শুভ্র নীলের – অনুগল্পঃ একটা গল্পের জন্যে।

একটা গল্প লিখতে হবে সায়হামের। ঘন্টাখানেক হল কাগজ কলম নিয়ে বসে আছে। মাঝে মাঝে ঝিমুনি চলে আসছে। সারা দিনের প্রচণ্ড গরমের পর টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মাথার মধ্যে অজস্র গল্পের ভাবনা, কোনটাই সে লিখতে পারছেনা। এনটিভির শওকত ভাই গতকাল ফোন দিয়ে তাগাদা দিয়েছেন, ‘আগে কত সুন্দর গল্পই না লিখতে! লিখে ফেল ভাই একটা গল্প’।

সায়হাম বুঝে এই অস্থির সময়ে শুধু গল্পটাই তার লিখা হয়ে উঠছেনা। ঈদ নাটকে মধ্যবিত্তের গল্পের জয়জয়কার। ক বছর বিরতির পর মানুষ আবার বাংলা নাটক দেখছে। সরয়ার ফারুকী আর অমিতাভ রেজারা অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্পের প্যাকেজ বানাচ্ছেন নতুন আর ভিন্ন নির্মাতাদের নিয়ে। ফল ও দিয়েছে। সায়হাম ভাবে, রোহিঙ্গাদের নিয়ে কিছু লিখবে! সেই জয়নালের কথা যে কিনা বাবা,মা আর স্ত্রীকে হারিয়ে দুই বছরের মেয়েটিকে নিয়ে শাহ পরীর দ্বীপ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নাকি লিখবে সেই চিকিৎসক পরিষদের নেতার গল্প, যে কিনা রোহিঙ্গা পুরুষদের ভেসেকটোমি আর মহিলাদের টিউবিকটোমি সার্জারি করে দিতে বলছে। অথবা লেখিকা অদিতি ফাল্গুনীর সাম্প্রদায়িক ঘৃণাবাদিতা চাষের গল্প।

বৃষ্টি এখন অনেকটা বেড়েছে। সায়হামের বেশ তৃষ্ণা পেয়েছে। দেশের মানুষের গল্পই তাকে বেশি টানে। সে ভাবে পূজার এই সময়ে প্রতিমা ভাংগার রাজনৈতিক দস্যুদের গল্পটাকি সে লিখবে! নাকি মা,মেয়েকে রেপ করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়া পাষণ্ডদের কথা। কিংবা সুদর্শন সেই র‍্যাম্প মডেল যে কিনা র‍্যাম্প ছেড়ে জংগিবাদের নেতা হয়ে উঠলো। সায়হামের কিছুই ভালো লাগে না। ফেসবুকটা না থাকলে সে হয়তো জানতেই পারতোনা এত ঘৃণা আর অন্যায়ের চাষ নিয়ে হাজার বছরের রাত এগিয়ে চলেছে। যেন কবি ঠিকই বলেছিলেন ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবেনাকো তুমি’। সায়হাম ভাবে, ঘৃণার চাষাবাদ অনেক হয়েছে। এসব লিখে ট্যাগ খাওয়া যাবে না। এই অস্থির সময়ে সি আই পি অনন্ত জলিল কিংবা মডেল হ্যাপি ও মানুষকে শান্তির দিকে ডাকা শুরু করেছে। চালের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। মন্ত্রী মশায়দের কারসাজির কথা ভুলেও লেখা চলবে না। তারচেয়ে বরং মধ্যবিত্তের গল্পটাই শুধু লেখা যায়। আরিয়ান সাহেবের ‘বড় ছেলে’ ইউটিউবে শত্তুর লাখ ভিউ ছাড়িয়েছে।

রাত বাড়ছে। বৃষ্টি থেমে গেছে। সায়হাম লিখে চলেছে। একটা গল্প যে তাকে লিখতেই হবে।

অনুগল্পঃ একটা গল্পের জন্যে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *