দুর্ঘটনা, মৃত্যু, নীরব আইন আদালত

একবার গৌতম বুদ্ধের কাছে এক ব্যক্তি এসেছিলেন তার মৃত পুত্রের জীবন ফিরিয়ে দেবার অনুরোধ নিয়ে। গৌতম বুদ্ধ সেই ব্যক্তিকে বলেছিলেন এমন এক ঘর থেকে এক মুঠো ছাই এনে দিতে যে ঘরে কেউ মরেনি। গৌতম বুদ্ধ যদি এই ব্যক্তিকে বলতো যে জীবন ফিরিয়ে দেবার ক্ষমতা তার নেই তাহলেই হতো। এত প্যাচের কি দরকার!

গৌতম সরাসরি বলতে পারতেন যে “জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে?” এই কবি তখন জন্মেনি কবিতা লেখেনি সেজন্য গৌতম সেটা বলেননি।

যে ব্যক্তি পুত্র শোকে কাতর তাকে কস্ট করে পাঠিয়েছেন বাড়ি বাড়ি যেয়ে জিজ্ঞাসা করতে সেই বাড়িতে কেউ মরেছে কিনা। জিনিষটা খুব নির্মম। গৌতম বুদ্ধের ভেতর বাস করতো এক নির্মম নিষ্টুর শান্ত অনুভূতিহীন সহানুভুতিহীন নির্বিকার আত্মা আর সেকারণেই চুপচাপ পাহাড়ের উপর বসে থাকার মত মন মানসিকতা ছিল তার। দুনিয়ার মানুষেরা শত সহস্র ঝামেলার ভেতর জীবন কাটাচ্ছে আর বৌদ্ধ যেয়ে বসে রইল পাহাড়ের উপরে চুপচাপ ধ্যাণে। গৌতমের জন্ম রাজ পরিবারে। রাজা অর্থ  নিষ্টুর দখলদার শোষক যে শুধু নিজের আরাম আয়েসের জন্য সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে তাদেরকে প্রজা বা সেবক হিসাবে ব্যবহার করে। তারপর মগজ ধোলায়ের মাধ্যমে সবাইকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে রাজাকে ইশ্বর পাঠিয়েছেন রাজা হিসাবে প্রজাদের শোষন শাসন তোষণ ও চোষন করার জন্য। সেই পরিবারে জন্মগ্রহণ করার ফলেই গৌতম বুদ্ধ দুনিয়ার ঝামেলা এড়িয়ে পাহাড়ের উপরে বসেছিলেন ধ্যানে।

কারু সন্তান মারা গেলে তাকে সহানুভুতি জানাবার মতো যদি কোন অনুভূতি না থাকে তাহলে নিজের সন্তানের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে অথবা নিজের প্রিয়জনের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে তখন যে অনুভূতি সে অনুভব করবে তখন সে বুঝবে প্রিয়জনের মৃতুতে শূন্যতা কেমন অনুভূত হয় বুকের ভেতর।

স্বাভাবিক মৃত্যু আর দুর্ঘটনার ফলে মৃত্যুর পার্থক্য রয়েছে। স্বাভাবিক মৃত্যু হলে স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেওয়া যায় যে এই মৃত ব্যক্তির আয়ু এই পর্যন্ত ছিল। দুর্ঘটনার ফলে মৃত্যু হলে মনে হয় – দুর্ঘটনার কারনেই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এমন হতে পারে এই ব্যক্তির আয়ু এই পর্যন্ত ছিল এবং তার দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যু হবে এটাও নির্ধারিত ছিল। অথচ দুর্ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া যেতো।
সেদিন একটি মেয়ের মৃত্যু হলো । মেয়েটি অটোতে ছিল আর বাস ড্রাইভার সেই অটোতে ধাক্কা দেয় এবং মেয়েটির মৃত্যু হয়। থানায় মামলা দায়ের করা হয়। বাস ড্রাইভার পলাতক।

বাস ড্রাইভার কেন পালিয়েছে? এই পলায়নের অনেক কারণ হতে পারেঃ
দুর্ঘটনার জন্য সে দায়ী সেজন্য পালিয়েছে।
সে বেপোড়ায়াভাবে বাস চালিয়ে দিয়েছে কিছুই দ্যাখেনি আশেপাশে বা সামনে কে আছে।
বাস ড্রাইভারের লাইসেন্স ছিলনা
বাস ড্রাইভারের ড্রাইভিং এ কোন প্রশিক্ষণ ছিলনা
বাস ড্রাইভারের আরো অনেক ক্রিমিনাল অফেন্স রেকর্ড রয়েছে
বাস ড্রাইভার যে বাসটি দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে বাসটি ছিল শ্যামলী পরিবহণের।
গুগল করলে শ্যামলী পরিবহণ সম্পর্কে নিম্নলিখিত বিজ্ঞাপন জানা যায়ঃ

“শ্যামলী পরিবহন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাস সার্ভিসগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৮৮ সালে সর্বপ্রথম এই বাস এর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে শ্যামলী পরিবহন এর এসি নন এসি উভয় প্রকার বাস রয়েছে। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে এবং প্রায় প্রত্যেকটি জেলা, উপজেলা ও শহর গুলোতে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার আছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের কলকাতা, আগরতলা, শিলিগুড়ি, শিলং ও গৌহাটিতে ও নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করে এটি।”

এই শ্যামলী পরিবহন একজন অদক্ষ ড্রাইভার নিয়োগ করেছে যিনি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে একজন মানুষকে হত্যা করেছে এটা জানা গেলে হয়তো এই পরিবহনের যাত্রীর সংখ্য কমে যাবে ফলে মুনাফা কমে যাবে। কারণ আদালতে যখন এই খুনী ড্রাইভারকে আনা হবে তখন অনেক প্রশ্ন উত্তরে অনেক অজানা তথ্য জানা যাবে যার ফলে হয়তো শ্যামলী পরিবহনের মুনাফা কমে যাবে।
আইন আদালত পুলিশ ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিদেরকে টাকা গুজে দিতেও অনেক টাকার অপচয় হবে সেজন্য সব চাইতে দ্রুত সব সমস্যার সমাধান হলো খুনী বাস ড্রাইভারকে লুকিয়ে ফেলা।

খুনী লুকিয়ে গেলেই সবাই নিশ্চিন্তে আরো একটি হত্যার আয়োজন করতে পারবে।  যার কোল শূন্য হয়েছে সমস্যা তার । যে হত্যা করেছে সে বেঁচে গেলে আরো অনেক কোল শূন্য করতে পারবে। আর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে দেশকে সহায়তা করতে পারবে। শ্যামলি পরিবহনের মত আরো অনেক ব্যবসায়ীদের মুনাফা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারবে। বাংলাদেশ পুলিশ ও আইন আদালত কার ? যে যত টাকা ঢালতে পারবে, তার।  ন্যায় অন্যায়ের কোন ব্যপার নেই। টাকাই সকল ন্যায় ও অন্যায় নির্ধারণ করে। টাকা পেছনে ছুটছে সবাই।

সেদিন এক ক্ষমতাশালী লোকের ছেলে বেপরোয়া গাড়ি ড্রাইভ করে একজন পুলিশকে আঘাত করে। পুলিশের ছেলে থানাতে মামলা করতে যায় কিন্তু থানা সেই মামলা নিতে অস্বীকার করে।  অনেক টাকার পেছনে ছোটা মানুষই সেই টাকা দিয়ে চিকিৎসা করার জন্য সিঙ্গাপুর যায় ফিরে আসে লাশ হয়ে। টাকা আসলে জীবন ফিরিয়ে দিতে পারেনা। যেমন গৌতম বুদ্ধ পারেনা জীবন ফিরিয়ে দিতে। সব ঝামেলা এড়িয়ে পাহাড়ের উপরে ধ্যানে বসতে পারে।

যারা অপরাধী ও অক্ষম তাদের মুখোশও হরেক রকম। কেউ সাধু কেউ শয়তান।

 

One thought on “দুর্ঘটনা, মৃত্যু, নীরব আইন আদালত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *