ফ্রান্সে যাবার আগে ঢাবিতে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। সম্ভবত পহেলা বৈশাঁখের অনুষ্টানে মেয়েদের কাপড় খুলে নিচ্ছিল ছাত্রলীগের ছেলেরা তখন ছাত্র ইউনিয়ণের একটি ছেলে গেছিল উপচার্যের বাসাতে । ঘটনা ঘটতে দেওয়া হয়েছে। উপচার্য এবং পুলিশ – সবাই এড়িয়ে গেছে পুরা ঘটনা। যদি আমার মেয়ের সাথে এমন হতো তাহলে আমি উপাচার্যসহ যারা এমন করেছে তাদের সবাইকে গুলি করে হত্যা করার কথা ভাবতাম। গতকাল অথবা পরশু আমার এক পরিচিত ব্যক্তির বড় ভাইকে আওয়ামীলীগের লোকেরা উঠিয়ে নিয়ে গেছিল – সে বলছিল আমাকে যদি আমি তাকে একটি বন্দুক কিনে দেই। সেই একই ব্যক্তি ফেসবুকে ফ্রান্সের ইতিহাসের সেই শিক্ষককে হত্যা করার নিন্দা জানিয়েছে খুব নিকৃষ্ট ভাষা প্রয়োগ করে।
quote
“ভাইয়া, এটা ভাবাবেগ নয়। একজন শিক্ষককে ক্লাস রুমে ধর্মীয় উন্মাদনায় হত্যা করে ছাত্র, এ ঘৃণ্য কাণ্ডে ইসলামকে কতোটুকু নীচে নামায় তা ভেবে দেখেছো? শিক্ষককে হত্যায় ফ্রান্সের মুসলিম কমিউনিটি কি জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিলো?”
“নবীর উম্মত কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস। বালকের পুটুতে যতো সুখ আমার বিশ্বাস”
“ব্যঙ্গ করা, বা অন্য ধর্মকে নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য মিথ্যে ও অসম্মানজনক কথা বলা তো বজ্জাত মুসলিমদের কাজ”
unquote
যার ফেসবুক থেকে এই কোটেশনগুলো নেওয়া হয়েছে তার মা পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন। সে যদি মায়ের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হতো তাহলে এধরণের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতো।
ইতিহাসের যে শিক্ষক মহানবী (সাঃ)কে অবমাননা করা কার্টুন প্রদর্শন করে ফ্রিডম অফ স্পিচের ক্লাস নিয়েছে তার গলা কেটে তাকে হত্যা করার পরে ফ্রান্স রাস্ট্রিয় মর্যাদাতে তাকে দাফন করেছে এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেছে যে মহানবীকে ব্যঙ্গ করা কার্টুনটি সমগ্র ফ্রান্সের জনসাধারণকে দেখানো অব্যহত থাকবে। এর পরেও বাংলাদেশের কিছু মানুষের শান্তি হয়নি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে ফেসবুকে এদের মূল্যবান বক্তব্য প্রকাশ করছে অবিরত।
বাংলাদেশের যেসব মানুষ ফ্রান্সের এই মৃত শিক্ষকের জন্য কাঁদছে তাদের বোন অথবা প্রেমিকাকে যদি ছাত্রলীগের ছেলেরা গণ ধর্ষণ করে তাহলে ওরা নিশ্চয় ধর্ষিতা বোনকে নিয়ে বদরুদ্দীণ উমরের সাথে আলোচনাতে বসবে এই ধর্ষকদের সাথে নিয়ে কিভাবে শান্তিপূর্ণভাবে একটি সমঝোতাতে পৌছানো যায় যাতে পরবর্তীতে তার মেয়ে জন্ম নিলে তাকে এরা মার্কসবাদী চেতনাতে উদ্বুদ্ধ করে ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে।
ইতিহাসের সেই ক্লাসে থাকা লাগবেনা। বিদেশী হবার কারণে স্বেতাঙ্গ বা শ্বেতাংগীনি না হবার কারণে আমরা প্রতিদিনই সাম্প্রাদায়িকতাঁর মুখোমুখি হই স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বাজার বা কর্মক্ষেত্রে। অনেকের চামড়া গন্ডারের সেজন্য কিছু অনুভূত হয়না । অনেকে সহ্য করতে পারেনা ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে থাকে। শ্বেতাংগ সাহেবদের প্রতি চাটুকারীতা মনোভাব ছিল বলেই তো বাংলাতে সাহেবরা উপনিবেশ করেছিল ২০০ বছর। চাটুকারেরা ছড়িয়ে আছে এখানে ওখানে সবখানে সাড়া বিশ্বে। দেশে দেশ যদি বিশ্বাসঘাতক না থাকতো তাহলে বিদেশীরা এসে লুট করে নিয়ে যেতে পারতোনা।
মহানবীকে ব্যঙ্গ করা কার্টুন কিভাবে ফ্রিডম অফ স্পিচ হলো ?
