভয়ে তাদের গাড়ি রাস্তায় নামাচ্ছেন না, বাজারে গাড়ি কম। তাই ভাড়াও বেড়েছে। চট্টগ্রাম কদমতলীর পরিবহন ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন জানান, প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। দেশের কোথাও না কোথাও গাড়ি ভাংচুর হচ্ছে। পুলিশের উপস্থিতিতে গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ জন্য অনেকে গাড়ি ছাড়তে চান না।
তবে ব্যবসায়ীরা জানান, পণ্য পরিবহনের জন্য গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে; কিন্তু পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে গাজীপুর, ময়মনসিংহ কিংবা ঢাকার আশপাশের রুটে ট্রিপ দিতে নারাজ পরিবহন মালিকরা। এর ফলে প্রতিনিয়িত যুদ্ধ করে কারখানা চালাতে হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে পরিবহন মালিকদের বক্তব্য হচ্ছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পাহারা দিলেও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে পণ্য পরিবহনে পাহারার ব্যবস্থা নেই। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে তেমন নাশকতা না হলেও ওইসব এলাকায় ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে ঢাকার বাইরে পণ্য পরিবহনে অনেকে অনীহা প্রকাশ করছে।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা নির্বঘ্নে ব্যবসা করতে চাই। রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকুক। কিন্তু ব্যবসায়ীরা যাতে নির্বিঘ্নে পণ্য পরিবহন করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতা চিরতরে বন্ধ না হলে দেশের অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পণ্য পরিবহনে বাড়তি ভাড়া উদ্যোক্তাদের উৎপাদন খরচের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে উল্লেখ করে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এমনিতে আমরা নানামুখী চাপে আছি। এর সাথে বাড়তি পরিবহন ব্যয় আমাদের চাপ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিস্থিতি এমনভাবে চলতে থাকলে অনেকের পক্ষে পণ্য রপ্তানি সম্ভব হবে না। বাড়তি ভাড়া দিয়ে তাদেরকে আকাশপথে পণ্য পাঠাতে হবে।
অবরোধের প্রভাব রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয়ের ওপরও। পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীতে কাঁচামালের দাম অনেক বেড়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বাঁধাকপি পরিবহন করতে না পারার কারণে কৃষকরা তা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছে এমন ছবিও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সবজি, মাছসহ সকল ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। অবরোধ শুরুর আগে শীতকালীন সবজির দাম বেশ কম থাকলেও এখন তা বেড়েই চলেছে। কাওরান বাজারের বেপারীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, সাভার থেকে এক ট্রাক সবজি পরিবহনে আগে খরচ হতো (শ্রমিকদের মজুরিসহ) ছয় হাজার টাকা। এখন সেখানে লাগছে ১৫ হাজার টাকার বেশি। উত্তরবঙ্গ থেকে পরিবহন ব্যয় তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে বলে তারা জানান।
শুধু সবজিই নয়, রাজধানীর বাজারগুলোতে মাছ-মাংসসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়েছে। হাতিরপুলের মাছ ব্যবসায়ী বারেক মিয়া জানান, মাছের চালান কম আসছে। আগে দুই কেজির একটা রুই মাছ বিক্রি হয়েছে সাড়ে চারশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকায়। এখন তা ছয়শ’ টাকার ওপরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
One thought on “অবরোধে ভেঙে পড়েছে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা”