আরব আমিরাতের সাধারণ ক্ষমা ও করনীয়

সাধারণ ক্ষমার মূল উদ্দেশ্য, যারা অবৈধ ভাবে এখানে অবস্থান করছেন তাদেরকে বিনা জরিমানায় দেশে যাবার সুযোগ দেয়া, কোন রকম ব্যান ছাড়া দেশে গিয়ে আবার সঠিক ভাবে ভিসার জন্য আবেদন করার সুযোগ দেয়া এবং যারা বৈধভাবে এদেশে ঢুকেছিলেন তাদের কাজ খোঁজার জন্য ছয় মাসের ভিসা অনুমোদন করা। যারা অবৈধ ভাবে এসেছেন, যেমন ওমান সীমান্ত দিয়ে তাদের জরিমানা মওকুফ হবে তবে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হবে।

কতজন বাংলাদেশী এখানে অবৈধভাবে বসবাস করছেন? সত্যি কথা হলো আমরা কেউই সঠিক সংখ্যাটি জানিনা। গত কয়েকদিন ধরে আমাদের কনসূলেটে যে জনস্রোত নেমেছে তাতে কি অনুমান করবো আমরা? ৩০ হাজার, ৫০ হাজার, ৭০ হাজার? হতে পারে, হয়তো বা তারও বেশি। যতটুকু জেনেছি এই জনস্রোতের শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি নূতন পাসপোর্টের জন্যে এসেছেন (বিভিন্ন কারণে ), কিছু এসেছেন মেয়াদোত্তীর্ন পাসপোর্ট নবায়ণ করতে এবং খুবই অল্পসংখ্যক এসেছেন আউটপাস নিতে। প্রায় সবারই ইচ্ছা নূতন পাসপোর্ট নিয়ে কাজ খোঁজার ছয়মাসের ভিসার জন্য আবেদন করা। এটা যদি করা যেত তাহলে আমরা সবাই নিশ্চয়ই খুশী হতাম। কিন্তু একটু গুছিয়ে চিন্তা করলেই দেখছি :

১. ঈদের ছুটির জন্য এ মাসের বেশ অনেকদিনই কাজ হবে না। সব মিলিয়ে হাতে সময় আছে মাত্র দুই মাস।

. আমাদের কনসূলেট সারাদিন বিরতিহীন ভাবে কাজ করে ৫০০ থেকে ৬০০ পাসপোর্টের আবেদন পত্র biometric সহ প্রসেস করতে পারছেন। যদি ধরে নিই পাসপোর্টের জন্য ৫০০০০ জন আবেদন করবে, তাহলে কতদিন লাগবে শুধু জমা নেয়া এবং প্রসেসিং শেষ করতে? সাধারণ ভাবে জমা দেয়ার প্রায় দেড় মাস পর নূতন পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যায়। জরুরি ভিত্তিতে করলেও ২০ – ২৫ দিনের আগে হয়তো পাওয়া যাবে না। তাতে একটা বিশাল সংখ্যার আবেদনকারী সাধারণ ক্ষমার সময়সীমার মধ্যে তাদের কাঙ্খিত পাসপোর্ট ও ভিসা না ও পেতে পারেন।

৩. ধরে নিলাম ৫০০০০ আবেদনকারীর সবারই পাসপোর্ট ও ছয় মাসের ভিসা হয়েছে। যেহেতু সাধারণ ভাবে Domestic ও Partner ভিসা ছাড়া অন্য ভিসা আমাদের জন্য বন্ধ, ওনারা সবাই কি চাকরি পাবেন? অনেকেই কি আবারো অবৈধ হয়ে হারিয়ে যাবে?

৪. আগেই বলছি আমরা জানিনা ঠিক কতজন অবৈধ। এ ও জানি প্রায় সবাই ই পাসপোর্টের জন্য চেষ্টা করছেন। যদিও অনেকেরই যথাযথ কাগজপত্র নেই। অনেককেই হয়তো চলে যেতে হবে। কতজনকে যেতে হবে? ২০, ৩০ কি ৪০ হাজার? অক্টোবরের মধ্যে কি এই বিরাট কর্মি বাহিনী যেতে পারবে? পাবে প্লেনের টিকিট? আবারো কি “অবৈধ ” চক্রে ডুব ?

৫. করণীয় কি?

যারা নিশ্চিতভাবে জানেন যে তাদের কাগজপত্র ত্রুটিপূর্ণ, তাদের উচিত পাসপোর্টের জন্য চেষ্টা,অপেক্ষা না করে অতিসত্বর Outpass নিয়ে সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফেরত যাওয়া। তাতে উনারা লাভবানই হবেন :

ক. ব্যান / নিষেধাজ্ঞা হবে না।

খ. জরিমানা মওকুফ করা হবে।

গ. আবারো ফিরে আসার সুযোগ থাকবে।

কিন্তু আবারো অবৈধ হয়ে ধরা পড়লে নিষেধাজ্ঞা জরিমানা ছাড়াও কারাভোগ করতে হতে পারে ।

কনসূলেটে এই জনস্রোতে এটাই প্রতীয়মান হয়েছে যে আমাদের শ্রমিকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অবৈধ এবং এই পরিস্থিতি হয়তো আমাদের ভিসা ক্রাইসিসের, আমাদের অপরাধ প্রবনতার একটি কারণ। একটু তলিয়ে দেখলে দেখছি এদের অনেকেই এসেছিলেন আমাদের দেশীয় দালাল অথবা ভিসা ব্যবসায়ীদের হাত ধরে। ছয় মাসের Job seekers ভিসার মূলা দেখিয়ে এই চক্রের অনেকেই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন এবং আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনছেন।

এবারের সাধারণ ক্ষমার সদব্যবহার না করতে পারলে সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের ভাবমূর্তি এবং ভিসা খোলার সম্ভাবনা। আমাদের হাতে সময় একদমই নেই। এই বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে সবার সহযোগিতা, সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আসুন নেমে পড়ি।

৬ thoughts on “আরব আমিরাতের সাধারণ ক্ষমা ও করনীয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.