অস্বাভাবিক মৃত্যুই স্বাভাবিক

 
বাংলাদেশে অস্বাভাবিক মৃত্যুই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের ভেতরে এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মানুষ হত্যা করাটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এইসব হত্যাকান্ডের বিচার হয়না। যেসব ক্ষেত্রে বিচার হয় সেসব ক্ষেত্রে উধোর পিন্ডি বুধোরঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয় । আসল খুনী আরো হত্যাকান্ডে অংশ নেবার জন্য জীবিত থাকে । নিরীহ কেউ বা খুনীর কোন শত্রু বা যারা খুনীকে দিয়ে খুন করিয়েছে তাদের কোন শত্রূ বা রাস্তায় শুয়ে বসে থাকা কোন প্রতিবন্ধি বা পথ চলতি কোন মানুষকে উঠিয়ে এনে খুনী সাজিয়ে আরো একটি হত্যা করা হয়।
 
৪৯ বছরে ভারতের বিএসএফ এর গুলিতে বা নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত বাংলাদেশীর সংখ্যা ১৭৮৫ (দ্যা ডেইলী স্টার পত্রিকার হিসাব অনুযায়ী)। বাংলাদেশের ভেতরে প্রতিদিন কতজন মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে এর কোন হিসাব নেই। বেশীরভাগ হত্যাকান্ডই ঘটছে জমি দখল,ধর্ষ্‌ন, গোপন কোন খবর জেনে যাবার অপরাধে,প্রতিদ্বন্দ্বীকে, হিংসার কারণে, সন্দেহের বশবর্তী হয়ে, যৌতুকের জন্য,পারিবারিক কোন্দল, মাদকদ্রব্য চোরাচলানের সাথে জড়িতদের আভন্তরীন দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক হত্যা, ইত্যাদি।
 
এইসব হত্যাকান্ডের সাথে যদি ভুল করেও বা পরিকল্পিতভাবে কোন নারীকে জড়িত থাকতে দেখা যায় তাহলে সোনায় সোহাগা। বাংলাদেশের নারীপুরুষেরা সারাদিন এই নারীকে নানাভাবে কলঙ্কিত করতে থাকবে। আদালতের রায়ের অনেক আগেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়ে যাবে এই নারীর বিচার, সাজা, এবং খিস্তিখেউর। বাংলাদেশের নারীপুরুষেরা নারীদের দোষারোপ করতে পারলে খুব বিনোদিত হয়।
 
বিনোদনের জন্য তেমন কিছু নেই বাংলাদেশে। খুন, ধর্ষন, দুর্নীতি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, প্রতারণা, মিথ্যাচার, ইত্যাদি নিত্যদিনের কর্মসূচীর ভেতর একজন নারীকে বেইজ্বত, অপমান, সমালোচনা, বিচার, কলঙ্কিত করতে অংশগ্রহণ করতে পারাটা বাংলাদেশী নারীপুরুষের জন্য অনেক আনন্দের।
 
অপমান অপবাদ প্রতিযোগীতায়, নারীর পরেই রয়েছে “ইসলাম ধর্ম” । বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় – যাদের নাম “মুসলমানদের নামের মত” তারাই বেশী ইসলাম ধর্মকে গালিগালাজ করে বিনোদিত হয়।
 
এই সবকিছুর কারণ একটাই – বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ নয়। বাংলাদেশের জনগণ ভুয়া স্বাধীনতার সান্তনা নিয়ে বেশ তৃপ্ত। বাংলাদেশ ভারতের অধীনে পরাধিন। বাংলাদেশের জনগণ সচেতনভাবেই পরাধীনতাকে বরণ করে নিয়েছে । স্বাধীনতা, পতাকা, মুক্তিযুদ্ধের গালভরা গল্প আর স্বাধীনতা জন্য আত্মত্যাগকারী শহীদের সংখ্যা নিয়ে চিল্লাচিল্লিতেই সবাই ব্যস্ত।
 
একটু আগেই বিএসএফ এর গুলিতে যে বাংলাদেশী নিহত হলো তার জন্য বাকী জীবিত বাংলাদশীরা কান্নাকাটি করেনা। ওরা ঘুম থেকে উঠেই ২-৫০০ বছর আগে যে সেলিব্রিটি মরে গেছিল বা জন্ম নিছিল তাদের জন্য কান্নাকাটি শ্রদ্ধাঞ্জলি আর শুভেচ্ছা জানাতে ব্যস্ত থাকে। সাধারণ বাংলাদেশীদের মৃত্যুতে হয়তো তাদের নিকট আত্মিয়েরা কান্না করে যারা তার উপর আর্থিকভাবে বা আবেগের বন্ধনে বাঁধা ছিল।
 
বাংলাদেশে কোর্ট আছে। উকিল আছে। বিচারপতি আছে। পুলিশ র‍্যাব আর্মী সব আছে কিন্তু ওরা কেউ যার যার পেশা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেনা। ওরা সবাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষোভাবে মানুষ হত্যা এবং নানাভাবে মানুষের হয়রানীতে অংশগ্রহন করে।
 
বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ নয়।
বাংলাদেশে আইনশৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীরা সবার আগে আইন ভাঙ্গে
বাংলাদেশের বিচারবিভাগ সব চাইতে বেশী অপরাধ করে।
বাংলাদেশ যেহেতু স্বাধীন দেশ নয় তাই ভারতের দ্বারা মনোনিত সরকার বাংলাদেশে ভারতের অধীনে কাজ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ দুইবার পাচার হয়ে গেছে । কোন তদন্ত হয়নি। বাংলাদেশের সবগুলা ব্যাংকের পূঁজিই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। বাংলাদেশের পাটকল বন্ধ, গার্মেন্টস বন্ধ, চিনিকল বন্ধ। চা শিল্প এখন দুর্বৃত্তদের হাতে।
 
বাংলাদেশের যেসব শ্রমিকেরা বিদেশে কর্মরত তারা দেশে টাকা পাঠায় সেই টাকা মুনাফা হয়ে চলে যায় জাপান, ভারত, চীনের বহুজাতিক শিল্পপতিদের ব্যাঙ্কে । বাংলাদেশের কৃষি মৃত, শিল্প মৃত, জীবিত বেকারেরা নানাভাবে পাঁয়তারা কষে কেউ প্রতারণা করে খায়, কেউ বাটপারী করে খায়, আর কেউ না খেয়ে থাকে। কেউ ইয়াবা টেনে সারারাত জেগে থাকে। ভাতের চাইতে বেশী ইয়াবা, মোবাইল আর মোবাইলের ডাটা বিক্রি হয়।
 
এমন একটি সম্ভাবনাময় দেশে বিএসএফ এসে যদি দুচারজন্ বাংলাদেশীকে পাখীর মত গুলি করে হত্যা করে তাহলে সেটাও কারু কারু ফেসবুকের দেওয়ালে সাজানো দেখতে মন্দ লাগেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *