বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি? সে আমার নয়

এই  লেখাটি আমার নয়। আমার এক বন্ধুর লেখা। সংগত কারনেই বন্ধুর নাম উল্লেখ করছিনা।

পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের মধ্য কোন্দল দেখা দেয়। মাওলানা ভাসানী ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম নেতা। দুর্নীতির ক্ষেত্রে মুসলিম লীগ বৃটিশকে অনুকরণ করে আর আওয়ামীলীগ মুসলিম লীগকে অনুকরণ করে। যেকোন দল বা গোষ্টি যখন নৈতিকভাবে অধঃপতিত হয়, অপরাধী হয় তখন তারা তাদের নৈতিক দুর্বলতাকে ঢাকার জন্য নানা রকমের প্রপোগান্ডা কর্মসূচী দিয়ে জনগণকে ব্যস্ত রাখে অন্যদিকে যাতে জনগণ তাদের নৈতিক দুর্বলতা ও অপরাধকর্মের দিক থেকে দৃষ্টি ও মনোযোগ দূরে রাখে।

সংখ্যাগরিষ্ট  বাঙ্গালীর উপরে উর্দু ভাষাকে রাস্ট্রভাষা হিসাবে চাপিয়ে দেবার পেছনে কারণ ছিল তিনটি।

এক – সংখ্যাগরিষ্ট বাঙ্গালীর ভাষা হলো চাষার ভাষা আর উর্দু হলো এলিটের ভাষা তাই সাধারন মানুষ যে ভাষাতে কথা বলে এলিটেরা সে ভাষাতে কথা বল্লে এলিট আর সাধারণ মানুষের ভেতর কোন পার্থক্য রইবেনা।  তাই উর্দু লস্কর ভাষাকে এনে বাঙ্গালীদের সাথে তৎকালীন প্রশাসন, পুঁজিপতি, আমলা ইত্যাদিদের  মাঝে  স্বতন্ত্রতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। এই প্রচেষ্টা দেশ ভাগের আগেও ছিল। জমিদারেরা আর ভূমিদাসেরা ভিন্ন ভাষাতে কথা বলবে সেটাই ছিল প্রত্যাশিত। মানুষকে বিভিন্ন শ্রেনীতে বিভক্ত করার জন্যই ভাষা, বর্ণবৈষম্য, জাত পাতের বিভেদ সৃষ্টি করা হতো বা হয়েছে বা হচ্ছে।

দুই – মুসলিম লীগের নেতা, তখনকার পুঁজিপতি শ্রেনী, আমলাদের দুর্নীতি ও অপরাধের দিক থেকে জনগণ যাতে তাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে রেখে ভাষা তর্ক নিয়ে রক্তারক্তি করে

তিন – প্রসাশনিক নিয়ন্ত্রন সংখ্যালঘু উর্দুভাষাভাষীদের নিয়ন্ত্রনে ছিল। বাংলা যদি রাস্ট্রভাষা হয় তাহলে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রনও সংখ্যাগুরু বাঙ্গালীর নিয়ন্ত্রনে চলে যাবার ঝুঁকি ।

পাকিস্তানের কোন প্রদেশেই উর্দু ভাষাভাষি কেউ নেই। উর্দু পাকিস্তানের ভাষা নয়। উর্দু এসেছে ভারত থেকে। উর্দুর জন্ম হয় সৈনিকের তাবুতে। বহিরাগত দশ্যুরা যখন পাকভারত উপমহাদেশ জয় করতে আসে তখন বিভিন্ন দেশ থেকে মোটাতাজা মানুষ ধরে আনে যুদ্ধ করানোর জন্য । তাঁরা যেহেতু বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছে এবং সেই এলাকার ভাষা ছাড়া অন্যভাষা জানেনা তাই তাদের পক্ষে সেনাবাহিনীর কমান্ডারের নির্দেশ বুঝতে অসুবিধা হতো। সেকারণেই সব দেশের ভাষাকে এক করে একটি ভাষা উর্দুর জন্ম হয়। সেকারনেই উর্দু ভাষাতে আরবী শব্দ আছে, পারসী শব্দ আছে, সাংস্কৃত শব্দ আছে, মধ্য এশিয়ার দেশগুলার শব্দ আছে।  বাঙ্গালীর উপর যেমন উর্দু চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করা হয় ঠিক তেমনি পাকিস্তানীদের উপরেও উর্দু চাপিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত থেকে যেসব মুসলমানরা পূর্ব বাংলা বা পাকিস্তানে আসে তাদের ভেতর যারা পশ্চিম বাংলা, আসাম, ত্রিপুরা, বিহারের মুসলমান তারা সব পূর্ব বাংলাতে আসে আর বাকীরা সব যায় পাকিস্তানে। যারা পাকিস্তানে যায় দিল্লী, এলাহাবাদ, ভারতের পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, গুজরাট ইত্যাদি এলাকা থেকে তাদের বেশীরভাগ মানুষই উর্দু ভাষাভাষী।

১৯৪৮ সালের মার্চে পূর্ব বাংলার ছাত্ররা রাস্ট্রভাষা আন্দোলন গড়ে তোলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়। বামপন্থি লেখক বদরুদ্দীন উমরের একটি লেখা থেকে আমরা জানতে পারি যে জামাতে ইসলামের আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, তখনকার ঢাকসুর সভাপতি হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী থাকার কারনে “রাস্ট্রভাষা বাংলা চাই” এই দাবী নিয়ে যে স্বারকলিপি পাঠ করা হয় তা পাঠ করেন অধ্যাপক গোলাম আজম।

এই লেখাটি লেখার ত্রিশ বছর পর বদরুদ্দীন উমর এই লেখার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে “ হায় ! এই ঘটনাটি কেন ভুল হলোনা!!” অথবা জনাব উমর সম্ভবত বলতে চেয়েছিলেন – হায়! হায়! গণজাগরণ মঞ্চ কেন ১৯৪৮ সালে হলোনা।

১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে “আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়”।

এখন অনেকেই দাবী করেন যে আওয়ামীলীগ গঠন করেছিলেন শেখ মুজিব এবং তাজুদ্দীন। দাবী অযৌক্তিক । কারণ আওয়ামীলীগ গঠন করেছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।  ভাসানীর আওয়ামী মুসলিম লীগ ছিল পূর্ব বাংলার প্রথম বিরোধী দল। মুসলিম লীগের দুর্নীতিবাজ নেতাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী মুসলিম লীগ ছিল একটি দল যা নাকি সমগ্র পূর্ব বাংলার মানুষের প্রতিনিধি হিসাবে জনপ্রিয় হয়।
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান যখন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেন তখন শেখ মুজিবের বয়স ছিল আঠাশ বছর। তার অনেক আগেই  ছাত্রদের সাথে মারপিট গুন্ডামী করার কারণে শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হন। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন সন্ত্রাসী ছাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে সন্ত্রাসীর স্থান ছিলনা।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী জন্মগ্রহন করেন মেদিনিপুরের একটি সম্ভ্রান্ত বাঙ্গালী পরিবারে। অক্সফোর্ড থেকে পাশ করা ব্যারিস্টার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন পাকিস্তানের ৫ম প্রধানমন্ত্রী।

কলকাতাতে পড়ালেখা করে সোহরাওয়ার্দী ইংল্যান্ডে যান বারিস্টারি পড়তে ফিরে আসেন ১৯২১ সালে । আইনজীবি হিসাবে তিনি বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেম্বেলীতে মুসলিম লীগের সাথে জড়িত থাকলেও স্বরাজ পার্টিতে যোগ দেন যখন তাকে চিত্ররঞ্জন দাস আমন্ত্রন জানান কলকাতার ডেপুটি মেয়র হবার জন্য নির্বাচনে অংশ নিতে।

তিনি বেঙ্গল সরকারে যোগ দেন ১৯৩৭ সালে। ১৯৪৬ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাতে তার হাত ছিল বলে সমালোচিত হন। ১৪ই আগস্ট ১৯৪৭ যখন নাজিমুদ্দীন সাহেব চীফ মিনিষ্টার হন সোহরাওয়ার্দী তখন মুসলিম লীগের উপর থেকে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফ্যালেন এবং কলকাতাতেই থেকে যান। পাকিস্তানে আসেন ৫ই মার্চ ১৯৪৯।

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পরে নাজিমুদ্দীণ যখন গভর্নর জেনারেল হন ১৯৪৮ সালে  তখন সোহরাওয়ার্দী মুসলীম লীগ থেকে বের হয়ে আসেন। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সাথে তিনি আওয়ামীলীগের একজন সহকারী সংগঠক হিসাবে বিশেষ ভূমিকা পালন করলেও আওয়ামী মূসলিম লীগের সাথে স্পষ্ট দূরত্ব বজায় রাখেন। এর মূল কারণ ছিল শ্রেনীভেদ। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন পূর্ব বাংলার মানুষের প্রতিনিধি। সোহরাওয়ার্দী ছিলেন কতিপয় এলিটের প্রতিনিধি। ধীরে ধীরে সোহরাওয়ার্দী কমিউনিষ্ট ঘেষা হতে থাকেন যদিও বরাবরই তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক রাখেন । কমিউনিষ্ট ঘেষা হবার মূল কারণই ছিল কমিউনিষ্ট আন্দোলনের শক্তিকে প্রত্যক্ষভাবে অবলোকন করা এবং শক্তিশালী পরিকল্পনার মাধ্যমে সমূলে উৎপাটন করা।

আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক হন শেখ মুজিব।
শেখ মুজিব তখন জেলে ছিলেন যখন ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা সংযোজন করে।

১৯৫৩ সালে শেখ মুজিব আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একজন তরুন নেতার জন্য এটা ছিল অত্যন্ত উঁচু পদ।

১৯৫৪ সালের ৮ থেকে ১২ই মার্চ পর্যন্ত যে সাধারণ নির্বাচন হয় তাতে আওয়ামী মুসলিম লীগ , সোহরাওয়ার্দী ও অন্যান্য কিছু দল মিলে ইউনাইটেড ফ্রন্ট গঠন করে। ২২৮টি আসনে অন্যান্য দলগুলি পায় ১৫৭টি আসন।

এক সময় মুসলিম লীগ থেকে বের হয়ে এসে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী আওয়ামী মূসলিম লীগ গঠন করেন আর এই আওয়ামী মূসলিম লীগে সোহরাওয়ার্দী আর মুজিবকে ঢুকতে দিয়ে ইউনাইটেড ফ্রন্ট গঠন করার পরে দলের ভেতর কোন্দল শুরু হয়ে যায়।  চতুর মুজিব সুযোগের সদব্যবহার করে নিজের অবস্থান মজবুত করে ফ্যালে। ১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবরের সন্মেলনে আওয়ামী মূসলীম লীগ থেকে “মুসলিম” শব্দটি বাদ দেওয়া হয়।

এইখানেই সোহরাওয়ার্দী তার আসল রুপ দেখিয়ে দেয়। মার্কিন ঘেষা নীতিতে মার্কিন যক্তরাস্ট্রকে কমিউনিষ্ট বিরোধী তৎপরতাই পূর্ন সহযোগীতা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে আওয়ামীলীগ যোদ দেয় সাউথ ইষ্ট এশিয়া ট্রিটি অর্গানাইজেশন। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান এর বিরোধিতা করেন। ১৯৫৭ সালের কাগমারী সন্মেলনের পরে মাওলানা ভাসানী আওয়ামীলীগ ত্যাগ করেন এবং ন্যাপ গঠন করেন।

১৯৫৮ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর প্রাদেশিক পরিষদে ভারপ্রাপ্ত স্পীকার শাহেদ আলী পাটওয়ারমীর মাথা লক্ষ্য করে একটি পাথরের ভাড়ী পেপার ওয়েট ছুঁড়ে মারেন শেখ মুজিবুর রহমান। সাথে সাথে স্পীকার শাহেদ আলী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। প্রাদেশিক পরিষদে চেয়ার ছুড়াছুড়ি শুরু হয়ে যায়। তিনদিন পরে স্পীকার শাহেদ আলী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছেলেকে প্রহারে অর্ধ্মৃত করে ফেলার অভিযোগে শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হয়। পরে শেখ মুজিব নিজ হাতে ১৯৫৮ সালে স্পীকার শাহেদ আলী পাটওয়ারীকে হত্যা করেন।

স্পীকার শাহেদ আলীর মৃত্যুতে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইস্কান্দার মির্জার অনুরোধে ৭ই অক্টোবর ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক আইন জারী করেন।

৩১শে অক্টোবর ইস্কান্দার মির্জাকে সরিয়ে দিয়ে আইয়ুব ক্ষমতাই আসেন। দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্থ করে বারিস্টার মওদুদ শেখ মুজিবকে আড়াই বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করেন। সেসময়ে শেখ মুজিব রাজনীতি থেকে বিস্মৃত হয়ে পড়েন।

শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে যারা না জেনে কথা বলেন তাদের জন্য একটি ছোট তালিকাঃ

১ – গুন্ডামী এবং সন্ত্রাসী আচরণের জন্য শেখ মুজিবকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হলে শেখ মুজিব আর পড়ালেখা করেন নাই।
২ – আওয়ামী মূসলিম লীগে ঢুকে শেখ মুজিব তার অবস্থান মজবুত করেন এবং দল থেকে ভাসানীকে বিতারিত করে তখনকার জনপ্রিয় ও ক্ষমতাবান এলিটদের নেতৃত্বে যেসব দল ছিল তাদের নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে দুর্নীতি চালিয়ে যান এবং স্পীকার শাহেদ আলীকে হত্যা করেন

৩- বারিস্টার মওদুদ মুজিবের দুর্নীতি প্রমানিত করে তাকে আড়াই বছরের জন্য জেলে পাঠান
৪ – দুর্নীতির দায়ে সাজা ভোগ করে জেল থেকে মুজিব বের হন ১৯৬২ সালে। সেসময়ে যেসব রাজনৈতিক দলগুলো জনপ্রিয় ছিল তাদের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যান। ( দেশে ফিরে এসে শেখ হাসিনা সেটাই করেছিল। জামাতের আমীর অধ্যাপক গোলাম আজমের সাথে বৈঠক করেন তারপর বিএনপিকে কোন ঠাসা করেন তারপর লগী বৈঠা নিয়ে ঝাপিয়ে পরার নির্দেশ দেন তারপর বিডিআর হত্যার মাধ্যমে দেশের ডিফেন্সকে দুর্বল করে ভারতের রাজ্যসরকার হিসাবে একনায়কতন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন)
৫ -১৯৬২ সালের ২৮শে জুন সংবিধানকে গণতান্ত্রিক করার অভিপ্রায়ে বিবৃতি দেন
৬ –মনে রাখতে হবে ১৯৫৭ সালে মাওলানা ভাসানীকে ত্যাগ করে সোহরাওয়ার্দীর সাথে মুজিবের সখ্যতার কারণ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের এলিট এবং জনপ্রিয় নেতাদের সাথে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নজর কাড়া এবং দলে তার অবস্থান পাকা করা ফলে বৈরুতে সোহওয়ার্দীর রহস্যজনক মৃত্যু হলে মুজিব একাই আওয়ামীলীগের নেতা হয়ে যায়।

৭ – ১৯৬৫ সালে পাক ভারত যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানকে অরক্ষিত রাখলে ভারত থেকে আসা বাঙ্গালীরা মর্মাহত হয় আর এই সুযোগের পূর্ন সদব্যবহার করে শেখ মুজিবুর রহমান। আইয়ুবের বুনিয়াদী গণতন্ত্র স্টাইলে শেখ মুজিব এবারে নতুন করে ভারত থেকে আসা বাঙ্গালীদের আস্থাভাজন হবার চাল চালে। অরক্ষিত পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ডিসেম্বরে লাহোর সন্মেলনে কয়েকটি প্রস্তাব দিতে ব্যর্থ হলেও ১৯৬৬ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সাংবাদিকদের ডেকে ছয়দফা প্রস্তাব পেশ করেন।

৮- ছয়দফা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ব শাসনের দাবী। ভারত থেকে আসা বাঙ্গালীরা মুজিবকে বিশ্বাস করা শুরু করে।

পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ব শাসন (পাকিস্তানের ন্যাশনাল এসেম্বেলী ঠিক রেখে)
পুর্ব পাকিস্তানের নিজস্ব মিলিশিয়া
পূর্ব পাকিস্তানের নিজস্ব কারেন্সী
পূর্ব পাকিস্তানের রপ্তানীকারক পন্যের মুনাফা পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যয় হবে
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ডিফেন্স আর বৈদেশিক সম্পর্ক বাদ দিয়ে সব কিছুই পূর্ব পাকিস্তানের নিজস্ব হবে। এই ছয়দফা দাবীর সাথে
“বাংলা ভাষা” আন্দোলনের কোন সম্পর্ক নেই
স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশেরও কোন সম্পর্ক নেই
যারা এই দুইটার সাথে ছয়দফার জগাখিচুড়ি পাকায় তারা হয় ১৯৭১ সালের খুনী লূটেরা যারা পরবর্তীকালে মুজিব কোটে দেশের সম্পদ লুট করে মানুষের রক্ত চুষে সম্পদের পাহাড় বানিয়েছে ফলে নিজ নিজ স্বার্থে এই খিচুড়ি পাকিয়েছে
যাদের কোন স্বার্থ নাই তারাও এই খিচুরি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে সামনে যদি কোন সুযোগ আসে সেই আশায় আশান্বিত হয়ে

বারিস্টার মওদুদে আড়াই বছরের জন্য দুর্নীতিবাজ মুজিবকে জেলে পাঠানের পরে ছয়দফা দাবীই মুজিবকে আবার চাঙ্গা করে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মাঠে।

এখনও আমরা পাকিস্তানেই আছি। স্বাধীন বাংলাদেশের কথা শেখ মুজিবের মত কাপুরুষ ও দুর্বৃত্ত কল্পনাও করতে পারে নাই। তবে ভারতের জন্য শেখ মুজিব ছিল একজন আদর্শ রাস্ট্রদ্রোহী । ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলা হারিয়ে ভারত দিশেহারা হয়ে গেছিল । শেখ মুজিবের সন্ত্রাসী চরিত্র ভারতের বুকে পূর্ব বাংলাকে ফিরে পাবার আশার সঞ্চার করে।  একটি দেশকে বাজার হিসাবে পাওয়া গেলে, একটি দেশের জনগণকে দাস হিসাবে পাওয়া গেলে সেই দেশে সরাসরি উপনিবেশ গড়ার দরকার হয়না।

পাকিস্তানে ছয়দফা জনপ্রিয় হতে থাকে। বিভিন্ন জনসমাবেশ মুজিব ভাষন দিতে থাকে।  তরুনেরা দলে দলে মুজিবের সাথে যোগ দেয়। ১৯৬৬ সালের ৮ই মে নারায়নগঞ্জ থেকে মুজিব গ্রেফতার হয়। সামরিক সরকার  ১৬ই জুন মুজিবের আওয়ামীলীগের মুখপাত্র ইত্তেফাকের প্রকাশণা বন্ধ করে দেয়।

১৯৬৬ সালের ডিসেম্বরে মুজিব আগরতলা যেয়ে ভারতের সাথে একটি দাস চুক্তি স্বাক্ষর করে । এই চুক্তিই পরবর্তীকালে ২৫ বছরের মৈত্রীচুক্তি হিসাবে প্রকাশ পায়।  ১৯৬৭ সালের ৬ই জানুয়ারী মুজিবের বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা দায়ের করা হয় ।

১৯৬৮ সালের ১৮ই জানুয়ারী মুজিবসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দাখিল করা হয়। মুজিবকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নেওয়া হয়। ২১ শে এপ্রিল বিশেষ আদালত গঠন করা হয়। ১৯শে জুন থেকে বিচার শুরু হয়।

এবারে মাওলানা ভাসানী চরম ভুল করেন। মুজিবের মুক্তির জন্য গণ আন্দোলন করেন। মাওলানা ভাসানী বিভ্রান্ত ছিলেন। একজন পাকিস্তান পন্থী নেতা সোহরোয়ার্দীর বন্ধু আইয়ূবের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু কিভাবে ভারতের মত রাশিয়ান বন্ধুর বন্ধু হতে পারে তা মাওলানার মাথায় প্রবেশ করেনি।

মাওলানা ভাসানীর আন্দোলনে মুজিব মুক্তি পায়। সেই থেকেই পূর্ব বাংলার আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা শুরু হয়। আশা করি বাকী ইতিহাস সবার জানা আছে।

আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা।

৪ thoughts on “বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি? সে আমার নয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.