একজন শিক্ষক তাও আবার ইতিহাসের, সে কিভাবে এই কাজ করতে পারে?
এই কাজ করে সে কি কি অর্জন করেছে?? – নিজের এবং অন্য একটি কিশোরের জীবন ধ্বংস করা সাথে সাড়া বিশ্বকে বিক্ষুব্ধ করে তুলে সে – ১৯০০ সালের সাহেবদের মত ঘৃণা, সাম্প্রদায়িতা ও অবিরত সন্ত্রাসী সৃষ্টির একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে ।
মানুষের আবেগকে খুঁচিয়ে বিক্ষুব্ধ করে ঘৃণা আর সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিয়ে সন্ত্রাসী সৃষ্টি করার জন্য এর চাইতে ভাল শিক্ষক আর হতে পারেনা। এই সন্ত্রাসীকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মাটিতে পুতে ফ্রান্স খুব ভাল কাজ করেছে । এই মাটি থেকে আরো অনেক সন্ত্রাসী শিক্ষক জন্ম নেবে তারা সাড়া বিশ্বের লাখো কোটি শিশুকিশোরকে বিক্ষুব্ধ করে হত্যা করবে ঠিক একইভাবে।
ভারতের অংগরাজ্য বাংলাদেশের দাসেরা সব সময়ই বিভক্ত। এদের সবচাইতে বড় সমস্যা হলো “আইডেন্টিটি সমস্যা” “Identity Crisis”
” ওরা জানেনা ওরা কে বা কাহারা”
ওরা কি স্বাধীন না পরাধীন ? ওরা কি হিন্দু না মুসলিম? ওরা কি মানুষ না অমানুষ?
যদি মানুষ হয় তাহলে চোখের সামনে অন্য একজন মানুষকে খুন হতে দেখে চুপচাপ থাকতে পারেনা।
ওরা যদি স্বাধীন হয় তাহলে “মধ্যরাত্রীর নির্বাচন মেনে নিয়ে স্বনির্বাচিত সরকারকে মাননীয় মাননীয় বলে মুখে ফেনা তুলতে পারেনা।
সাড়া বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের নিপীড়ন পুলিশের নির্যাতন মেনে নিতে পারেনা।
ওরা যদি পশুও হতো তাহলেও অন্তত কিছু নৈতিকতা থাকতো অন্ততঃ পরিবেশ দূষিত করতোনা।
আগে নিজেকে আবিস্কার করতে হবে। তারপর নিজেকে মানুষ করতে হবে। তারপর যখন মানুষের মত আবেগ অনুভূতি ভালবাসা থাকবে তখনই অনুধাবণ করতে পারবে সেই ছাত্রের অনুভূতি যে ছাত্রটি ইতিহাস ক্লাসে ফ্রিডম অফ স্পিচের লেকচারের নামে তার প্রিয় নবীকে অবমাননা করার স্পর্ধা দেখেছে । ব্যঙ্গ বিদ্রুপ নোংরামী শুধু সেই ক্লাসেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সেই দিনই এই ঘটনা প্রথম ঘটেনি । এই ঘটনা ফ্রান্সসহ বিশ্বের অনেক দেশেই প্রতিদিন ঘটছে। ঘৃণা, সাম্প্রদায়িকতাই সকল সন্ত্রাসের মাতা। সন্ত্রাসীরা তারা যারা অন্যের আবেগ অনুভূতিকে আহত করে। যে ছেলেটি এই শিক্ষককে হত্যা করেছে সে ছেলেটি এই শিক্ষকের সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও ঘৃনার নিরীহ শিকার।
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা ।